বিস্ফোরণের পাঁচ দিন পরে ধরা পড়েই তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করলেন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা বাবু মণ্ডল। রবিবার আইনজীবীর মাধ্যেমে শিলিগুড়ি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করার পরে ওই নেতার দাবি, তিনি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার। তবে বাবুর মুখ, হাত-বুকের পোড়া অংশ দেখে স্পষ্ট যে ওই দিন কালনায় ঘটনাস্থলেই ছিলেন তিনি।
এ দিন আইনজীবী সন্দীপ মণ্ডল তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যান। সেখানে আত্মসর্মপণের পরে তাঁকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, বাবুকে আটক করে নজরে রাখা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেই তাঁকে গ্রেফতার করা হবে। কালনা থেকে পুলিশের একটি দলও বাবুকে নিয়ে আসার জন্য রওনা দিয়েছে বলে জানান এসডিপিও প্রিয়ব্রত রায়।
২২ ফেব্রুয়ারি কালনার হরিহরপাড়ায় প্রাথমিক স্কুলের সামনে একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। জখম হন তিন জন। পরে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বোমা বাঁধা চলছিল ওই বাড়ির মালিক তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা বাবু মণ্ডলের তত্ত্বাবধানে। গোপেশ্বর কীর্তনিয়া নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা পুলিশকে জানান, ঘটনার পরে হাতে গামছা বেঁধে একটি লোককে পালিয়ে যেতে দেখেন তিনি। পরে জানা যায় ওই ব্যক্তিই বাবু। ঘটনার পরে সিআইডি-র বোমা নিস্ক্রীয়কারী দল ঘটনাস্থলে যায়। বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করে তারা। ধরা হয় বাবু ঘনিষ্ঠ কালনার এক নার্সিংহোমের মালিক-সহ তিন জনকে। তবে বোমা গুরুতর জখম ওই তিন জন কথা বলার মতো অবস্থায় না থাকায় অনেক প্রশ্নেরই সুরাহা করতে পারেনি পুলিশ। এ দিন অবশ্য বাবু দাবি করেন, বাড়ির সামনে বোমা ফাটানোয় তিনি জখম হন। তাঁকে ফাঁসানো হবে ভেবে বাড়ি ছেড়েও পালান।
১৯৯৪ সালের ২৭ মার্চ নকশাল নেতা আব্দুল হালিম শেখ খুনের পরে নকশাল নেতা হিসেবে পরিচিত বাবুকে বহিষ্কার করা হয়। এর পরে কখনও আত্মগোপন, কখনো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে তাঁকে দেখা যায়। বছর আড়াই আগে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। নির্দিষ্ট কিছু নেতার ডেরাতে তাঁর যাতায়াতও ছিল। বাবুর বিরুদ্ধে বোমা বাঁধারও অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার পরে কালনার তৃণমূল নেতৃত্ব দলের সঙ্গে বাবুর যোগের কথা অস্বীকার করলে তিনি উত্তরবঙ্গের একাধিক তৃণমূল নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন বলে জানা গিয়েছে। তবে সাহায্য মেলেনি। বাবুর শিলিগুড়ির আইনজীবী সন্দীপবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দের কারণেই আমার মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছে। তাঁর বাড়ির কাছে বোমা ফাটিয়ে তাঁকেই অভিযুক্ত করা হয়েছে। আদালতে সবই প্রমাণ হবে।’’
বিরোধীরাও এর মধ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই দেখছেন। সিপিএমের কালনা জোনাল কমিটির সম্পাদক সুকুল শিকদার বলেন, ‘‘বাবুকে তৃণমূলের নানা অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে। এখন সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত করতে ওকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে দলেই ফিরিয়ে নেওয়া হবে।’’ বিজেপির বর্ধমান পূর্ব এলাকার সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষও বোমা বাঁধার কারণ প্রকাশ্যে আনার দাবি করেছেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের অবশ্য দাবি, ‘‘ওর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। আইন আইনের পথে চলবে।’’