Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

উদ্যোগী ইসমাইলরা, এ বার প্রথম পুজো গ্রামে

বর্ধমান-আরামবাগ রোডের বারবাকপুল পেরিয়ে বাঁ দিকে মোরাম রাস্তা ধরে কিছুটা এগোতেই দেখা যায়, সমসপুরের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। সোমবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে মৌলানা মুজিবর রহমান হাঁক পাড়েন, ‘‘রাত পোহালেই উদ্বোধন। কাজ বাকি কেন?’’ বিল-বই হাতে মীর লাল্টু বললেন, ‘‘এখনও কয়েক ঘরের চাঁদা বাকি। আর সময় নেই।’’

উৎসব: মণ্ডপের সামনে আলোচনায় আয়োজকেরা। রায়নায়। ছবি: উদিত সিংহ

উৎসব: মণ্ডপের সামনে আলোচনায় আয়োজকেরা। রায়নায়। ছবি: উদিত সিংহ

সৌমেন দত্ত
রায়না শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৪৮
Share: Save:

গ্রামে কোনও পুজো হতো না। দুর্গাপুজো দেখতে হলে যেতে হতো পাঁচ কিলোমিটার দূরে। কয়েকবার গ্রামে পুজো করার কথা ভাবা হলেও অর্থাভাবে পিছিয়ে গিয়েছেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু এ বার কেটেছে সেই বাধা। কারণ, হিন্দুদের সঙ্গে পুজো আয়োজনে হাত মিলিয়েছেন গ্রামের সংখ্যালঘুরাও। তাই এ বার প্রথম দুর্গাপুজো হচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের রায়নার সমসপুরে।

বর্ধমান-আরামবাগ রোডের বারবাকপুল পেরিয়ে বাঁ দিকে মোরাম রাস্তা ধরে কিছুটা এগোতেই দেখা যায়, সমসপুরের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। সোমবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে মৌলানা মুজিবর রহমান হাঁক পাড়েন, ‘‘রাত পোহালেই উদ্বোধন। কাজ বাকি কেন?’’ বিল-বই হাতে মীর লাল্টু বললেন, ‘‘এখনও কয়েক ঘরের চাঁদা বাকি। আর সময় নেই।’’

আয়োজনের মূল দায়িত্বে থাকা মহম্মদ ইসমাইল জানান, পুজোর সময়ে গ্রামে তেমন উৎসবের আবহ থাকত না। মানুষজন বাঁকুড়া মোড়, সগড়াই কিংবা জুবিলা গ্রামে পুজো দিতে যেতেন। সে সব দেখে তাঁদেরও খারাপ লাগত। এ বার গ্রামের কয়েকজন চিন্তাভাবনা শুরু করলেও শুধু হিন্দু বাসিন্দাদের পক্ষে চাঁদা তুলে পুজো করা সম্ভব ছিল না। ইসমাইল বলেন, ‘‘মাসখানেক আগে গ্রামের বারোয়ারিতলায় বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে আমরাও যাই। সিদ্ধান্ত হয়, সবাই পুজোর জন্য সাহায্য করবে।’’

তার পর থেকে প্রায় প্রতি সন্ধ্যায় গ্রামের পশ্চিমপাড়ার মাঠে পুজো-বৈঠক বসেছে। গোলাম মোজতবা মণ্ডল, সাবির হোসেন, রামেশ্বর মালিক, উৎপল মালিকেরা আলোচনা করছেন, পুজোর দিনগুলিতে কী-কী অনুষ্ঠান হবে। দে়ড় লক্ষ টাকা বাজেট। চার দিন নানা অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতা হবে। বিসর্জনের পরে পঙ্‌ক্তিভোজ। প্রবীণ বাসিন্দা নুরুল হুদা মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘পুজো মানে অনুষ্ঠান। আর অনুষ্ঠান মানে মিলন। সে জন্য প্রথম চাঁদা আমি দিয়েছি।’’

গ্রামের বধূ আরতি মালিক, কমলা মালিকদের উচ্ছ্বাস, ‘‘গ্রামে কখনও পুজো দেখিনি। এ বার সবার সাহায্যে দেবী গ্রামে আসবেন। এটা আমাদের বড় পাওনা!’’ আজমিরা বেগম, আমিনা বেগমদের উৎসাহ, ‘‘মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনিরা আসবে। কাজের সূত্রে বাইরে থাকা ছেলেরাও আসবে। পুজো জমে গিয়েছে।’’ আজ, মঙ্গলবার পুজোর উদ্বোধন। সে জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে রায়নার তৃণমূল বিধায়ক নেপাল ঘোড়ুইকে। তিনি বলেন, ‘‘পুজো মানে এক সঙ্গে আনন্দ করা। ওই গ্রামের বাসিন্দারা সে চেষ্টাই করছেন। এ জন্য কোনও প্রশংসা যথেষ্ট নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE