Advertisement
E-Paper

বাংলায় পড়ানো বন্ধ, সরব শহর

এই সিদ্ধান্তকে কার্যত বাংলা ভাষার উপরে আক্রমণ বলেই মনে করেছেন তাঁরা। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি এবং প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
ইস্টার্ন রেলওয়ে বয়েজ় হাইস্কুল। নিজস্ব চিত্র

ইস্টার্ন রেলওয়ে বয়েজ় হাইস্কুল। নিজস্ব চিত্র

আজ, ২১শে ফেব্রুয়ারি। মাতৃভাষা দিবস। তার আগের দিন বৃহস্পতিবার রেলের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে পাকাপাকি ভাবে শতাধিক বছরের পুরনো আসানসোলের ইস্টার্ন রেলওয়ে বয়েজ় হাইস্কুলে বাংলা মাধ্যমে পড়ানো বন্ধ করা হচ্ছে।
এই ঘোষণাকে মোটেও ভাল ভাবে নেননি স্কুলের প্রাক্তনী থেকে শিক্ষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। এই সিদ্ধান্তকে কার্যত বাংলা ভাষার উপরে আক্রমণ বলেই মনে করেছেন তাঁরা। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি এবং প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।

তবে এই স্কুলে বাংলা মাধ্যমে পঠনপাঠন বন্ধের সিদ্ধান্তকে ঘিরে বিতর্ক এই প্রথম নয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বার এই স্কুল থেকে বাংলা মাধ্যমের পঠনপাঠন বন্ধের কথা বলেছিল রেল। কিন্তু সে বার বিক্ষোভের মুখে পড়ে সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ বার আর কিছুই কাজে লাগেনি। এই শিক্ষাবর্ষে সিবিএসই-তে পড়ুয়া ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। আর এ দিনই এই স্কুলে বাংলায় পড়াশোনা বন্ধের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রেলের আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘বাংলা মাধ্যমে পর্যাপ্ত সংখ্যায় পড়ুয়া মিলছে না। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই স্কুলে বাংলা মাধ্যমে পড়ানো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’

রেলের এই সিদ্ধান্তের পরেই ফের সরব হয়েছেন প্রাক্তনীরা। তাঁদের মতে, পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত একটি স্কুল থেকে বাংলা তুলে দেওয়ার অর্থ হল বাংলা ভাষার উপরে আক্রমণ। তা ছাড়া, এই স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন বিমল কর, নারায়ণ সান্যালের মতো বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্টজনেরা। এ ছাড়া, স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষকদের তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট লোক-সংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য, শান্তিনিকেতন কলাভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ রাধারমণ বাগচীর মতো ব্যক্তিত্ব। স্কুলের প্রাক্তনী শিক্ষাবিদ নবারুণ ঘোষ বলেন, ‘‘বহু বাঙালি কৃতী এই স্কুল থেকে পাশ করেছেন। আগামী দিনে সে সব বলার মতো কিছুই থাকল না!’’ সাহিত্যিক তথা প্রাক্তনী সুন্দর মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘মাতৃভাষা দিবসের প্রাক্কালে এই খবর শুনে আমি স্তম্ভিত।’’

প্রাক্তনী নন, অথচ শহরের একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই স্কুলকে নিয়ে যাঁরা এখনও গর্ব করেন তাঁদের মধ্যে শিক্ষাবিদ তথা আসানসোল বাংলা আকাদেমির সভাপতি রামদুলাল বসু। তাঁর মন্তব্য, ‘‘বাংলাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে শহরে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে যেখানে বাংলায় লেখা বাধ্য করা হচ্ছে, সেই সময় প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলা তুলে দেওয়া মানে বাংলার উপরে আক্রমণ। আমাদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে। আগামী দিনে বাংলা ভাষার উপরে এমন বঞ্চনা ঠেকানোই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।’’

রেল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, রেলকর্মীদের সন্তান ছাড়া, এখন আর বহিরাগতদের এই স্কুলে ভর্তি করা হয় না। যেহেতু রেলকর্মীদের বদলির চাকরি, তাই সন্তানদের ভিন্‌ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহজে ভর্তি করাতে তাঁরা কেন্দ্রীয় বোর্ডের অধীনে পড়াতে চাইছেন। ফলে, বাংলা ও হিন্দি মাধ্যমে পর্যাপ্ত সংখ্যায় পড়ুয়া মিলছে না। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Burdwan Indian Railways Education International Mother Language Day Asansol
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy