হেকমত আলি। নিজস্ব চিত্র।
নির্দিষ্ট ‘কাজ-কারবার’ না থাকলেও এক দশকে তাঁর সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে এলাকার অনেকের সন্দেহ ছিল। স্কুলে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়ে প্রতারণা করার অভিযোগ শোনা গেলেও স্থানীয়দের একাংশের দাবি, দলের এক প্রভাবশালী নেতার ‘সম্পর্কিত ভাই’ হওয়ায় কেউ তাঁকে বিশেষ ‘ঘাঁটাতেন’ না। মঙ্গলকোটের ঝিলু ২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শেখ হেকমত আলিকে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ তাঁর পূর্ব নওয়াপাড়ার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করার পরেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন স্থানীয়েরা।
বুধবার এলাকায় যেতেই স্থানীয়েরা দাবি করেন, ২০১৩ সালে স্ত্রী ডালিয়া বিবি পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ার পরেই শান্ত স্বভাবের হেকমত আলির চালচলন পাল্টে গিয়েছিল। ২০১৮ সালে উপপ্রধান হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁর বেশভূষা ও আচার-আচরণ বদলে যায়। থাকতেন মাটির বাড়িতে। নির্দিষ্ট কোনও কাজ-কারবারও তাঁর ছিল না। অথচ, গত সাত-আট বছরের মধ্যে পাকা বাড়ি থেকে গাড়ি হতে দেখে, জমি-জমা বাড়তে দেখে অনেকের সন্দেহ হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, হেকমতের মেয়ে জিন্নাতুন্নেশা পারভিনের সঙ্গে ২০১৮ সালে রেজিস্ট্রি করে বীরভূমের কীর্ণাহার থানার সরডাঙা গ্রামের মহম্মদ গোলাম জামিমের বিয়ে হয়। গোলামের বাবা মহম্মদ বদরুদোজ্জার অভিযোগ, জামাই-সহ ১২ জনের প্রাথমিক স্কুলে চাকরি করে দেওয়ার মতো তাঁর ‘রাজনৈতিক প্রভাব’ রয়েছে বলে হেকমত দাবি করেছিলেন। হেকমতের অভিযোগ, ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ১২ জনের কাছ থেকে প্রাথমিক স্কুলে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রায় ৮৩ লক্ষ টাকা নেন ওই উপপ্রধান। সবাই প্রতারিত হয়েছেন।
এ দিন হেকমতের পড়শিদের একাংশ দাবি করেন, এলাকার কয়েকজনের কাছ থেকেও তিনি চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু চাকরি হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু পড়শির দাবি, “উপপ্রধান কী কাজ করেন, আমাদের জানা নেই। তবে মাঝেমধ্যেই দেখতাম গাড়ি করে তাঁর বাড়িতে লোকআসছেন। নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগের অফিস খুলেছিলেন বলে শুনেছিলাম। শাসক দলের নেতা হওয়ায় তাঁকে কেউ ঘাঁটাত না।’’
যদিও ধৃতের স্ত্রী এ দিন দাবি করেন, “কলকাতায় আমরা ভাড়া ঘরে থাকি। স্বামী কোনও অন্যায় কাজ করেননি। তাঁকে এখন ফাঁসানো হচ্ছে।’’ তবে স্বামীর পেশা নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি তিনি। উপপ্রধানের অবশ্য দাবি, “আমার পৈতৃক সম্পত্তি রয়েছে। নিজস্ব আয় রয়েছে। সেখান থেকেই সম্পত্তি বেড়েছে। কী ভাবে করেছি, তার যথেষ্ট প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে।’’
চক্রান্ত করে হেকমতকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন ধৃতের আত্মীয় তথা মঙ্গলকোট পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তৃণমূলের আব্দুল বাসেদ। তাঁর দাবি, “সামান্য জমি-জায়গা রয়েছে হেকমতের। চাষবাসই করতেন।’’ ঝিলু ২ পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের শিবানী মাঝি বলেন, “উপপ্রধান হওয়ার পরে বছর খানেক পঞ্চায়েতে এসেছিলেন উনি। তার পর থেকে অনিয়মিত ভাবে পঞ্চায়েতে আসেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy