Advertisement
E-Paper

একটানা বৃষ্টিতে খেতে জমে জল, ক্ষতি সব্জি-তিলে

কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি। কখনও ঝিরঝিরে, কখনও আবার মুষল ধারে। ফলে রাস্তাঘাট জলে থইথই তো বটেই সেতুতে ফাটল ধরা বা বাড়ি ভেঙে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে জেলায়। ক্ষতি থেকে রেহাই পায়নি চাষও। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অতিবৃষ্টিতে জমিতে জল জমে সব্জি ও তিল চাষে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। খেতে ক্ষতিকারক ছত্রাকের আক্রমণে রোগের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৫ ০১:৫৮
কাটোয়া মাঠপাড়া এলাকায় এখনও জমে জল। —নিজস্ব চিত্র।

কাটোয়া মাঠপাড়া এলাকায় এখনও জমে জল। —নিজস্ব চিত্র।

কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি। কখনও ঝিরঝিরে, কখনও আবার মুষল ধারে। ফলে রাস্তাঘাট জলে থইথই তো বটেই সেতুতে ফাটল ধরা বা বাড়ি ভেঙে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে জেলায়। ক্ষতি থেকে রেহাই পায়নি চাষও।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অতিবৃষ্টিতে জমিতে জল জমে সব্জি ও তিল চাষে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। খেতে ক্ষতিকারক ছত্রাকের আক্রমণে রোগের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। আবার আমন ধানের বীজতলা তৈরি ও পাট চাষের ক্ষেত্রে এই বৃষ্টি উপকারী বলেও বিশেষজ্ঞদের দাবি।
এমনিতে সব্জির জন্য রাজ্যের বহু জেলা বর্ধমানের উপর নির্ভরশীল। তার মধ্যে পূর্বস্থলী থেকে প্রতি বছরই প্রচুর সব্জি বাইরে পাঠানো হয়। কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সব্জি চাষ হয় এমন বহু নিচু জমিতে জল জমে গিয়েছে। চাষিদের দাবি, ইতিমধ্যেই পূর্বস্থলী ১ ব্লকের দোগাছিয়া, জাহান্নগর-সহ বেশ কিছু এলাকার সব্জি খেতে গোড়া পচা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ফলে উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন চাষিরা। বিশেষজ্ঞেরাও জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে বহু সব্জি খেতে ছত্রাকজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। মেঘলা কেটে রোদ উঠলে রোগের প্রকোপ আরও ব্যাপক আকার নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তাঁদের দাবি। পূর্বস্থলীর এক সব্জি চাষি বেনু ঘোষের দাবি, ‘‘গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে। ঝিমিয়ে পরা গাছে ভাল সব্জিও হচ্ছে না।’’ আর এক চাষি সুজিত কোলে জানান, লাগাতার বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে অনেকখানি জল জমে গিয়েছে। জল বের করতেও মুশকিল হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চাষিদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞারা। জেলার এক সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ জানান, যে সমস্ত খেতে জল জমে রয়েছে চাষিদের তা আগে বের করে দিতে হবে। তারপর ছত্রাক হানা দেওয়া জমিতে কার্বেনডাজিম এবং ম্যাঙ্কজেবের মিশ্রন ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে অথবা মেটালক্সিল ও ম্যাঙ্কোজেবের মিশ্রন ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করলে ভাল ফল মিলবে।

ইতিমধ্যেই কালনার পাইকারী বাজারগুলিতে সব্জির জোগান কমে গিয়েছে বলে দাবি চাষিদের। স্থানীয় বাসিন্দারাও বলছেন, ভাল মানের সব্জি তো মিলছেই না, দামও বেড়েছে অনেকটা। তাঁরাই জানান, বাজারে পটল, কুমড়ো ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি, উচ্ছে ৬০, ঝিঙে ২৫ টাকা কেজি ও ফুলকপি প্রতি পিস ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছু দিন আগেও যা অর্ধেক দামে মিলছিল। কালনা নিয়ন্ত্রিত বাজার, চকবাজার, ধাত্রীগ্রাম, পারুলিয়া, কালেখাঁতলা-সহ কয়েকটি এলাকার পাইকারি বাজারের আড়তদারেরাও জানান, বৃষ্টির ধাক্কায় সব্জির জোগান কমে গিয়েছে। চড়েছে সব্জির দাম। সব্জির জোগান কম থাকায় অন্য জেলা ও ভিন রাজ্যের বহু ফড়ে সব্জি কিনতে এসে খালি হাতেও ফিরে যান এ দিন। এক সব্জি চাষি রমেশ মণ্ডল জানান, এই সময় বহু সব্জি মাচায় হয়। কিন্তু মাচার সব্জি গাছের গোড়া মাটির নীচে থাকায় বৃষ্টির জলে ডুবে রয়েছে। ফলে গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। তাঁর দাবি, নতুন গাছ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সব্জির টানাটানি চলবে।

তবে সব্জির ক্ষেত্রে টানা বৃষ্টি ক্ষতিকারক হলেও আমন ধানের বীজতলা তৈরি এবং পাট চাষের এ বৃষ্টি উপকারী বলেই দাবি কৃষিকর্তাদের। তাঁরা জানান, এই বৃষ্টি বীজতলাকে সজীব রাখবে। সতেজ থাকবে পাট গাছও। আর এক সহ কৃষি অধিকর্তা নিলয় করের আবার দাবি, ধীরগতিতে বৃষ্টি হলে লাভ হবে জলস্তরে।

অন্য দিকে, কাটোয়া, কালনার বেশ কিছু এলাকা, যেমন আমূল, ঘুসুরিয়া, চাঁদপুর, মল্লিকপুর, ও পূর্বস্থলীর বিভিন্ন এলাকায় বাসিন্দারা এখনও জলে-বন্দি। খড়ি, ব্রাহ্মণী ও কানা নদীতে বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। কাটোয়া ২-এর বিডিও শিবাশিস সরকার বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের মাধ্যমে ত্রাণ পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

Kalna Heavy rain kedarnath bhattacharya Katwa
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy