Advertisement
E-Paper

ভাঙা যন্ত্র-ওজনে চুরি, চোখে ঠুলি প্রশাসনের

প্রশাসনিক নজরদারির অভাব। তাই স্বাস্থ্য থেকে বাজার-দোকান, সর্বত্রই পদে পদে হয়রানি, প্রতারণার শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ তুললেন কালনার বাসিন্দারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৬ ০১:২৪
কৃত্রিম রং দেওয়া হয়েছে এই সব আনারসে, এমনই সন্দেহ। কালনায়।

কৃত্রিম রং দেওয়া হয়েছে এই সব আনারসে, এমনই সন্দেহ। কালনায়।

প্রশাসনিক নজরদারির অভাব। তাই স্বাস্থ্য থেকে বাজার-দোকান, সর্বত্রই পদে পদে হয়রানি, প্রতারণার শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ তুললেন কালনার বাসিন্দারা।

তাঁদের দাবি, বাজারে মরচে ধরা বাটখারা ব্যবহার থেকে ওষুধ দিয়ে আনারস পাকানো সবই চলছে খোলাখুলি। অথচ কোনও পদক্ষেপ নেই। নার্সিংহোমের পরিকাঠামোও দেখা হয় না। এমনকী, জেলা জুড়ে হেলমেট নিয়ে যে কড়াকড়ি, নদরদারি চলছে তারও অভাব রয়েছে কালনায় বলে তাঁদের দাবি। প্রশাসনের কর্তারাও মেনে নিয়েছেন গাফিলতি। মহকুমাশাসক সব্যসাচী বেজ বলেন, ‘‘কয়েকটি দফতরের পরিকাঠামোগত কিছু অসুবিধা রয়েছে। তবে প্রশাসনিক নজরদারির বিষয়টি যাতে বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে।’’

কালনায় বেশ কয়েকটা নার্সিংহোম রয়েছে। তার মধ্যে তিনটিতে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনায় রোগীদের পরিষেবা দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নার্সিংহোমগুলির পরিকাঠামো নিয়ে কোনও নজরই নেই স্বাস্থ্য দফতরের। যেমন, সরকারি লাইসেন্স রয়েছে কি না, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কেমন, মেডিক্যাল অফিসার আছেন কি না, শয্যাসংখ্যা অনুযায়ী রোগী ভর্তি করানো হয় কি না— এ সব পরিদর্শনের জন্য দীর্ঘদিন কোনও প্রশাসনিক দলের টিকি মেলে না। সম্প্রতি দুটি নার্সিংহোমে চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগে বিক্ষোভও দেখান রোগীর পরিজনেরা। এ ছাড়া শহর জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা প্যাথলজিক্যাল সেন্টার কিংবা ওষুধের দোকানে যথাযথ মানের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে কি না, তা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। রবিবারই জেনেরিক নাম বললে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগে একটি ওষুধের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শহরের বাসিন্দা সোমা নাথের দাবি, ‘‘কয়েকটি নার্সিংহোমে দিনের পর দিন পুরনো যন্ত্রে চিকিৎসা চলছে। বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। প্রশাসনিক তৎপরতা থাকলে এর অনেকটাই ঠেকানো যেত।’’

আসা যাক কালনার অন্যতম পাইকারি ও খুচরো বাজার, চকবাজারে। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজার ঘুরলেই দেখা যাবে ক্ষতিকারক ওষুধ, ইঞ্জেকশন দিয়ে আনারস, কাঁঠালের মতো ফল পাকানো হচ্ছে। হলুদ রং দেখে ক্রেতারা তা কিনেও নিচ্ছেন। আবার মরচে ধরা বাটখারা, ভাঙা, দড়ি লাগানো দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করছেন ব্যবসায়ীরা। যাতে অনেক সময়েই ওজনের থেকে কম পরিমাণ জিনিস ক্রেতাদের দিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খোলা বাজারে চপ, বিরিয়ানি, চায়ের দোকান চলছে ভতুর্কির গ্যাসেও।

আবার মোটরবাইকে হেলমেট পড়া যেখানে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, জানিয়ে দেওয়া হয়েছে হেলমেট না থাকলে পেট্রোল পাম্পগুলি তেল দেবে না, তারপরেও কালনায় খালি মাথায় চলছে সওয়ারি। দেখা যাচ্ছে, পাম্পে ঢোকার আগে মাথায় হেলমেট পড়ছেন অনেকে। আবার তেল নেওয়া হয়ে গেলেই যে কে সেই। অনেকে আবার হাতে হেলমেট ঝুলিয়ে নিলেও তা মাথায় উঠছে না। এমনকী, একটি মোটরবাইকে তিন জন, চার জন চড়েও যেতে দেখা যাচ্ছে। কালনার বাসিন্দা কমল ঘোষের দাবি, ‘‘এখানে বেনিয়মটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসন কড়া হলে মনে হয় এতটা বেনিয়ম দেখা হত না। অনেক দুর্ঘটনাও এড়ানো যেত।’’

নজরদারিতে গাফিলতির কথা মেনে নিয়েছেন কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার পরিষেবা নিয়ে অনেকেই আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানোর কথা জেলা প্রশাসনকে জানানো হবে।’’ তাঁর দাবি, প্রশাসন কড়া হলে যে বেনিয়ম বন্ধ করা যায় সাম্প্রতিক প্ল্যাস্টিক বন্ধের অভিযানেই তা প্রমাণিত। পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগও জানান, নার্সিংহোম-সহ নানা জায়গায় সাধারণ মানুষের স্বার্থে কড়া নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। মহকুমা প্রশাসনের বৈঠক হলে বিষয়টি জানাব।

নিজস্ব চিত্র।

fraud market
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy