Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রীতি মেনে হাসপাতালেই মুখেভাত গুঞ্জা-র

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১১ ফেব্রুয়ারি ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলার ঠিকানা দিয়ে ভর্তি হন এক অন্তঃসত্ত্বা। সে দিনই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। সদ্যোজাতের শরীর খারাপ থাকায় সিক নিও নেটাল ইউনিটে ভর্তি করানো হয় তাকে।

উৎসব: বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে মুখেভাত গুঞ্জার। —নিজস্ব চিত্র।

উৎসব: বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে মুখেভাত গুঞ্জার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৭ ০১:৩৪
Share: Save:

জন্মের পরেই তাকে হাসপাতালে ফেলে পালিয়েছিল মা। জন্মদাত্রীকে না পেলেও ‘যশোদা’দের আদরে, যত্নে হাসপাতালেই বেড়ে উঠছে সে মেয়ে।

বৃহস্পতিবার পুরদস্তুর রীতি মেনে সাত মাসের মেয়ের মুখেভাত দিলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্সেরা। রান্না থেকে শিশুর জামাকাপড়, খাওয়ার খরচ সবই ছিল তাঁদের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১১ ফেব্রুয়ারি ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলার ঠিকানা দিয়ে ভর্তি হন এক অন্তঃসত্ত্বা। সে দিনই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। সদ্যোজাতের শরীর খারাপ থাকায় সিক নিও নেটাল ইউনিটে ভর্তি করানো হয় তাকে। সেই ফাঁকেই মেয়েকে রেখে পালান মা। হাসপাতালের সুপার উৎপল দাঁ বলেন, “পুলিশ ওই ঠিকানায় খোঁজ করে কাউকে পায়নি। নিয়ম মেনে শিশুকল্যাণ কমিটির কাছে চিঠি লিখে শিশু কন্যাটিকে হোমে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি।”

তবে যত দিন না মেয়ে চলে যাচ্ছে, তার সঙ্গে কাজে ফাঁক পেলেই পালা করে সময় কাটাচ্ছেন নার্সেরা। পালি, গুঞ্জা, ইকরা— খুদের নামও হয়েছে অনেক। এসএনসিইউ বিভাগের নার্স রিয়া বিশ্বাস, সীমা ভাণ্ডারি, পায়েল দাস, রেখা মণ্ডলদের কথায়, “সাত মাস ধরে কোলেপিঠে বড় করেছি। অন্নপ্রাশনের ভাবনাও এসেছে স্বাভাবিক ভাবে। কর্তৃপক্ষ সাড়া দিতেই আর দেরি করিনি।’’

এ দিন সকাল থেকেই নতুন জামা, রজনীগন্ধার মালা, চন্দনের ফোঁটা দিয়ে সাজানো হয় শিশুটিকে। ভোর থেকে রান্নার জোগাড়ে লেগে পড়েন দুই নার্স। দুপুরে নতুন কাঁসার থালা, বাটিতে দেওয়া হয় ভাত, ডাল, শুক্তো, পায়েস, মিষ্টি। নিয়ে আসা হয়েছিল দেবী সর্বমঙ্গলার প্রসাদও। নার্সিং সুপার চৈতালি যশ মেয়ের মুখে ভাত তুলে দেন। ভিড় করে উলুধ্বনি, হাততালি দেন আয়ারা।

এর আগেও পরিত্যক্ত শিশুদের আদরে বড় করেছেন এই হাসপাতালের নার্সরা। একটু বড় হওয়ার পরে নিয়ম মেনে তাদের হোমে পাঠাতে হয়েছে। স্নায়ু ও শিরদাঁড়ার রোগে আক্রান্ত বুড়ি আট বছর ধরে মানুষ হয়েছিল হাসপাতালের শিশু বিভাগে। শুশ্রূষার পাশাপাশি তাকে আগলেও রেখেছিলেন ডাক্তার, নার্সরা। শেষে, জেলাশাসকের হস্তক্ষেপে হোমে যায় সে। এ দিন সে কথাও মনে পড়ে যাচ্ছিল অনেকের।

চৈতালিদেবী বলছিলেন, ‘‘কয়েক দিনের মধ্যেই চোখে জল নিয়ে হলেও মেয়েটাকে ছেড়ে দিতে হবে। তার আগে যতটা পারি আনন্দের স্মৃতি জমিয়ে নিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE