E-Paper

মান নিয়ে প্রশ্ন, হিমঘরে পড়ে আছে বহু আলু

জেলায় সাধারণত প্রতি বিঘায় ১০০ থেকে ১২০ প্যাকেট আলু হয়। কিন্তু আলুর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থাকে। ব্যবসায়ীদের দাবি, গুণগত মান ভাল না হওয়ায় অসম, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে আলু পাঠানো যায়নি এ বার।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৭
আলুবীজ বাছার কাজ চলছে কালনার বুলবুলিতলায়।

আলুবীজ বাছার কাজ চলছে কালনার বুলবুলিতলায়। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল।

উৎপাদন তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়েছিল। আবার ভিন্‌ রাজ্যের আলুও চাহিদা মিটিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের মানুষের। ফলে মরসুমের শেষ লগ্নে হিমঘরে আলু উপচে পড়ছে। জেলায় হিমঘরজাত আলুর ৩২% শতাংশ এখনও রয়ে গিয়েছে। সরকারি ভাবে মরসুম শেষ হতে হাতে পাক্কা এক মাস বাকি। এর মধ্যে বাকি আলু ঠিক দামে বিক্রি হবে না লোকসানে বিক্রি করতে হবে তা নিয়ে চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। আবার আলুর গুণগত মান নিয়েও ক্রেতা থেকে খুচরো বিক্রেতা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।

কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা যায়, মার্চ থেকে হিমঘরে আলু মজুত করা হয়। দু’এক মাস পর থেকেই আলু বার হতে থাকে। নভেম্বরের মধ্যে সরকারি নির্দেশে হিমঘর থেকে সব আলু বার করে দিতে হয়। সেই হিসাবে কয়েক মাসে জেলায় মজুত আলুর ৬৮ শতাংশ বাজারজাত হয়েছে। ওই দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে পূর্ব বর্ধমানে ১০ লক্ষ ৫৭ হাজার ৪৯৬ টন আলু মজুত হয়েছিল। এ বছর জেলার ৯৭টি হিমঘরে আলু মজুত হয়েছে ১১ লাখ ৩০ হাজার ৯৪৮ টন বা ২ কোটি ২৬ লক্ষ ১৮ হাজার ৯৬০ বস্তা (৫০ কেজির বস্তা)।

জেলায় সাধারণত প্রতি বিঘায় ১০০ থেকে ১২০ প্যাকেট আলু হয়। কিন্তু আলুর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থাকে। ব্যবসায়ীদের দাবি, গুণগত মান ভাল না হওয়ায় অসম, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে আলু পাঠানো যায়নি এ বার। সেই বাজার দখল করে নিয়েছে উত্তরপ্রদেশ, বিহারের আলু। ব্যবসায়ীদের একাংশ বলেন, ‘‘আমাদের আলুর মান ভাল ছিল না। সেই কারণে একই দামে বা তার চেয়ে কম দামে পূর্ব বর্ধমানে খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশ বা বিহারের আলু। সেই আলুই জ্যোতি বলে দেদার বিক্রি হয়েছে। জুটেছে উত্তরবঙ্গের আলু।’’ ব্যবসায়ীদের আরও দাবি, যে সব পড়শি রাজ্যে জেলার আলু রফতানি করা হয়, সেখানেও আলুর উৎপাদন বাড়ছে। ফলে রফতানি করার জায়গা কমছে। এ সব কারণেই হিমঘরে আলু থেকে যাচ্ছে, দাবি তাঁদের।

প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের দাবি, আলু অর্থকরী ফসল হিসেবে চিহ্নিত। অথচ গত কয়েক বছর ধরে চাষি কিংবা সংরক্ষণকারীরা আলু উৎপাদন বা বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না। ক্রমাগত লোকসানের দিকেই আলু-ব্যবসা চলছে। সংগঠনের সদস্যদের দাবি, আট-ন’টাকা কেজি দরে আলু হিমঘরে মজুত হয়েছিল। হিমঘরের ভাড়া, শ্রমিকের মজুরি ও অন্য আনুষঙ্গিক খরচ মিটিয়ে সোমবার হিমঘর থেকে ভাল মানের আলু বিক্রি হয়েছে ১৪-১৫ টাকা কেজিতে।

সংগঠনের জেলা সম্পাদক জগবন্ধু মণ্ডল বলেন, “এক বস্তা আলুতে ভাল আলু থাকে ৫২-৫৫ শতাংশ। ১০% আলু নষ্ট হয়ে যায়। ফলে, বর্তমানে আলু বিক্রি করে লোকসানই হচ্ছে।’’ যদিও একটা সময় আলু থেকে লাভ পেয়েছেন সংরক্ষণকারীরা। জগবন্ধুর দাবি, “একটা পদ্ধতিতে আলু ক্রেতার কাছে পৌঁছয়। সংরক্ষণকারীরা আলু হিমঘর থেকে বার করলেই তো বড় পাইকারেরা গুদামে আলু ঢোকাবেন না। আবার তাঁরা চাইলেও ছোট পাইকাররা নেবেন না। একই ভাবে খুচরো বিক্রেতাদের কাছেও আলু পৌঁছাবে না। যতক্ষণ না ক্রেতাদের মধ্যে চাহিদা তৈরি হচ্ছে, ততক্ষণ আলু গুদামজাত করার ঝুঁকি কোনও ব্যবসায়ী নেন না।’’

কৃষি বিপণন দফতর থেকে আলু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নভেম্বর মাসে হিমঘর থেকে ১৭% মতো আলু বার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার পরেও ১৫% শতাংশর মতো আলু হিমঘরে থেকে যাবে। সেই কারণে হিমঘর বন্ধের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি করেছেন তাঁরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy