‘টিক টিক টিক, ঘড়ি চলিতে লাগিল...’
সুকুমার রায়ের কবিতার মতো অকালপৌষের বড় ঘড়িটাও সেই ৮০ বছর ধরে টিক টিক করে চলছিল। কিন্তু মাস আটেক ধরে হাতে হাতে মোবাইল থাকার পরেও সময় যেন থমকে গিয়েছে কালনা ২ ব্লকের ওই গ্রামে। বড় ঘড়ির কাঁটা আর ঘুরছে না।
দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এ গ্রামের ছেলে অর্ধেন্দুশেখর ঘোষ ছিলেন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের সুপার। গ্রামে কারও কাছে ঘড়ি ছিল না সেই সময়। তাঁদের ঘড়ি দেখা শেখাতে ইংল্যান্ড থেকে ওয়েস্ট এন্ড ওয়াচ কোম্পানির একটি বিশেষ ঘড়ি নিয়ে আসেন অর্ধেন্দু। ঘড়ির কাঁটায় খোদাই করা ছিল তাঁর নামের আদ্যাক্ষর। নিজের বাড়ির ৩০ ফুট উঁচু কার্নিশে ঘড়িটিকে বসান তিনি। তিনমুখো ঘড়িটির বাইরের দিকে দু’টি মুখ। যাতে রাস্তার দু’ধার থেকে আসা মানুষই তা দেখতে পান। আর একটি অংশ রয়েছে বাড়ির ভিতরে। যেটা দেখতে পারেন পরিবারের লোকজনেরা। বাড়ির ভিতরে দশ ফুট লম্বা কাঠের বাক্সের মধ্যে পেন্ডুলাম-সহ ঘড়িটি রয়েছে। চাবি দিলে একটি ওজন উপর দিকে উঠতে থাকে। দম কমলে ওজন নেমে আসে। তখন আবার চাবি দিলেই চলতে থাকে ঘড়ি। তবে মাস আটেক ধরে চাবি ঘোরালেও ঘড়ি চলছে না।
কালনা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে গ্রামটিতে প্রায় হাজার চারেক মানুষের বাস। গ্রামের ভিতর এঁকে বেঁকে গিয়েছে পিচের রাস্তা। একটি দ্বিতল পুরানো বাড়ির ছাদের কার্নিশে লোহার শক্ত দণ্ডে লাগানো গোলাকার ঘড়িটি দেখতে এক সময় আশপাশের গ্রাম থেকেও লোক আসত। অরিন্দম ঘোষ নামে এক জন বলেন, ‘‘১৯৪০ সালের পরে ঘড়িটি লাগানো হয়। এত দিন নিখুঁত সময় দিত। এখন দক্ষ মিস্ত্রি না হলে ঘড়িটি সারানো যাবে না। প্রশাসন উদ্যোগী হলে গ্রামের ঐতিহ্য বেঁচে যাবে।’’ আর এক বাসিন্দা সুশীল রাউত বলেন, ‘‘বড় ঘড়ি দেখা আমাদের অভ্যাস। ঠিক চোখ চলে যায়। মাঠে যাওয়া, ফেরা সব বড় ঘড়ি দেখেই হয়।’’
যে বাড়িতে ঘড়িটি রয়েছে সেই পরিবারের সদস্য প্রদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘মাঝে এক দিন চাবি দেওয়ার পরে ঘণ্টা দুয়েক চলেছিল ঘড়িটি। আর চলছে না। মিস্ত্রির খোঁজও মিলছে না।’’ তাঁর দাবি, রাজ্যে এমন ঘড়ি আর কোথাও নেই।
বড় ঘড়ির কাছাকাছি অকালপৌষ পঞ্চায়েত। সেখানকার প্রধান শ্যামল গড়াই এলাকারই ছেলে। তিনি বলেন, ‘‘বড় ঘড়ি অকালপৌষকে পরিচিতি দিয়েছে। ঐতিহ্যের কথা ভেবে পঞ্চায়েত বড় ঘড়ি সারাতে চায়। বাড়ির মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)