বয়স আঠারো হয়নি। কাজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রশ্নই নেই। তবু মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে আসছে ওরা বাইক চালিয়ে। তা-ও আবার হেলমেট না পরেই। কেউ আসছে ১০ কিলোমিটার দূর থেকে, কেউ বা আট কিলোমিটার। আউশগ্রামে বেশ কিছু স্কুলের সামনে দাঁড়ালে রোজই এমন ছবি দেখা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। চিন্তিত ট্র্যাফিক পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই পরীক্ষার্থীদের কেউ আসে একা। কারও বাইকের পিছনে দুই বা তিন জন-ও থাকে। কারও মাথায় হেলমেট দেখা যায় না। পথ নিরাপত্তা নিয়ে লাগাতার প্রচারের পরেও সচেতনতায় ঘাটতি যে রয়ে গিয়েছে, এই ছবি তারই প্রমাণ বলে মনে করছেন পুলিশের একাংশ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাধ্যমিকের শুরু থেকেই গুসকরা পিপি ইনস্টিটিউশন, সুশীলা যজ্ঞেশ্বর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, আউশগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়, ভেদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, দেবশালা উচ্চ বিদ্যালয়, রামনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো অনেক পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে দাঁড়ালেই হেলমেট না পরে পরীক্ষার্থীদের বাইক চালিয়ে আসা-যাওয়ার ছবি দেখা যাচ্ছে। পুলিশের উদ্যোগে স্কুলে মাঝেমধ্যেই পথ নিরাপত্তার পাঠ পড়ানো হয় পড়ুয়াদের। তার পরেও এই ছবি দেখে উদ্বিগ্ন স্কুলের শিক্ষকেরাও। অভিভাবকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। তবে শুধু পরীক্ষার সময়েই নয়, অন্য সময়েও নাবালকদের বেপরোয়া গতিতে হেমলেট না পরে বাইক চালাতে দেখা যায়, দাবি বাসিন্দাদের একাংশের।
পুলিশের দাবি, পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা ওই সমস্ত পরীক্ষার্থীদের সতর্ক করছেন রোজই। কিন্তু তারা কোনও কথাই শুনছে না। পরীক্ষা মিটলে ফের স্কুলে পথ নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা শিবির করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এক পুলিশ আধিকারিক কৃবলেন, ‘‘কেন বাইক চালিয়ে আসছে, কেন মাথায় হেলমেট নেই— এই সব প্রশ্ন করলে পরীক্ষার্থীরা নানা অজুহাত দিচ্ছে। কেউ বলছে পর দিন থেকে আর বাইক চালিয়ে আসবে না। কিন্তু পর দিনও আসছে বাইক চালিয়ে। দেখে আমাদের বুক কাঁপে।’’
আউশগ্রামের লবনধরের এমনই এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবককে বিষয়টি জানানো হলে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এটা খারাপ হয়েছে। ছেলের হাতে বাইক দেওয়া উচিত হয়নি। মাঝেমধ্যে বাড়ির কাজের জন্য ছেলে বাইক চালিয়ে যায়। সেই কারণেই দিয়েছিলাম।” গুসকরা পিপি ইনস্টিটিউশনের ভেনু সুপারভাইজ়ার প্রেমাংশু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ রকম ছবি দেখা যাচ্ছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। বিষয়টি দেখা উচিত পুলিশ প্রশাসনের। পরীক্ষার্থীদের সচেতন করছি। তাতেও কাজ হচ্ছে না। এটা বেশি হয় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে। অনেক পড়ুয়া বাইক নিয়ে স্কুলে আসে”
আউশগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তকির মণ্ডল বলেন, “আমারই স্কুলের এক পড়ুয়াকে পরীক্ষা দিয়ে পেল্লায় বাইক চালিয়ে ফিরছে দেখেছি। এটা উদ্বেগের বিষয়। অভিভাবকেরা চরম উদাসীন হলে এমনটা হয়। অ্যাডমিট কার্ড দেওয়ার সময়ে বারবার সতর্ক করেছিলাম।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্র্যাফিক) সুরজিৎ দে বলেন, “বিষয়টি নজরে এসেছে। গুরুত্ব দিয়ে দেখব। প্রত্যেক থানার মাধ্যমে স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)