দেশের যে কোনও প্রান্তে জঙ্গি কার্যকলাপের সূত্রে প্রায়ই উঠে আসে খাগড়াগড়ের নাম। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ-সহ নানা রাজ্য থেকে জঙ্গি সন্দেহে ধরপাকড়ের সূত্রেও তা উঠে এসেছে। এক দশক আগে বর্ধমানের খাগড়াগড়-বিস্ফোরণের পরে এনআইএ-র হাতে অসমের বরপেটা থেকে তিন জনকে জঙ্গি কার্যকলাপের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া মাদ্রাসা থেকে খাগড়াগড়ে তাদের গতিবিধি ছিল বলে জেনেছিলেন গোয়েন্দারা। সম্প্রতি অসম পুলিশের হাতে ধৃত নুর ইসলাম মণ্ডলও শিমুলিয়া মাদ্রাসায় প্রশিক্ষণ নিয়েছিল, জেরা করে এমনই তথ্য মিলেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। খাগড়াগড়-মামলায় দোষীদের সাজা হয়ে গেলেও, সেই চক্রের রেশ শেষ হয়নি, মনে করছেন গোয়েন্দারা।
২০১৪ সালের ২ অক্টোবর খাগড়াগড়ে এক বিস্ফোরণে দু’জনের মৃত্যু হয়। তার তদন্তে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম-সহ নানা জেলায় জামাত-উল-মুজাহিদিন (বাংলাদেশ)-এর জঙ্গি-জালের হদিস পায় এনআইএ। গত কয়েক দিন ধরে জঙ্গি সন্দেহে পর পর গ্রেফতারে সেই স্মৃতি ফিরে আসছে। গোয়েন্দাদের দাবি, এর মধ্যে শুধু খাগড়াগড় বা শিমুলিয়া নয়, পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসাতেও জঙ্গি কার্যকলাপের হদিস মিলেছে। রাজ্য এসটিএফের এক কর্তার দাবি, “পূর্ব বর্ধমান জঙ্গিদের আশ্রয়ের জন্য ‘নিরাপদ’ হিসেবে পরিচিত। তাই বর্ধমান, মঙ্গলকোট ছাড়াও মেমারি, রায়না, মন্তেশ্বর ও কাটোয়া ২ ব্লকের বেশ কয়েকটি জায়গা আমাদের নজরে রয়েছে।”
এনআইএ-র প্রাক্তন এক কর্তার দাবি, “সারা বছরই আমাদের নজরে রয়েছে খাগড়াগড়, শিমুলিয়া। খাগড়গড়-কাণ্ডের পরে শিমুলিয়ার কয়েক জনের নাম উঠে এসেছিল। এখন ফের খাগড়াগড়-শিমুলিয়ার নাম উঠে আসছে, তাই আমাদেরও কড়া অবস্থান নিতে হচ্ছে।” খাগড়াগড় মামলায় যে ১২ জন সাজাপ্রাপ্ত জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মঙ্গলকোটের দু’জন রয়েছেন। কয়েক দিন আগে এনআইএ তাঁদের এক জনকে গ্রাম ছাড়তে বারণ করেছে। আর এক জন কলকাতায় রয়েছেন, তাঁকে গ্রামে পা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে— খবর গোয়েন্দা সূত্রের।
গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে ধরপাকড়, সাজা হওয়ার পরে জেএমবি ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে গিয়েছে, তাদের সদস্যেরা আল কায়দার ছাতার তলায় ‘আনসার আল ইসলাম’, ‘আনসারুল্লা বাংলা টিম’ (এবিটি)-র মতো ছোট ছোট সংগঠন তৈরি করে আশ্রয় নিচ্ছে। কে বা কারা তাতে জড়িয়ে পড়ছে, তা নজরে রাখতে গোয়েন্দাদের আতশকাচে থাকছে জেলার নানা এলাকাও।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)