E-Paper

গ্যাঁটের খরচে সংযোগ বাড়িতে, কল শুকনোই

প্রতি বছর গরমেই জলের জন্য হাহাকার তৈরি হয় এই খনি-শিল্পাঞ্চলে। কেন পর্যাপ্ত জল সরবরাহ হয় না? সমস্যার মূলে কী? সমাধানই বা কী?

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ ০৮:২৯
জল চেয়ে প্রায়ই বিক্ষোভ।

জল চেয়ে প্রায়ই বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।

দৃশ্য ১: বার্নপুরের ৯৭ নম্বর ওয়ার্ডের নাকড়াসোতা গ্রাম। রাস্তার পাশে কলতলায় ফুট তিনেক গর্ত খুঁড়ে সেখানে নেমে জল সংগ্রহ করছেন গ্রামের পুরুষ ও মহিলারা। পড়েছে লম্বা লাইন। আসানসোলের ৯৭ নম্বর ওয়ার্ডে, বার্নপুরের নাকরাসোতার ছবি। অনেকে অপেক্ষায় না থেকে সাইকেলে জ্যারিকেন ঝুলিয়ে যাচ্ছেন দেড় কিলোমিটার দূরে নিউটাউনের ইস্কো আবাসন এলাকায়।

দৃশ্য ২: ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে কুলটির আলডিহিতে পুরসভার জলপ্রকল্পের পাইপলাইন রয়েছে। বাড়িতে সংযোগও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জল পড়ে না। মাটির প্রায় চার ফুট নীচে পাইপের সংযোগস্থলে গর্ত খুঁড়ে জল বার করছেন বাসিন্দারা।

দৃশ্য ৩: ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে বরাকরের গায়ত্রীনগর। বছর দুয়েক আগে এখানে পুরসভা জলের পাইপ পাতে। গাঁটের কড়ি খরচ করে বাসিন্দারা বাড়িতে সংযোগ নিয়েছেন। কিন্তু সেই পাইপে আজও জল আসেনি। প্রায় তিন কিলোমিটার দূর থেকে জল আনতে হয়।

পুরসভার ১০৬টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের কমবেশি সমস্যা সারা বছরই থাকে। গরমে তা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। অথচ, কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করে একাধিক জলপ্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। জল না পেয়ে এই বছর নানা এলাকায় বিক্ষোভ-অবরোধ হচ্ছে। পুরসভা সূত্রের হিসাবে, ১০৬টি ওয়ার্ডে প্রায় আট লক্ষ বাসিন্দার মধ্যে সাড়ে তিন লক্ষই জলের সঙ্কটে ভুগছেন। সঙ্কট মেটাতে বারবার বোর্ডের বৈঠক ডেকে একাধিক পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু সঙ্কট মেটেনি।

নাকরাসোতা গ্রামের বাসিন্দা রাজেন্দ্র বাউড়ির অভিযোগ, ‘‘প্রতি বছর গরমে পানীয় জলের সঙ্কট মাত্রাছাড়া হয়। পুরসভা পর্যাপ্ত জল দিতে পারে না। ইস্কো উদ্যোগী হয়ে জলের সংযোগ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক টানাপড়েনে বন্ধ হয়ে গেল। খুব কষ্টে আছি।’’ কারখানা লাগোয়া এই গ্রামে সামাজিক দায়িত্বপালন প্রকল্পে ইস্কো কর্তৃপক্ষ জলের সংযোগ দেওয়ায় উদ্যোগী হয়েছিলেন। গত বছর ১০ নভেম্বর সেই কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু এই কাজের কৃতিত্ব দাবি করে বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে বিবাদ তৈরি হয়। তা নিয়ে অশান্তি বাধে এলাকায়। তার পরে থমকে গিয়েছে সেই উদ্যোগ।

৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের কুলটির আলডিহি গ্রামের বাসিন্দা মিনু বাউড়ি বলেন, ‘‘১৮ বছর আগে বিয়ে হয়ে এখানে আসা ইস্তক জলের সমস্যায় রয়েছি। নিত্য এই সমস্যার কথা শোনাতে এখন আর ভাল লাগে না।’’ এলাকাবাসীর দাবি, পুরসভা নির্বিকার। বরাকর গায়ত্রীনগরের বাসিন্দা রেখা কেশরী বলেন, ‘‘বাড়িতে জল পাব, রাস্তা থেকে জল বয়ে আনতে হবে না— এই আশায় কষ্টেসৃষ্টে প্রায় চার হাজার টাকা খরচ করে সংযোগ নিয়েছি। পাইপ পাতা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কলে এক ফোঁটা জল পড়ে না।’’ শান্তিদেবী যাদবের কথায়, ‘‘দেনা করে বাড়িতে জলের সংযোগ নিয়েছি। দেনা শোধ হয়েছে, কিন্তু জল আসেনি।’’ একই অবস্থা কুলটির কলেজপাড়াতেও। স্থানীয় বাসিন্দা মিলন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পুরসভার কলে দু’বেলা জল পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সন্ধ্যায় সুতোর মতো জল পড়ে। পর্যাপ্ত জল পাই না।’’

শিল্পাঞ্চলবাসীকে জল দিতে নানা প্রকল্প হয়েছে। তবু এই পরিস্থিতি কেন? (চলবে)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Asansol

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy