E-Paper

শিক্ষক-সঙ্কটে একাদশে ভর্তি নেওয়ায় চিন্তা

জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ৫৮.৩৫ জন পড়ুয়া পিছু এক জন শিক্ষক রয়েছে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৫ ০৭:৪৯
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরেই বিভিন্ন স্কুল একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। অনেক স্কুলের দাবি, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ফর্ম নেওয়ার আগ্রহ তুলনামূলক কম দেখা যাচ্ছে। তবে আরও দিন দুয়েক পরে বোঝা যাবে, ভর্তির গতিপ্রকৃতি কেমন হবে, বিশেষত বিজ্ঞান বিভাগে।

শীর্ষ আদালতের রায়ে জেলায় প্রায় ন’শো শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বাতিল হয়েছে। তার মধ্যে ৮০৭ জন চলতি বছরের শেষ দিন পর্যন্ত স্কুলে আসার অনুমতি পেয়েছেন। এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখে পড়েছে নানা স্কুলের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগ। অনেক প্রধান শিক্ষকের দাবি, ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্কুলে থাকার সুযোগ না দিলে, গ্রামীণ এলাকার বহু স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ বন্ধই করে দিতে হত। এমনিতেই গ্রামের দিকে স্কুলগুলিতে বিজ্ঞানে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি হওয়ার বিষয়ে অনীহা রয়েছে। তার উপরে, শিক্ষক-সঙ্কটের জন্য একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কত জন হবে, সে নিয়ে চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ৫৮.৩৫ জন পড়ুয়া পিছু এক জন শিক্ষক রয়েছে। সমগ্র শিক্ষা মিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, ছাত্র ও শিক্ষকের আদর্শ অনুপাত হওয়া উচিত ৪০:১। প্রধান শিক্ষকদের সংগঠনের দাবি, বর্তমানে শিক্ষকের সংখ্যা আরও কমে গিয়েছে। ভবিষ্যতে কী হবে, সেটাও অনিশ্চিত। ফলে, অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের একাংশও ভর্তি নিয়ে চিন্তিত। রায়নার উচালনে প্রায় ৮৯% নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করা এক ছাত্রের দাবি, “আমাদের এলাকায় একটি স্কুলে বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আর থাকবেন না বলে শুনেছি। অথচ, ওই স্কুলে আমাদের এলাকার ভাল ছেলেমেয়েরা ভর্তি হয়। বিজ্ঞান ও ইংরেজির শিক্ষক না থাকলে ওখানে ভর্তি হব না। আরামবাগ বা গোঘাটে গিয়ে ভর্তি হব।” খণ্ডঘোষের অভিভাবক শেখ সিরাজুলের দাবি, “অনিশ্চয়তার দিকে তো আর মেয়েকে এগিয়ে দিতে পারি না। কষ্ট হলেও শহরের স্কুলে মেয়েকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করতে হবে।”

ছাত্রছাত্রী বা অভিভাবকদের উদ্বেগ যে অমূলক নয়, মেনে নিচ্ছেন জেলার বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা। কেতুগ্রামের আমগোড়িয়া গোপালপুর আরজিএম হাই স্কুলে প্রতি বছর ৩০-৩২ জন ছাত্রছাত্রী বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। এ ছাড়াও, একাদশ শ্রেণিতে ২০০ জনের বেশি ভর্তি
হয়ে থাকে। এই স্কুলে এমনিতেই শিক্ষক-সঙ্কট রয়েছে। তার উপরে, আদালতের রায়ে সমস্যা আরও বেড়েছে। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক বিশ্বনাথ সোরেন বলেন, “ভর্তি তো করছি। কিন্তু চিন্তা একটা থেকেই যাচ্ছে, পরে মুশকিল হবে না তো? বিজ্ঞান বিভাগে সব আসন পূরণ হবে কি না, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।” জামালপুরের একটি স্কুল এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করবে কি না, তা জানার জন্য পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকেছিল। সেই বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ছাত্রছাত্রী ভর্তি নেওয়া হোক। পরে কোনও অসুবিধা হলে, তখন বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা যাবে। এক বার ভর্তি বন্ধ করে দিলে উচ্চ মাধ্যমিকের অনুমোদন পাওয়া সমস্যা হতে পারে বলে চিন্তা তাদের। জামালপুরের অমরপুর বিমলা কৃষি ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষিকা প্রিয়ব্রত মণ্ডল
বলেন, “বিজ্ঞান বিভাগ তো বটেই, একাদশ শ্রেণির ইংরেজির শিক্ষকও নভেম্বরে অবসর নেবেন। তার পর কী ভাবে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস চলবে, জানি না।”

পর্ষদ অবশ্য স্কুলগুলিকে বাড়তি চিন্তা করতে নিষেধ করছে। পর্ষদের যুগ্ম আহ্বায়ক (পরীক্ষা) অমিতকুমার ঘোষ বলেন, “শীর্ষ আদালত তো ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগের কথাও বলেছে। সরকার সে দিকেই এগোচ্ছে। তাহলে স্কুলগুলি অহেতুক চিন্তা করছে কেন? ভর্তি প্রক্রিয়া স্বাভাবিকই
রাখা উচিত।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy