Advertisement
E-Paper

তিন দিন শ্বশুরবাড়ির উঠোনে বধূ

বিয়ের দু’মাস পরেই শ্বশুরবাড়ির ‘মানসিক নির্যাতনে’ অসুস্থ হয়ে পড়া মেয়েকে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন বাবা-মা। আরও পাঁচ মাস পরে প্রশাসনের সাহায্যে মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছেও দেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন ওই বধূকে ঘরে তোলেননি বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০১
এখানেই কেটেছে তিন দিন। —নিজস্ব চিত্র।

এখানেই কেটেছে তিন দিন। —নিজস্ব চিত্র।

বিয়ের দু’মাস পরেই শ্বশুরবাড়ির ‘মানসিক নির্যাতনে’ অসুস্থ হয়ে পড়া মেয়েকে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন বাবা-মা। আরও পাঁচ মাস পরে প্রশাসনের সাহায্যে মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছেও দেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন ওই বধূকে ঘরে তোলেননি বলে অভিযোগ। এরপরে টানা তিন দিন বাড়ির সামনের চিলতে উঠোনে পড়েছিলেন ওই বধূ। সোমবার সন্ধ্যায় অভিযোগ পেয়ে তাঁকে ফের শ্বশুরবাড়িতে ঢুকিয়ে দেয় পুলিশ।

বর্ধমান শহরের কালনা গেট এলাকার বাসিন্দা বছর আঠাশের ওই বধূর বাবা-মায়ের অভিযোগ, ‘‘পড়শিদের মদতেই মেয়েকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না শ্বশুর-শাশুড়ি। ঢুকতে বাধাও দিচ্ছিলেন। তাঁদের নামে বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।’’ যদিও বিষয়টি নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি ৪ নম্বর ইছলাবাদ এলাকার বাসিন্দা ওই যুবতীর শ্বশুরবাড়ির কেউই। অভিযুক্ত পড়শিদের মধ্যে কয়েকজন শুধু দাবি করেন, ‘‘ওই বধূর চারিত্রিক ত্রুটি রয়েছে। ওর সঙ্গে মিশলে অন্যরাও খারাপ হয়ে যাবে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেখে এ বছরেরই ২৯ জানুয়ারি ইছলাবাদের অভিজিৎ সরকারের সঙ্গে বিয়ে হয় ওই যুবতীর। অভিযোগ, ধুমধাম করে বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই ওই বধূর নামে অপবাদ দেওয়া শুরু হয়। বাড়ি ছে়ড়ে যাওয়ার কথাও বলা হয়। এরপরে ২৮ মার্চ ওই বধূর বিয়ের দিন বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল অভিযোগ তুলে নির্যাতন শুরু হয়। বধূটি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতেই ইছলাবাদের বাড়ি থেকে খাঁ পুকুরে নিজেদের বাড়িতে তাঁকে নিয়ে আসেন বাবা-মা। অভিযোগ তারপরে প্রায় পাঁচ মাস সেখানেই রয়েছেন ওই বধূ। কিন্তু স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির কেউই কোনও খোঁজখবর করেননি। এমনকী, শ্বশুরবাড়িতে ঢুকতে গেলে তাঁকে বাধা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। এরপরে প্রশাসনের নানা জায়গায় অভিযোগ করেন ওই বধূর বাবা-মা। এমনকী তাঁরা লোক আদালতেরও দ্বারস্থ হন তাঁরা। তাঁদের দাবি, সব জায়গাতেই শ্বশুরবাড়ির লোকেদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বধূকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু দিনের পর দিন শ্বশুরবাড়ির লোকেদের গরজ নেই দেখে বর্ধমান থানার দ্বারস্থ হন তাঁরা।

শনিবার পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে শ্বশুরবাড়িতে যান ওই যুবতী। সঙ্গে ছিলেন বাবা-মা। ওই প্রৌঢ় দম্পতির অভিযোগ, ‘‘মেয়ের শ্বশুর-শাশুড়ি বাড়ির দরজা খোলেননি। পড়শিদের কেউ কেউ মেয়ের নামে অপবাদ দিচ্ছিলেন। মেয়েকে ঢুকতে বাধাও দিচ্ছিলেন। তখন আমার মেয়ে শ্বশুরবাড়ির উঠোনের গাছ তলায় থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।’’ তিন দিন ধরে সেখানেই ছিলেন তিনি। ওই বধূর দাবি, ‘‘বাইরের গেট বন্ধ থাকায় বাবা-মা খাবার ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন। শৌচকর্ম সারার জন্যও আঁধার নামার অপেক্ষা করেছি।’’

কিন্তু এত নির্যাতনের পরেও শ্বশুরবাড়িতেই থাকবেন? ওই বধূর দাবি, ‘‘বাবা-মায়ের কাছে থাকতেই পারতাম। কিন্তু আমি এক জন শিক্ষিত মেয়ে হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করব না? নিজে থেকে তো এ বাড়িতে আসিনি। রীতিমতো আইন মেনে বিয়ে করে নিয়ে আসা হয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘আমি বারবার বলেছি, স্বামীর সঙ্গে থাকতে চাই। কিন্তু মিথ্যে অপবাদ দেওয়া হয়েছে। তার প্রতিবাদ করতেই গাছতলায় আশ্রয় নিয়েছি।’’

ওই বধূর শ্বাশুড়ি মায়া সরকার যদিও ‘‘আমার স্বামী অসুস্থ। আমি কোনও কথা বলতে পারব না।’’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। আর পড়শিদের দাবি, ‘‘ও যা করছে, তা দেখে পাড়ার বউরা শিখবে। এই রোগ তো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে!’’ শনিবার থেকে বাড়িতে আসেননি সুরঞ্জিতার স্বামী অভিজিৎবাবু। তাঁর ফোনও ‘নট রিচেবল’ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি।

তবে সন্ধ্যায় বাড়িতে ঢোকার পরেই ছবি কিছুটা বদলেছে বলে জানান ওই বধূ। তিনি বলেন, ‘‘বাবা এসেছিলেন (শ্বশুর)। কী খাব জিজ্ঞেস করার পরে আদর করেছেন। দেখা যাক সব ঠিক হয় কি না!’’

Housewife Outside of home
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy