রেশন দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজ্যে। রেশনের চাল, আটা বণ্টন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। রেশন থেকে বিনামূল্যে যে চাল-আটা দেয় সরকার, তার পুরোটাই উপভোক্তার উনুন পর্যন্ত পৌঁছয় কি না, সে প্রশ্ন অনেক দিন ধরেই উঠেছে পূর্ব বর্ধমানেও। বিনামূল্যে পাওয়া চালের মান নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে উপভোক্তাদের একাংশের, তেমনই আবার ওই চাল রেশন ডিলারের কাছেই কম টাকায় কিছু উপভোক্তা বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কয়েক বছর আগে বর্ধমান শহরের গোদায় ‘ফড়েকে’ চাল চাল বিক্রি করার অভিযোগে এক রেশন ডিলারকে হাতেনাতে ধরেন এলাকাবাসী। তার পরে একই রকম ঘটনা ঘটে মেমারিতেও। খাদ্য দফতর সংশ্লিষ্ট রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে মেমারি থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। ভাতারেও গ্রামবাসী রেশন ডিলার-সহ দু’জনকে আটক করে কয়েক কুইন্টাল চাল উদ্ধার করেন বলে অভিযোগ। প্রতিটি ঘটনাতেই রেশন ডিলারেরা দাবি করেছিলেন, অনেক উপভোক্তা মান খারাপ বলে চাল নিতে চান না। আবার যে চাল দেওয়া হয় তা অনেক পরিবারের কাছেই পরিমাণে বেশি। তাঁরা ডিলারদের কাছে চাল বিক্রি করে দেন। অভিযোগ, সেই চাল রেশন ডিলারদের একাংশ খোলা বাজারে বিক্রি করেন।
একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে আটা নিয়েও। প্যাকেটের আটা ফড়েদের কাছে সামান্য বেশি দামে বিক্রি করেন কিছু উপভোক্তা। ফড়েরা তা নিয়ে হাজির হন আটাকলের কাছে। মোড়ক বদলে ফের কোনও ডিলারের ঘরে পৌঁছে যায় ওই আটা— এ ভাবেই চক্র চলে বলে অভিযোগ। এমন অভিযোগও উঠেছে, যে আটার প্যাকেট দেওয়া হয় তাতে ১ কেজি থাকে না, কম থাকে। জানা যায়, ‘অন্ত্যোদয়’ শ্রেণিভুক্ত পরিবার প্রতি মাসে ২১ কেজি চাল ও ১৪ প্যাকেট আটা পায়। অগ্রাধিকার, বিশেষ অগ্রাধিকার শ্রেণি ৩ কেজি চাল ও ২ প্যাকেট করে আটা পায়। আরকেএসওয়াই ১ উপভোক্তারা কার্ড পিছু ৫ কেজি চাল ও আরকেএসওয়াই ২ উপভোক্তারা কার্ড পিছু দু’কেজি চাল পেয়ে থাকেন।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল এমআর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর পূর্ব বর্ধমানের সম্পাদক পরেশনাথ হাজরা বলেন, ‘‘রেশন ডিলারেরা সামাজিক ভাবে দায়বদ্ধ। তাঁরা কেন উপভোক্তাদের সামগ্রী কিনবেন? এই চক্র বন্ধ হওয়া দরকার। কোনও ডিলার এমন চক্রে যুক্ত থাকলে চূড়ান্ত শাস্তি হওয়া উচিত।’’ রেশন ডিলারদের একাংশের দাবি, বিনামূল্যের চাল কেনা অনেকে ২০-২২ টাকা দরে বিক্রি করেন। তারই একটি অংশ ২৪-২৫ টাকা দরে স্থানীয় বাজারে চলে যায়। বাকি অংশ ফড়েরা পৌঁছে দেয় চালকলে। এক চালকল মালিকের দাবি, ‘‘রেশনের মাধ্যমে সরকার বিনামূল্যে চাল দিতে শুরু করার পর থেকে খোলা বাজারে চালকলের উৎপাদিত চাল বিক্রি নেই বললেই চলে। সে জন্যই রেশন ডিলারদের কাছ থেকে কেনা চাল ঝাড়াই-বাছাই করে ঝাড়খণ্ড থেকে চোরাপথে বাংলাদেশে পৌঁছে যায়। আবার অনেক সময় সরকারের গুদামেও পৌঁছে দেওয়া হয়।’’
যদিও বিষয়টি তাঁদের জানা নেই বলে দাবি করেছেন চালকল মালিক সংগঠনের কর্তারা। পুলিশের দাবি, অভিযোগ পেলেই চাল বোঝাই গাড়ি আটকানো হয়। কিন্তু ‘চক্র’ ধরতে খাদ্য দফতরের তরফে কেন কড়া পদক্ষেপ হয় না, সে প্রশ্ন উঠেছে। জেলা খাদ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, ‘‘রেশন ডিলার কোনও দুর্নীতিতে জড়িয়ে থাকলে আমরা ব্যবস্থা নিই। কিন্তু উপভোক্তারা ভর্তুকির জিনিস নিয়ে কী করবেন, সেটা দেখা আমাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে না।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)