মেলার মঞ্চ। নিজস্ব চিত্র
মেলার পোশাকি নাম, ‘কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী ও গানমেলা’। কিন্তু কাটোয়ার এই মেলাকে কেন্দ্র করে সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ করছেন বিরোধীরা। মেলাটির আয়োজক হিসেবে মঞ্চের পিছনে মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার নাম লেখা। সেখানে সরকারি ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের লোগো বা প্রতীক এবং মেলার প্রচারপত্রে ‘অশোকস্তম্ভ’ প্রতীক ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আয়োজক সংস্থার সম্পাদক রণজিৎ চট্টোপাধ্যায়, যিনি সম্পর্কে কাটোয়ার বিধায়ক তথা পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ভাইপো। প্রতীক ব্যবহারের বিষয়ে পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে মহকুমা প্রশাসন।
সপ্তাহব্যাপী ওই মেলাটি শুরু হয়েছে গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে, সুবোধ স্মৃতি রোডে কাশীশ্বরী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে। আর এই মেলাকে কেন্দ্র করে জোড়া বিতর্ক উস্কে দিচ্ছেন বিরোধীরা—
প্রথমত: ‘দুর্নীতি’র নালিশ। বিজেপির জেলা সভাপতি (কাটোয়া) কৃষ্ণ ঘোষের কথায়, ‘‘বিধায়কের ভাইপোর আয়োজনে ওই মেলা গত তিন বছর ধরে চলছে। মেলাটিকে সামনে রেখে বাজার থেকে টাকা তোলা হচ্ছে।’’ সিপিএম নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের তোপ, ‘‘এই মেলাকে বিধায়কের ভাইপোর ব্যবসা বলাটাই ভাল।’’
দ্বিতীয়ত: ‘লোগো’ ব্যবহার নিয়ে চাপানউতোর। কৃষ্ণবাবু, অঞ্জনবাবুদের তোপ, ‘‘অশোকস্তম্ভ, কন্যাশ্রী প্রকল্পের লোগো ব্যবহার করা হচ্ছে ওই বেসরকারি মেলায়। এটা করা যায় না।’’ কাটোয়া মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার প্রাক্তন সম্পাদক তথা বর্তমান সহ-সভাপতি পার্থবরণ রক্ষিত বলেন, ‘‘আমাদের সংস্থা বেসরকারি। পদাধিকার বলে মহকুমাশাসক সভাপতি। মেলায় সরকারি-লোগো ব্যবহার ঠিক নয়।’’ মেলা চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, মঞ্চ, তোরণ-সহ নানা জায়গায় রয়েছে কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রতীক। প্রতীক ব্যবহার ‘একেবারেই ঠিক হয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন কাটোয়া পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়ও। জেলার কন্যাশ্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক (ডিপিও, সর্বশিক্ষা মিশন) মৌলি সান্যাল বলেন, ‘‘সরকারি লোগো শুধু সরকারি অনুষ্ঠান বা কর্মসূচিতেই ব্যবহার করা যায়।’’
মেলার প্রচারপত্রেসরকারি প্রতীক। নিজস্ব চিত্র
এ দিকে, মহকুমা প্রশাসনের ‘সভার কার্যবিবরণী বই’তে দেখা যাচ্ছে, পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ‘অনুরোধে’ মেলা পরিচালনার দায়িত্ব ক্রীড়া সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে ‘সম্মতি’ জানিয়েছেন সদ্য প্রাক্তন মহকুমাশাসক সৌমেন পাল। তবে সদ্য নিযুক্ত মহকুমাশাসক (কাটোয়া) প্রশান্তরাজ শুক্লা বলেন, ‘‘বেসরকারি মেলায় কন্যাশ্রী লোগো ব্যবহার করা যায় না। মেলার লিফলেটে জাতীয় প্রতীক ছাপানোটাও বেআইনি। আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ করছি।’’
এ সব বিতর্ক বা অভিযোগকে আমল দিতে চাইছেন না আয়োজক রণজিৎবাবু। তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘লিফলেটে জাতীয় প্রতীক ব্যবহার করা ভুল হয়েছে।’’ কিন্তু সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধার কারণে তিন প্রকল্পের প্রচার করা হচ্ছে। কিছু খেলা-পাগল মানুষের অনুদানে মেলার খরচ ওঠে। বিরোধীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’
বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘কোনও মন্তব্য করব না। যা বলার রবীন্দ্রনাথবাবু বলবেন।’’ রবীন্দ্রনাথবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কী হয়েছে খোঁজ নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy