Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছড়ার রঙ্গে ভোটের দেওয়াল 

দুর্গাপুরে মামরা বাজারের কাছে শরৎপল্লিতে তৃণমূলের লিখন, ‘গ্রাম শহরে বলছে ভাই/ সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই নাই/ পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বেঁধেছে জোট/ জোড়া ফুলে মারবে ভোট’।

দুর্গাপুরে তৃণমূলের দেওয়াল লিখন। ছবি: বিকাশ মশান

দুর্গাপুরে তৃণমূলের দেওয়াল লিখন। ছবি: বিকাশ মশান

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ১০:০৭
Share: Save:

‘চৌকিদার’, ‘আম্বানি’, ‘মোদী-মমতা’—ছড়া বাঁধতে গিয়ে বিষয়ে ঐতিহ্যগত ভাবেই এসেছে ‘সমসময়’। ভোট-ছড়াতে এ বারও ছয়লাপ দুর্গাপুরের দেওয়াল। লাল, সবুজ, গেরুয়া, সব শিবিরই দড় ছড়া-যুদ্ধে।

কেমন তা? কাঁকসার গোপালপুরের দেওয়াল। সেখানে তৃণমূলের ছড়া প্রচার, ‘ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল, এ বারও তৃণমূল’। ঠিক পাশের দেওয়ালেই সিপিএমের পাল্টা, ‘ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল, এ বার বিদায় তৃণমূল’। সাম্প্রদায়িকতা, বিভাজনের রাজনীতি, চৌকিদার, এই শব্দগুলি নানা সময়ে এ বারের ভোট-প্রচারে বারবার শোনা যাচ্ছে যুযুধান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের বক্তব্যে।

সেই ‘জনপ্রিয়’ শব্দগুলিও দেওয়াল দখল করেছে। যেমন, দুর্গাপুরে মামরা বাজারের কাছে শরৎপল্লিতে তৃণমূলের লিখন, ‘গ্রাম শহরে বলছে ভাই/ সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই নাই/ পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বেঁধেছে জোট/ জোড়া ফুলে মারবে ভোট’। এবিএলের কাছে স্বপ্না মার্কেটে বিজেপির আবার দেওয়াল লিখন, ‘চৌকিদার ‘পিওর’ হ্যায়, ভ্রষ্টাচারী সব ডরতে হ্যায়।’ মামরা বাজার শরৎপল্লিতে তৃণমূল ও বিজেপি, দু’পক্ষকেই ‘টার্গেট’ করে সিপিএম লিখেছে, ‘মিলে মিশে লুটে খায়, বুঝে গেছে জনতা, ও পাড়ার মোদী আর এ পাড়ার মমতা।’ সগড়ভাঙায় আবার রাফাল সংক্রান্ত বিতর্কের দিকে ইঙ্গিত করে তৃণমূলের ছড়া, ‘আম্বানির দালাল যত, গরীবের পেটে লাথ।/ মানুষ মরুক নেই পরোয়া, ওদের শুধু ধর্ম আর জাত।’

ভোটের ছড়া বাংলা সংস্কৃতিরই একটি নিজস্ব অঙ্গ। যেমন, ১৯৬৯-র বিধানসভা ভোটের আগে ‘শাপমোচন’ ছবির গানের আদলে কংগ্রেস লিখেছিল: ‘শোনো বন্ধু শোনো—/ ফ্রন্টের ঐ ন-মাসের ইতিকথা/ চোদ্দ জনের গোঁজামিলের/ সে এক বীভৎসতা।...’ পাল্টা, যুক্তফ্রন্ট অন্নদাশঙ্কর রায় শরণে থেকে লিখেছিল, ‘কিল মারেনি, ঢিল মেরেছে!/ তাতেই তোমরা রুষ্ট হলে?/ তোমরা যখন হুকুম দিয়ে/ চালাও গুলি দুষ্ট বলে!/ —তার বেলা?...’

এর পরে একের পর এক ভোট গিয়েছে। বাঙালির ভোট-রঙ্গে ভাটা পড়েনি। সাহিত্যেও শিবরাম চক্রবর্তীর ‘অল্পবিস্তর’ থেকে গৌরকিশোর ঘোষের ‘রূপদর্শীর সংবাদভাষ্য’ নাড়াচাড়া করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যঙ্গ নিয়ে। কিন্তু, সর্বত্র লেগে থাকে ওই ‘সমসময়’। এক বার এক বিখ্যাত ইতিহাসবিদ বলেছিলেন, ‘ঠাট্টা করা জনসমাজের অধিকার’। ভোট-ছড়ায় সেই ঠাট্টার ছলেই আসলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বক্তব্যটুকু বলে দেয়, মনে করছেন দুর্গাপুরের এক প্রবীণ।

ভোট-ছড়ার আবেদন নিয়ে সচেতন দুর্গাপুরের রাজনৈতিক নেতারাও। তৃণমূল নেতা উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শহরে প্রচারের নানা মাধ্যম রয়েছে। কিন্তু, ছড়া গ্রামে বিশেষ ভাবে প্রচারের ভাষা হয়ে ওঠে। সেই ভাষা নিয়ে চর্চা হয় শহরেও।’’ সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকার মনে করেন, ‘‘অন্ত্যমিলের এমন ছড়ায় আমরা নাগরিকদের কাছে সহজ সত্যটা সহজ ভাবে বলি। এটা সুস্থ সংস্কৃতিরই লক্ষণ।’’ বিজেপি নেতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘ভোটারদের কাছে প্রার্থীকে জয়ী করার আহ্বান তো দেওয়াল লিখনে থাকেন। কিন্তু দলের স্লোগান, বক্তব্য ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিতে ছড়ার জুড়ি মেলা ভার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durgapur Graffiti BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE