Advertisement
E-Paper

রেজিস্ট্রেশনের পরেও পরীক্ষার্থী কম

কেন বাকি পড়ুয়ারা পরীক্ষায় বসছে না? শিক্ষক মহলের মতে, এর বড় কারণ ‘ড্রপ আউট’। কাজের খোঁজে স্কুল ছাড়ছে তারা। অনেকের আবার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৫:৪৯
Share
Save

ফি বছর নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করার পরে ১০-১২% ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিকে বসছে না। এমনকী, অ্যাডমিট কার্ড নেওয়ার পরেও সব পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে যাবে কি না, তা নিয়েও শিক্ষক মহলের একাংশের সন্দেহ রয়েছে। শুক্রবার দুপুরে জেলা প্রশাসন মাধ্যমিক নিয়ে পুনর্মূল্যায়ন বৈঠক করেছে। সোমবার শুরু মাধ্যমিক। সব পরীক্ষার্থী যাতে কেন্দ্রে পৌঁছয় তার জন্য সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলি কী পদক্ষেপ করবে, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষাবিদদের একাংশের মতে, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাড়তি উদ্যোগ থাকলে রেজিস্ট্রেশনের পরে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসায় ছাত্রছাত্রীদের ‘অনীহা’থাকত না।

২০২৫-এ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য ৫১,৭২০ জন রেজিস্ট্রেশন করিয়েছিল (ছাত্র ২৭,২০৮, ছাত্রী ২৪৫১২)। নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষায় বসবে আনুমানিক ৪৩,৮০০ জন। প্রায় আট হাজার ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিকে বসছে না। ‘সিসি’ পরীক্ষার্থী হিসেবে এ বছর ১৯০০ জনের মতো মাধ্যমিকে বসছে। সব মিলিয়ে এ বার মাধ্যমিকে বসবে ৪৫,৮৪৮ (ছাত্র ১৯,৪৪৮ ও ছাত্রী ২৬৪০০)।

কেন বাকি পড়ুয়ারা পরীক্ষায় বসছে না? শিক্ষক মহলের মতে, এর বড় কারণ ‘ড্রপ আউট’। কাজের খোঁজে স্কুল ছাড়ছে তারা। অনেকের আবার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত এক বছরে জেলায় নাবালিকা মা হয়েছে ৬২৭৮ জন। শিক্ষক মহলের ধারণা, মাধ্যমিকের পড়ার ফাঁকেই তাদের বিয়ে হয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে পরীক্ষায়। পর্ষদের এক কর্তা বলেন, “পরীক্ষার্থী কেন কমল, স্কুল শিক্ষা দফতর ও শিশুকল্যাণ বিভাগ যৌথ ভাবে তার সমীক্ষা শুরু করেছে। প্রতি বছরই এ নিয়ে আলোচনা হয়। রিপোর্ট তৈরি করে শিক্ষা দফতরে পাঠানো হয়। এতে আগের থেকে অবস্থা কিছুটা হলেও ভাল হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, টেস্টে বহু স্কুল কড়াকড়ি করায় অনেক পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়নি। তারা মাধ্যমিকে বসছে না” যদিও শিক্ষক মহলের একাংশের মতে, অনুত্তীর্ণ না হওয়ার ঘটনা খুব বেশি নয়। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাসফেল প্রথা নেই। নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করানোর জন্য শিক্ষকদের বাড়তি তাগিদ থাকে। পাশাপাশি, নবম শ্রেণিতে উঠতে পারলেই ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের সাইকেল পাওয়ার লোভও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কাজ করে। সে কারণে অষ্টম শ্রেণির পরে কাজের জন্য বাইরে চলে গেলেও রেজিস্ট্রেশন করিয়ে রাখে। শিক্ষাবিদ কৃষ্ণা মুখোপাধ্যায় বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের সামনে বিভিন্ন প্রকল্পের ‘খুড়োর কল’ ঝোলানো হচ্ছে। সেই লোভে কিছুটা হচ্ছে। তার পরে শুধুই হতাশা।”

জেলার শাসক দলের শিক্ষক সংগঠনের প্রাক্তন সভাপতি রথীন মল্লিক মনে করছেন, “গরিব ঘরের পড়ুয়ারা দোকানে কাজ করে। ক্যাটারিং করে পড়াশোনা করে। ওই সব ছাত্রদের রেজিস্ট্রেশন করানোর জন্য স্কুলগুলির বাড়তি উদ্যোগ থাকে। কিন্তু তারা যাতে মাধ্যমিকে বসে তার চেষ্টা স্কুল করে না।” এক বেসরকারি স্কুলের সহকারী অধ্যক্ষ গোপীবল্লভ রায়ও মনে করেন, “ওই ঘাটতি পূরণ করতে পারেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।” ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কার পাওয়া শিক্ষক বাসুদের চক্রবর্তীর বক্তব্য, “এত প্রকল্প থাকার পরেও স্কুলমুখী হচ্ছে না গরিব ঘরের ছাত্ররা। একটা অনীহা কাজ করছে। পড়ে কী হবে? তার চেয়ে কাজ করে মোবাইল, বাইক কেনা ভাল— এ রকম মানসিকতা তৈরি হচ্ছে।”

পর্ষদ মনোনীত মাধ্যমিক পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অমিত কুমার ঘোষ অবশ্য মনে করেন, “টেস্টে অনুত্তীর্ণ হওয়া ও পরীক্ষা নিয়ে ভীতির কারণে অনেকে পরীক্ষায় বসে না। এ বছর অনেকেই পরীক্ষায় বসছে। এটা রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুফল।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}