Advertisement
E-Paper

পরিযায়ীরা ফিরবে কবে, প্রশ্ন

শীত পড়লেই তিন মাসের জন্য ভিড় জমত আসানসোলের বিভিন্ন জলাশয়গুলিতে। ভিন্-দেশি পাখিদের ওড়াউড়ি দেখে আট থেকে আশি সকলেই মজতেন। শোনা যেত ক্যামেরার ক্লিকের খুচখাচ শব্দ। কিন্তু সে দিন অতীত।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
নভেম্বরের শেষেও মন্দিরা ড্যামে দেখা নেই পরিযায়ীর। নিজস্ব চিত্র।

নভেম্বরের শেষেও মন্দিরা ড্যামে দেখা নেই পরিযায়ীর। নিজস্ব চিত্র।

শীত পড়লেই তিন মাসের জন্য ভিড় জমত আসানসোলের বিভিন্ন জলাশয়গুলিতে। ভিন্-দেশি পাখিদের ওড়াউড়ি দেখে আট থেকে আশি সকলেই মজতেন। শোনা যেত ক্যামেরার ক্লিকের খুচখাচ শব্দ। কিন্তু সে দিন অতীত। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দূষণ আর চোরাশিকারিদের উৎপাত। আর সেই সঙ্গে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনাও কমে গিয়েছে বলে জানান শহরের পক্ষীপ্রেমীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, নভেম্বরের গোড়া থেকেই বারাবনির মন্দিরা, রূপনারায়ণপুরের কেবল্‌স ড্যাম, হিরাপুরের দামোদর লাগোয়া কালাঝরিয়া, অজয়ের পাড়ে চিত্তরঞ্জনের চেকড্যাম, বরাকর নদ লাগোয়া সিদাবাড়িতে ভিড় জমাত কয়েক হাজার পরিযায়ী পাখি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই তাদের আর দেখা নেই বলে জানান বাসিন্দাদের একাংশ।

কী কী পাখির দেখা মিলত? আসানসোলের পক্ষী বিশারদ তপন মুখোপাধ্যায় জানান, কালাঝরিয়া, মন্দিরা ড্যামে দেখা মিলত দক্ষিণ ইউরোপ, মধ্য এশিয়ার পাখি রেড ক্রেসটেড পচার্ড, নর্দান পিনপিল শোভেলার বা পান্ডুবির মতো পরিযায়ী পাখিদের। কিন্তু এখন মন্দিরাতে তারা আর আসে না। তবে কালাঝরিয়ায় গত বছর গুটি কয়েক পরিযায়ী পাখির দেখা মিলেছে। চিত্তরঞ্জনের বাসিন্দা, পাখিপ্রেমী কৃশানু ভট্টাচার্য জানান, বার হেডেড, লেসের হুইশলিং বা লার্জ পার্পল মুরহেনের মতো বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মিলত রূপনারায়ণপুরের কেবলসে্র ড্যামগুলিতে। কৃশানুবাবুর দাবি, ‘‘বছর পাঁচেক ধরে আর পরিযায়ী পাখিদের দেখা মিলছে না। তবে অজয় লাগোয়া চিত্তরঞ্জন ড্যাম বা মাইথনের সিদাবাড়িতে অল্প সংখ্যায় এদের দেখা যায়।’’

কিন্তু পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা কম কেন? এলাকার পাখিপ্রেমীদের দাবি, মূলত দূষণ ও চোরাশিকারিদের উৎপাতের কারণেই এমন হাল। তাঁরা জানান, বছরভর জলাশয়গুলিতে বিভিন্ন রাসায়নিক মিশছে। তা ছাড়া বিসর্জনের পরে সাফাই হয় না জলাশয়গুলিতে। শুধু তাই নয়, সরাল, শামুখ খোলের মতো পাখিগুলি জলে থাকার পাশাপাশি ডাঙাতে উঠে বিশ্রাম করে। সেই সময় ওই পাখিগুলি চোরাশিকারিদের পাল্লায় পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, কেবলস্ কারখানার ড্যামগুলি সাফাই না হওয়ায় বর্তমানে বেহাল। যদিও সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্যামল মজুমদার বলেন, ‘‘পক্ষী বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি আমাদের নজরে এনেছেন। জলাশয় সাফাইয়ে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ বারাবনি পঞ্চায়েতের সভাপতি বুধন বাউরি জানান, তাঁরা মন্দিরা ড্যাম সাফাই করতে পদক্ষেপ করছেন। চিত্তরঞ্জনের ড্যামগুলি গত বছর থেকে সাফাই করা হচ্ছে বলে দাবি কারখানার জনসংযোগ আধিকারিক মন্তার সিংহ।

পাখিরা কবে ফিরবে, তা নিয়ে হাপিত্যেশ করে বসে রয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। পুরনো দিনের কথা মনে করে খানিক মনও খারাপ। অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক অনাথবন্ধু চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একটা সময়ে শীতের সকালে জলাশয়ের ধারে বেড়াতে যেতাম সকলে। শিক্ষকেরা পাখি চেনাতে পড়ুয়াদেরও নিয়ে আসতেন। কবে যে সে সব দিন ফিরবে!’’

Migratory birds
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy