Advertisement
০৬ মে ২০২৪

আগুনের ভয় নিয়েই বাঁচছে নিয়ন্ত্রিত বাজার

ভোর থেকেই আশপাশের গ্রাম থেকে গাড়ি, ভ্যান বোঝাই করে ধান, গম, সব্জি নিয়ে চাষিরা ভিড় জমাতে থাকেন পাইকারি বাজারে। চলে খুচরো কেনাকাটাও।

প্লাস্টিকের ছাউনিতে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। নিজস্ব চিত্র।

প্লাস্টিকের ছাউনিতে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৬ ০৭:৩৯
Share: Save:

ভোর থেকেই আশপাশের গ্রাম থেকে গাড়ি, ভ্যান বোঝাই করে ধান, গম, সব্জি নিয়ে চাষিরা ভিড় জমাতে থাকেন পাইকারি বাজারে। চলে খুচরো কেনাকাটাও। নোংরা, আগুন লেগে যাওয়ার ভয়, বিদ্যুতের জট পাকানো তার নিয়েই চলে রোজকার কারবার। তবে দিন দিন কালনা নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটির দশা আরও বেহাল হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ী থেকে চাষি সবারই। সম্প্রতি ওই বাজার কমপ্লেক্সে আগুন লেগে প্রায় দশটি দোকান পুড়ে যাওয়ায় আরও বেআব্রু হয়ে পড়েছে বাজারের দুর্দশা।

প্রতিদিনই গরুর গাড়ি, ট্র্যাক্টর, ভ্যানে করে ফসল নিয়ে চাষিরা হাজির হয়ে যান বাজারে। ফসল বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত বাজারেই থাকেন তাঁরা। বাজারের নিয়ম অনুযায়ী, চাষিরা প্রথমে পণ্য আড়তদারের কাছে বিক্রি করেন। সেখান থেকে ফড়েরা ফসল কিনে নিয়ে গেলে একটা নির্দিষ্ট কমিশন চাষিদের কাছ থেকে নেন আড়তদারেরা। চাষিদের অভিযোগ, মালপত্র বিক্রির জন্য দীর্ঘক্ষণ বাজারে থাকতে হয়। অথচ একটু বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা নেই বাজারে। অভাব রয়েছে পানীয় জলেরও। তা ছাড়া এত বড় বাজারে পণ্য ওঠানো-নামানো, ঝাড়াই বাছাইের উন্নত ব্যবস্থাও নেই বলে তাঁদের অভিযোগ। তাঁরাই জানান, বাজারে প্রায় ৩০টি আড়ত রয়েছে। অথচ তাদের বেশির ভাগেরই সামনে কোনও আচ্ছাদন নেই। ফলে বৃষ্টি এলেই ফসল ভেজে। এ ছাড়াও শ’দুয়েক ছোট ছোট দোকান রয়েছে। যেগুলো বেশির ভাগই কাঠের তৈরি। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, গুমটি দোকানে কোনও ভাবে আগুন লেগে গেলে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে।

সম্প্রতি বাজারে অগ্নিকাণ্ডও ঘটেছে। ১০টি দোকানের মালপত্র পুড়ে গিয়ে প্রায় দশ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। তাঁরাই জানান, কাঠের দোকানে যে কোনও সময় শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে যেতে পারে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানোর পরেও প্রশাসনের তরফে দোকানঘরগুলি পাকা করা হয়নি। ব্যবসায়ী মন্টু বারুই, রামানন্দ মজুমদার, রাম বাছারেরা জানান, তাঁরা নিজেরাই পাকা দোকানঘর গড়ে নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাতেও অনুমতি দেওয়া হয়নি। দোকান পাকা হলে অগ্নিকাণ্ডে এতখানি ক্ষতি হতো না বলেও তাঁদের দাবি।

বাজার ঘুরেও দেখা যায়, জায়গার থেকে বেশি দোকান থাকায় ঘিঞ্জি হয়ে গিয়েছে এলাকা। নিকাশি নালা থাকলেও সংস্কারের অভাবে তা বুজে গিয়েছে। ফলে ভারী বৃষ্টি হলেই জল জমে যায় বাজারে। ব‌র্জ্য ফেলার একটি ডাস্টবিন রয়েছে ঠিকই, কিন্তু নিয়মিত সাফ না হওয়াই দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। খরিদ্দারদের একাংশও বাজারমুখো হতে চান না দুর্গন্ধে। আবার গাড়ি নিয়ে বাজারে ঢোকার রাস্তাটাও খানাখন্দে তথৈবচ। নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটি সূত্রেই জানা যায়, প্রায় এক দশক মাছের পাইকারি বাজার বসানোর জন্য ২৫ লক্ষ টাকা খরচ করে পাকা ঘর তৈরি হয়েছিল। জল, বিদ্যুতের পরিকাঠামোও তৈরি হয়। ঠিক ছিল, প্রশাসনিক উদ্যোগে কালনা শহরের চকবাজার এলাকার মাছের পাইকারি বাজারটি এখানে তুলে আনা হবে। কিন্তু চকবাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা পুরানো বাজার ছাড়তে না চাওয়ায় পড়ে রয়েছে এখানকার ঘরগুলি। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হতে বসেছে মাছ বাজারের পরিকাঠামো। কালনা চকবাজার কমিটির সম্পাদক লাল্টু দাস বলেন, ‘‘যত সময় যাচ্ছে পরিকাঠামো ক্রমশ নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের উচিত হাজার হাজার মানুষের ভরসার এই বাজারে নজর দেওয়া।’’

কালনার মহকুমাশাসক শুভাশিস বেজ বলেন, ‘‘নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটির কমপ্লেক্সের মধ্যে একটি কিসান মান্ডি তৈরি হবে। তাতে বেশ কিছু পরিকাঠামো উন্নত হবে। পাশপাশি ওই বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিও খতিয়ে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

accident fire market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE