পড়ার ঘরের দেওয়ালে সাঁটানো কাগজে লেখা, ‘প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হব না’। আশপাশে ছড়িয়ে রয়েছে বইপত্র, হাতে আঁকা ছবি। সে সব দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বৃদ্ধা বলছিলেন, “আজকের দিনটা আমাদের কাছে সবচেয়ে আনন্দের দিন হতে পারত। তার বদলে, দুঃখ বেড়ে গেল।” সপ্তাহ দুয়েক আগে একমাত্র নাতনি থৈবি মুখোপাধ্যায়কে হারিয়েছেন তিনি। শুক্রবার মাধ্যমিকের ফল ঘোষণার পরে জানা যায়, সেই নাতনি ৬৭৪ নম্বর পেয়ে স্কুলে প্রথম হয়েছে। সেই খবরে শোক যেন আরও গভীর হয়েছে।
আসানসোলের উমারানি গরাই মহিলা কল্যাণ গার্লস হাই স্কুলে পড়ত থৈবি। বাবা বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক, মা পিউ বাড়ির কাজ সামলান। ঠাকুরদা বাসন্তীদাস মুখোপাধ্যায় জানান, মাধ্যমিকের আগে অসুস্থ হয়ে পড়ে থৈবি। পেটে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়েই পরীক্ষা দেয় সে। ধরা পড়ে গুরুতর জন্ডিস। পরীক্ষা শেষে চিকিৎসার জন্য তাকে হায়দরাবাদ, ভেলোরে নিয়ে যান পরিজনেরা। তবে বিশেষ সাড়া মিলছিল না চিকিৎসায়। ১৬ এপ্রিল ভেলোরে মৃত্যু হয় তার।
থৈবি ভাল ফল করবে, স্কুলের শিক্ষিকারা থেকে পড়শি, সকলেরই বিশ্বাস ছিল। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা পাপড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ও সুস্থ অবস্থায় পরীক্ষা দিলে, আরও ভাল ফল করত। পরীক্ষায় টানা তিন ঘণ্টা লিখতেও পারছিল না। তবে মনের জোর ছিল খুব। এখন মনে হচ্ছে, যদি আরও একটু বিশ্রাম নিত, তাতে নম্বর কম পেলেও, আজ হয়তো আমাদের মধ্যে থাকত!”
শোকস্তব্ধ বাবা-মা আসানসোলের বাড়ি ছেড়ে আপাতত বীরভূমে থৈবির মামার বাড়িতে রয়েছেন। ঠাকুমা সবিতা বলেন, “পড়াশোনা ছাড়াও, ছবি আঁকা, মাটির জিনিসের কারুকাজ খুব ভাল করত নাতনি। আজ বেঁচে থাকলে কত খুশি হত। এ ভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে ভাবিনি!” ঠাকুরদার আক্ষেপ, “ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখত থৈবি। ওর উপরে হয়তো বেশি চাপ পড়ে গিয়েছিল। আমরাও হয়তো ঠিক মতো যত্ন নিতে পারিনি।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)