E-Paper

‘এইটুকুতেই মনে হয় না থামবে ভারত’

বর্ধমান শহরের কালনা গেটের কাছে সুকান্ত পল্লির বাসিন্দা অরূপবাবু সুবেদার মেজর হয়ে ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি অবসর নিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৫ ০৮:৫৮
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কার্গিল যুদ্ধের তিন মাস পরে বাড়ির খবর পেয়েছিলেন। ফিরতে পেরেছিলেন ১১ মাস পরে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে যুদ্ধের সেই স্মৃতি বড় টাটকা হয়ে উঠেছে বর্ধমানের অরূপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর স্ত্রী সাধনা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘তখন এত ঘরে ঘরে মোবাইল ছিল না। যুদ্ধের খবর পেলেও স্বামীর খবর পাচ্ছিলাম না। দু’বছরের সন্তানকে নিয়ে সেনাকর্মীদের মৃত্যুর ছবি দেখলেই আঁতকে উঠতাম। শুধু দিন গুনেছি, ‘আমি ভাল আছি’ লেখা চিঠিটার জন্য।’’

বর্ধমান শহরের কালনা গেটের কাছে সুকান্ত পল্লির বাসিন্দা অরূপবাবু সুবেদার মেজর হয়ে ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি অবসর নিয়েছেন। বর্তমানে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার নিরাপত্তা আধিকারিকের কাজ করেন। বিবেকানন্দ কলেজ রোডের সেই অফিসে বসে তিনি বলেন, “সেই সময় বাড়ি থেকে একটা চিঠি পাওয়া মানে চাঁদ পাওয়া। চিঠি এলে বর্ডার সিনেমার গানের মতো আমরাও লাফিয়ে উঠতাম।” কার্গিল-যুদ্ধের পরেও প্রায় সাত মাস ধরে জঙ্গিদের খুঁজে বার করতে পাহাড়ে ছিলেন। তিনি ও তাঁর ‘রাজপুত রেজিমেন্ট’ বেশ কয়েক জন জঙ্গিকে ঘিরে ধরে মেরেছেনও। তাঁর দাবি, পাহাড়ের চূড়ায়, বরফের রাস্তায় কী ভাবে হাঁটতে হয়, হঠাৎ করে পাহাড়ে উঠতে হলে কী করতে হয়, তার প্রশিক্ষণ হয়েছিল পহেলগামের বৈসনরে। কার্গিল যুদ্ধের প্রথম পর্যায়েই রাজস্থানের মরু প্রান্তের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব থেকে তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

তিনি বলেন, “কার্গিল বাজারের বাঁ দিকে লম্বা পাহাড়ের মাথায় পর পর বাঙ্কারের দায়িত্বে ছিলাম। মাথার উপর দিয়ে যুদ্ধ-বিমান যাচ্ছে, গোলা বর্ষণ হচ্ছে, কিন্তু আমাদের চোখ থাকত সামনের কাশ্মীর অধিগৃহীত পাকিস্তানের সীমান্তে। কার্গিলের ওই পাহাড় থেকে কোথাও পাক-সীমানার দূরত্ব ৩০ মিটার, কোথাও সাতশো মিটার। চোখ সরানোর উপায় ছিল না।” ঘন জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ে দুপুর ২টোর পরেই আঁধার নামত। পাক সীমান্তে কোনও সন্দেহভাজনকে দেখলেই গুলি চালাতে হত তাঁদের। যুদ্ধ থেমে যাওয়ার পরেও উরি, বারামুল্লা, পুঞ্চ, রাজৌরির মতো সীমান্তে থেকেছেন তিনি। জঙ্গি দমন করতে গিয়ে তাঁর কয়েক জন সঙ্গী প্রাণও হারান। অপারেশন সিঁদুরের পরে অরূপ বলেন, “একেই বলে মুখে ঝামা ঘঁষে দেওয়া। ঘরে ঢুকে শত্রুকে শেষ করা। তবে আমার ধারণা, এটুকুতেই ভারত থামবে না।’’

অরূপের দাবি, ‘‘কার্গিল ছাড়ার সময় পাক-সেনাদের বলে এসেছিলাম, ‘ভাল থাকো, আর আমাদেরও ভাল থাকতে দাও’। কিন্তু স্বভাব...। সন্ত্রাসবাদের বীজ উপড়ে ফেলার সময় হয়ে গিয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy