Advertisement
E-Paper

‘মিস্ত্রি’র কেরামতি, সাফ ব্যাগ

বার বার চুরি চলন্ত ট্রেনে। প্রশ্নের মুখে যাত্রী নিরাপত্তা। কী ভাবে ঘটছে এমন দুষ্কর্ম, রেল-আরপিএফ কী পদক্ষেপ করছে, খোঁজ নিল আনন্দবাজার।এখন সাধারণত, দুষ্কৃতীরা তিন-চার জনের এক একটি দল বানিয়ে ট্রেনে ওঠে। সামগ্রিক ভাবে এই দলকে দুষ্কৃতীরা বলে ‘ঢোল কোম্পানি’। দলের ‘মাথা’কে বলা হয়, ‘মিস্ত্রি’। টার্গেট দেখে ব্যাগ হাতানোর মূল কাজটা করে এই মিস্ত্রিই। বাকিরা তার সহকারী।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০১:১৪
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

গভীর ঘুমে মগ্ন যাত্রী। ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, ‘বার্থে’র নীচে আটকানো ব্যাগ উধাও।— সম্প্রতি পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশন দিয়ে যাতায়াত করা বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রীরা এমনই নানা অভিযোগ করেছেন আরপিএফ-এর কাছে। ধারাবাহিক সচেতনতা প্রচারের পরেও কী ভাবে এমন ঘটনা, তা নিয়েই চিন্তায় রেলকর্তারা। আরপিএফের দাবি, তদন্তে নেমে দেখা গিয়েছে, চুরির ‘সাবেক’ পদ্ধতির বদল ঘটিয়েছে দুষ্কৃতীরা। আর তাতেই এমন ‘সাফল্য’।

কিন্তু কী ছিল পুরনো পদ্ধতি, নতুন পদ্ধতিই বা কেমন?

পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের আরপিএফের সিনিয়র কমান্ডান্ট অচ্যুতানন্দ ঝা জানান, চুরির ‘সাবেক’ উপায়, যাত্রীদের মাদক মেশানো খাবার খাইয়ে অচেতন করে লুটপাট চালানো। এই ‘পদ্ধতি’তে দুষ্কৃতীরা সাধারণত টিকিট কাউন্টার থেকেই নির্দিষ্ট যাত্রীর চালচলন, কথাবার্তা দেখে ‘টার্গেট’ করে নেয়। তার পরে যাত্রীর সঙ্গে একই সঙ্গে ট্রেনে চাপে। ট্রেনে প্রথমে যাত্রীর সঙ্গে ‘ভাব জমানো’, তার পরে সুযোগ বুঝে তাঁকে মাদক মেশানো খাবার বা পানীয় খাইয়ে দিতে পারলেই কেল্লা ফতে। যাত্রী অচেতন হয়ে পড়লেই তাঁর সঙ্গে ব্যাগ বা অন্য জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। কিন্তু ধারাবাহিক সচেতনতা-প্রচার ও রেল নিরাপত্তা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের ফলে এই পদ্ধতিতে চুরি আগের থেকে অনেকটাই কমে গিয়েছে বলে আরপিএফের দাবি।

কিন্তু রেল বা আরপিএফের ‘সক্রিয়তা’র সঙ্গে সঙ্গে লুটপাটের পদ্ধতিতে বদল এনেছে দুষ্কৃতীরাও। অচ্যুতানন্দবাবু জানান, এখন সাধারণত, দুষ্কৃতীরা তিন-চার জনের এক একটি দল বানিয়ে ট্রেনে ওঠে। সামগ্রিক ভাবে এই দলকে দুষ্কৃতীরা বলে ‘ঢোল কোম্পানি’। দলের ‘মাথা’কে বলা হয়, ‘মিস্ত্রি’। টার্গেট দেখে ব্যাগ হাতানোর মূল কাজটা করে এই মিস্ত্রিই। বাকিরা তার সহকারী।

আরপিএফ জানায়, মিস্ত্রি নিজে একটি সংরক্ষণ টিকিট কেটে ট্রেনে চড়ে। বাকিরা তার সঙ্গে সাধারণ টিকিট কেটে ওই সংরক্ষিত কামরাতেই ওঠে। তবে এরা কামরার ভিতরে না থেকে শৌচাগারের আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকে। সাধারণত ট্রেনের কর্তব্যরত টিকিট পরীক্ষকের সঙ্গে কথা বলে সাধারণ যাত্রী হিসেবেই এরা সংরক্ষিত কামরায় চাপে। কিন্তু নিজেরা কেউ পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে না। মিস্ত্রির সঙ্গে থাকে একটি উন্নত মানের ‘কাটার’।

ট্রেনে চেপে যাত্রীরা সাধারণত নিজেদের ব্যাগপত্র আসনের নীচে ঢুকিয়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। রাত বাড়তেই যাত্রীরা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েন। আর এই মুহূর্তের অপেক্ষাতেই থাকে মিস্ত্রি। কাটার দিয়ে সে যাত্রীদের বেঁধে রাখা ব্যাগের শিকল কাটতে শুরু করে। কাজ শেষ হওয়ার পরে ব্যাগ পা দিয়ে ঠেলে দু’আসনের মাঝের ফাঁকা অংশে আনে। এর পরে বাকি কাজটা করে সহকারীরা। কোনও রকমে ব্যাগ শৌচাগার পর্যন্ত নিয়ে যায় তারা। তার পরেই চলে লুট।

তদন্তকারী আরপিএফ অফিসারেরা জানান, এরা তালাবন্ধ ব্যাগের চেন খুলে এমন ভাবে ভিতরের জিনিস বার করে নিতে পারে যে সাধারণ মানুষ ঘুণাক্ষরেও টের পান না যে, চুরি হয়েছে। তাঁরা জানান, বছর দেড়েক ধরে এই পদ্ধতিতেই সাধারণত চুরি হচ্ছে। বিশেষ করে ঝাড়খণ্ড, বিহার ও আসানসোল হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দিকে যাতায়াতকারী এক্সপ্রেসগুলিতেই এমন ঘটনা বেশি ঘটে। তদন্তে নেমে আরপিএফ অফিসারেরা দেখেছেন দক্ষিণ বিহার, গয়া, পটনা, সমস্তিপুর, মুঙ্গের, বেগুসরাই, জসিডি, কিউল, জামালপুরের উপর দিয়ে যাওয়া ট্রেনগুলির ক্ষেত্রে এমন চুরির ঘটনা ঘটছে বেশি।

কিন্তু এ সব দুষ্কর্ম ঠেকাতে রেল, আরপিএফ কী পদক্ষেপ করছে, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

(চলবে)

Pick pocket Long Distance Train Thief RPF
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy