Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ছে দূষণ, কাজ শেষ হয়নি প্রকল্পের

দূষণ রুখতে প্রায় এক দশক আগে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানে’ কাটোয়ায় একটি জলশোধন প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা করে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর।

এই প্রকল্প নিয়েই অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

এই প্রকল্প নিয়েই অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৯ ০১:৫৬
Share: Save:

ঘাটের কাছে ভাগীরথীর জলে ফ্যানা! রং কালো। এর কারণ, কাটোয়া পুরসভার ২০টি ওয়ার্ডের সমস্ত আবর্জনা মিশছে নদীর জলে। বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য শাঁখাই ঘাট লাগোয়া একটি ‘সুয়েজ় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ থাকলেও দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে তা কার্যত অকেজো বলে এলাকাবাসী জানান। তাঁদের অভিযোগ, ভাগীরথীর দূষণ আটকাতে নির্বিকার প্রশাসন।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দূষণ রুখতে প্রায় এক দশক আগে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানে’ কাটোয়ায় একটি জলশোধন প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা করে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। সেই মতো ১কোটি ১০ লক্ষ টাকা খরচে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচ একর জমি কেনে রাজ্য সরকার। প্রকল্প রূপায়ণে ৬৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে কেন্দ্রীয় সরকার। পরিকল্পনা ছিল, শহরের নোংরা জল নর্দমা দিয়ে জলাধারে জমা করে নির্দিষ্ট সময়ে তা শোধন করে নদীতে ফেলা হবে। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কাটোয়া শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পার্থসারথি সিংহ জানান, প্রাকৃতিক উপায়ে জলাধারে জমা জল সূর্যের তাপে পরিশোধন হয়। তবে তার জন্য সূর্যের তাপ, বাতাস ও

সময় লাগে।

তবে পুরসভা কর্তৃপক্ষের দাবি, জলাধার তৈরি, নর্দমাগুলিকে পাইলাইনের মাধ্যমে যুক্ত করার মতো কিছু কাজ এগিয়েছে। কিন্তু জলশোধনের যন্ত্রই বসানো হয়নি। বরাদ্দ টাকা শেষ হওয়াতেই তা বসানো যায়নি বলে দাবি দফতরের কর্তাদের একাংশের।

পুরসভা জানায়, বছর সাতেক আগে দফতর অর্ধসমাপ্ত প্রকল্পটি হস্তান্তর করতে চাইলেও তারা তা নেয়নি। পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শহরের নোংরা জল ভাগীরথীতে পড়ছে। ছড়াচ্ছে দূষণ। প্ল্যান্টটি চালুর জন্য গত বছর রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীকে আর্জি জানাই। তবে এখনও প্ল্যান্টটি সে ভাবে চালুই হয়নি।’’

জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর আবার জানায়, প্ল্যান্টের কিছু পরিচালনগত সমস্যা রয়েছে। যেমন, প্রথমত, প্ল্যান্ট এলাকার ভিতরে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট জলাধার রয়েছে। কিন্তু সেগুলি বাঁধের থেকে নিচু। ফলে বর্ষায় জল উপচে বাঁধ লাগোয়া এলাকা ভাসিয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, প্ল্যান্টের পাঁচশো মিটারের মধ্যে জনবসতি থাকা উচিত নয়। অথচ এই মুহূর্তে প্ল্যান্টের গা ঘেঁষে জনবসতি রয়েছে। তৃতীয়ত, প্ল্যান্টের জলাধারে না এসে গোয়ালপাড়ার মতো চারটি ছোট নর্দমার জল সরাসরি নদীতে মেশে। চতুর্থত, বেশ কিছু জায়গায় প্ল্যান্টের যন্ত্রাংশ চুরি হয়েছে। ভাঙা মূল দরজার গেটও। এই পরিস্থিতিতে পার্থসারথিবাবু বলেন, ‘‘প্রকল্পটি সংস্কার করে চালু করার জন্য আড়াই কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের কাছে। সেই টাকা বরাদ্দ হলেই ফের কাজ

শুরু হবে।’’

অন্য দিকে, অস্থায়ী ভিত্তিতে জল দূষণ আটকাতে শাঁখাই, দেবরাজ ঘাটে লোহার জাল লাগিয়েছে পুরসভা। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘ওই জালে প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য আটকে যাবে। দ্রুত সুয়েজ় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের সংস্কার হলে কাটোয়ায় ভাগীরথীতে দূষণ রোধ করা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution Katwa Bhagirathi River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE