Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিয়ে মানেই নিরাপত্তা নয়, তা বুঝতে হবে

বুধবার দুপুরে সংস্কৃত লোকমঞ্চের জেলা সর্বশিক্ষা প্রকল্পের আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘কন্যাশ্রী’দের শপথ: বয়সের আগে বিয়ে নয়, স্বনির্ভর হয়ে তারা বাবা-মায়ের ‘গর্ব’ হয়ে উঠবে।

অনুষ্ঠানে: সংস্কৃতি লোকমঞ্চে ছাত্রীরা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

অনুষ্ঠানে: সংস্কৃতি লোকমঞ্চে ছাত্রীরা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৭ ১৩:০০
Share: Save:

মেয়ে হওয়ার কত জ্বালা! ঘাড় থেকে নামাতে পারলেই যেন স্বস্তি পরিবারে!

কোনও পরিবার তাকে ভাবে ‘দায়’। কোনও কোনও পরিবারের কাছে আবার মেয়ে হওয়া মানে যেন ‘অপরাধ’। ‘নিরাপত্তা’র দোহাই দিয়ে কিংবা সংসারে অনটনের জন্য আঠারো বছর বয়স হওয়ার আগেই মেয়েকে ‘বিয়ের পিঁড়িতে’ বসাতে বাধ্য করছেন বহু অভিভাবক। তারই মধ্যে বাবা-মা, পরিজন, পাড়া-পড়শিদের বিরুদ্ধে গিয়ে ‘বিয়ে করব না’ বলে প্রতিবাদ করছে অনেকে। সেই প্রতিবাদকেই সম্মিলিত ভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার বার্তা দিল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন।

বুধবার দুপুরে সংস্কৃত লোকমঞ্চের জেলা সর্বশিক্ষা প্রকল্পের আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘কন্যাশ্রী’দের শপথ: বয়সের আগে বিয়ে নয়, স্বনির্ভর হয়ে তারা বাবা-মায়ের ‘গর্ব’ হয়ে উঠবে।

নাবালিকা বা বাল্যবিবাহ কেন দেওয়া হয়, এ দিন অনুষ্ঠানে শুরুতেই মহকুমাশাসক (বর্ধমান উত্তর) মুফতি মহম্মদ শামিম প্রশ্নটা ছুড়ে দেন। ইছালাবাদের একটি স্কুলের ছাত্রী লিপি ঘোষ বলে ওঠে, “দারিদ্রের কারণে অনেক বাবা-মা মেয়েকে বোঝা মনে করেন। সেই বোঝা ঘাড় থেকে নামাতে পারলে তাঁরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। কেউ ভাবেন না, মেয়েরাও নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাবা-মাকে দেখতে পারে।” নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে এ কথা বুঝেছে লিপি। বছর দু’য়েক আগে তার বিয়ে ঠিক করেছিল পরিবার। কিন্তু, সাহস করে সে রুখে দাঁড়িয়েছিল। স্কুলের শিক্ষিকাদের কাছে ‘বিয়ে নয়, পড়তে চাই’ বলে জানিয়েছিল। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ভাস্বতী লাহিড়ী ওই অনুষ্ঠানেই বলেন, “সে দিন চাইল্ডলাইনের সাহায্যে বিয়ে আটকানো গিয়েছিল।”

মাধবডিহির একটি স্কুলের ছাত্রী অনুশ্রী চক্রবর্তী জানায়, রাস্তাঘাটে নিরাপত্তার অভাব, কখন কী ঘটে যায়—এই শঙ্কা থেকেও অনেক অভিভাবক ১৮ বছর বয়সের আগেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন। তার প্রশ্ন, “বিয়ে মানেই নিরাপত্তা নয়, এটা অভিভাবকদের বুঝতে হবে। বরং কম বয়সে বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েরা নানা রকম অসুবিধার মধ্যে পড়ে।” সেহেরাবাজারের দেবস্মিতা তা-এর প্রশ্ন “দারিদ্রের দোহাই দিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়। অথচ গলা অবধি ধার করে বাপের বাড়ি পণও দেয়। মেয়ে বাড়িতে থাকলে কি ওই পণের বেশি খরচ হত?” মেমারির পিউ পাত্র, অনামিকা পালরা এক সুরে বলে, “বাবা-মাকে বুঝতে হবে, মেয়েরাও নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তাঁদের গর্বিত করতে পারে।”

প্রশাসনের কর্তাদের মতে, বিয়ে রোখার কর্মসূচি যে ঠিক পথেই এগোচ্ছে, তা বোঝাল এই মেয়েদের বক্তব্য। আধিকারিকেরা তাদের উদ্দেশে বলেন, “স্বনির্ভর হওয়ার যে শপথ নেওয়া হল, তা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যাতে তোমাদের দেখে আরও অনেক মেয়ে এগিয়ে আসতে পারে। আঠারোর আগে বিয়ে নয়—এটাকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।” কন্যাশ্রী প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা সর্বশিক্ষা প্রকল্পের জেলা আধিকারিক শারদ্বতী চৌধুরীর আবেদন, “বন্ধুর বিয়ে মানে কিন্তু কন্যাশ্রীর লজ্জা! এটা মাথায় রেখেই বিয়ে রুখতে হবে। বন্ধুকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বও কন্যাশ্রীদের।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE