Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

লেন ভাঙায় বাড়ছে বিপদ

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা থেকে পুরুলিয়াগামী এসবিএসটিসি-র বাসটির ডান দিক ডাম্পারের ধাক্কায় পুরো দুমড়ে গিয়েছে। জখম ১৮ জন যাত্রীকে রাজবাঁধের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৭ ০১:২৭
Share: Save:

বারবারই ঘটছে দুর্ঘটনা। তবু উল্টো লেনে যাওয়ার প্রবণতা কমছে না। সোমবার সকালে পানাগড়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে রেলসেতুর কাছে বাসে পাথরবোঝাই ডাম্পারের ধাক্কায় দু’জনের মৃত্যুর পরে ফের উঠল সেই অভিযোগ।

সোমবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ ওই দুর্ঘটনায় মৃত প্রদীপ অধিকারী (৪৫) ডায়মন্ডহারবারের মাধবপুর ও সৈকত দাস (৩৫) আসানসোলের রেলপাড়ের বাসিন্দা। জখম যাত্রীদের দুর্গাপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁদের মধ্যে চার জনের চোট গুরুতর। পাঁচ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম বর্ধমানের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) শঙ্খ সাঁতরা বলেন, ‘‘প্রশাসনের তরফে জখম যাত্রী ও তাঁদের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। কার গাফিলতিতে দুর্ঘটনা, খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা থেকে পুরুলিয়াগামী এসবিএসটিসি-র বাসটির ডান দিক ডাম্পারের ধাক্কায় পুরো দুমড়ে গিয়েছে। জখম ১৮ জন যাত্রীকে রাজবাঁধের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে এক জনকে পাঠানো হয় ইএসআই হাসপাতালে। দুর্গাপু মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ডাম্পারের চালক ও খালাসি। কাঁকসা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কয়েক জনের প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়।

মাথায় গুরুতর চোট নিয়ে রাজবাঁধের হাসপাতালে আইসিইউ-তে ভর্তি রয়েছেন ইসিএলের বাঁকোলা এরিয়ার ম্যানেজার। দুর্গাপুরের সৌমেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসপাতাল চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর স্ত্রী মধুছন্দাদেবী। জখম বাসযাত্রী আসানসোলের সূর্যদীপ গুপ্ত বলেন, ‘‘রেলসেতুতে ওঠার মুখে বাসটি হঠাৎ বাঁ দিক থেকে ডিভাইডারের ফাঁক গলে ডান দিকের লেনে ঢুকে পড়ে। উল্টো দিকে দ্রুত গতিতে আসছিল একটি ডাম্পার। তার পরে বিকট শব্দ। আর কিছু মনে নেই।’’ তাঁর সঙ্গী রিম্পা মুখোপাধ্যায় আইসিইউ-তে ভর্তি।

কলকাতার যাদবপুর থেকে আসছিলেন দুর্গাপুরের এক বেসরকারি ম্যানেজমেন্ট কলেজের শিক্ষক জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর বাবা বরুণ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, বিকেলে ছেলের অস্ত্রোপচার হয়েছে। মৃত প্রদীপবাবুর সহযাত্রী বরুণ দাস জানান, প্রদীপবাবুর ছেলে দুর্গাপুরের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র। তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য দুর্গাপুরে আসছিলেন। বরুণবাবুর অভিযোগ, ‘‘চালক যদি নিয়ম না ভাঙলে এত বড় ক্ষতি হত না।’’ বাসের চালক বিকাশ দিগর ভর্তি আইসিইউ-তে।

ডাম্পারের চালক, বীরভূমের মহম্মদবাজারের বাসিন্দা গৌতম মির্দা বলেন, ‘‘ডাম্পারের গতি বেশি ছিল না। কিন্তু উল্টো দিক থেকে লেন ভেঙে হঠাৎ বাসটি ঢুকে পড়ে দ্রুত গতিতে ধাক্কা মারে। আমার কিছু করার ছিল না।’’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডাম্পারের ধাক্কায় বাসটি প্রায় ৫০ মিটার পিছিয়ে যায়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক শঙ্খবাবু রাজবাঁধের হাসপাতালে যান। এ দিনই পুলিশের তরফে বাস চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করা হয় রাস্তায়। পুলিশ জানায়, একাধিক সরকারি বাসের চালকের সঙ্গে লাইসেন্স ছিল না। দ্রুত তাঁদের লাইসেন্স দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ দিনের দুর্ঘটনাস্থল থেকে শ’দুয়েক মিটার দূরে মাস কয়েক আগেই বাস ও ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল তিন জনের। সেক্ষেত্রেও রাস্তার নির্মীয়মাণ অংশ এড়াতে ডান দিকের লেনে ঢুকে বাসটি ট্রাকের সামনে পড়ে। এ দিনও সামনে যানবাহনের জট এড়াতে চালকের লেন ভাঙার প্রবণতাই দুর্ঘটনার কারণ বলে যাত্রীদের অভিযোগ। এসবিএসটিসি-র এক আধিকারিক জানান, ট্রাফিক আইন ও নিয়মকানুন নিয়ে সচেতনতা কর্মসূচি নেওয়া হয়। তার পরেও কিছু চালক নিয়ম ভাঙেন। এই দুর্ঘটনার তদন্ত হবে বলে জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE