E-Paper

শারদ মরসুমে স্মৃতি আঁকড়েই যাত্রীর আশায় টাঙ্গা মালিকেরা

খুরশিদ জানান, তখন বয়স ১৫। বাবা করিম মিঁয়ার কাছে টাঙ্গা চালানো শিখেছিলেন। রানিতলা, থানা মোড়, বেগুনিয়া অঞ্চলে টাঙ্গা চালাতেন।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২৩
টাঙ্গা গাড়ি। কুলটিতে। ছবি: পাপন চৌধুরী।

টাঙ্গা গাড়ি। কুলটিতে। ছবি: পাপন চৌধুরী।

রঙিন কাপড়ে সাজানো টাঙ্গা। তাতে লালা মখমলের গদি। ঘোড়ার মাথায় বাহারি রঙিন পালক। পরিবার নিয়ে চেপে বসেছেন সওয়ারি। গাড়োয়ান রশিতে টান দিতেই টগবগ করে ছুটল টাঙ্গা। ৬০ বা ৭০-এর দশকে কুলটি, বরাকর, নিয়ামতপুর, ডিসেরগড়, আসানসোল, বার্নপুর-সহ নানা এলাকায় পুজোর সময়ে এই দৃশ্য দেখা যেত।

— হাতে একটি সরু বেতের ছড়ি। পরনে লুঙ্গি। বয়সের ভারে কিছুটা ঝুঁকে পড়া টাঙ্গা গাড়ির গাড়োয়ান, কুলটির কেন্দুয়া বাজারের পাতিয়ানামহল্লার মহম্মদ খুরশিদ শারদ-আলোর রোশনাইয়ের মধ্যে হাতড়ে বেড়াচ্ছিলেন স্মৃতি। সেই সঙ্গে লেগে থাকে কিছুটা যেন অভিমানও। টাঙ্গা গাড়ির মালিক ও চালক খুরশিদের গলায় আক্ষেপ, “এখন আর সেই দিন নেই।”

না থাকা সেই দিনের স্মৃতি ভেসে ওঠে টাঙ্গা গাড়ির মালিক শেখ আনোয়ার, মহম্মদ মুস্তাকিমদের মানসপটেও।

খুরশিদ জানান, তখন বয়স ১৫। বাবা করিম মিঁয়ার কাছে টাঙ্গা চালানো শিখেছিলেন। রানিতলা, থানা মোড়, বেগুনিয়া অঞ্চলে টাঙ্গা চালাতেন। কিন্তু দুর্গা পুজোর সময় কুলটিতে ফি বছর বাড়তি রোজগার হত। তা উপলক্ষে সাজানো হত ঘোড়া, গাড়ি, দুই-ই।

টাঙ্গা চালক ও মালিকেরা জানাচ্ছেন, যাঁর গাড়ির সাজ যত সুন্দর, তাঁর চাহিদা তত বেশি থাকত। এমনকি, পুজোয় সপরিবার ঠাকুর দেখতে যাওয়ার জন্য আগাম বায়নাও দিয়ে রাখতেন কেউ কেউ।

অতীত থেকে যেন এক ঝটকায় বাস্তবে ফিরে এলেন আনোয়ার। জানালেন, মানুষের রুচি বদলে গিয়েছে। বলে চলেন, “সঙ্গে মোটরযানের দাপাদাপি আমাদের বাজার শেষ করে দিয়েছে। আটো, টোটো-তে খরচও কম। ঘোড়াটাই এখন বোঝা।” মুস্তাকিমও জানান, নিজেদেরই পেট চলে না। ঘোড়ার জন্য দানাপানি জোগাড় করতে সমস্যা হয় খুবই। আগে প্রায় শ’দেড়েক টাঙ্গা গাড়ি থাকলেও, এখন সেই সংখ্যাটা মেরেকেটে ১২-১৩টিতে ঠেকেছে।

টাঙ্গা মালিক ও চালকেরা জানান, এখন মাঝেমধ্যে ডেকরেটর সামগ্রী, কয়লা বোঝাই বস্তা পরিবহণ করে দিনের খোরাকি তুলতে হয়। তবু, এই পরিস্থিতির মধ্যেও ওঁরা রয়েছেন। পুজোর সময়ে, যদি দু’-এক জন যাত্রীও ওঠেন তাঁদের টাঙ্গাগাড়িতে, এই আশায়। এ বার যে দেবীর আগমন ও গমন, দুই-ই ঘোটকেই!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy