Advertisement
১৮ মে ২০২৪
দখল-রাজের অভিযোগ কানে গিয়েছে খাস নবান্নেরও

জমি খাচ্ছে হাঙর-দল, রুখবে কে

গত মাসের ঘটনা। অফিসারেরা দেখেন, খাসজমির চারপাশ কাঁটাতারের বেড়ায় ঘেরা। গোটা কয়েক কাঁচা পাকা নির্মাণ দিব্যি উঠেছে।

বিতর্ক: এমন নির্মাণগুলি নিয়েই প্রশ্ন। রূপনারায়ণপুরে। ছবি: শৈলেন সরকার।

বিতর্ক: এমন নির্মাণগুলি নিয়েই প্রশ্ন। রূপনারায়ণপুরে। ছবি: শৈলেন সরকার।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০১:১৮
Share: Save:

ছিল খাসজমি। পরিমাণও নেহাত কম নয়। প্রায় ১৪ একর। সেখানে হওয়ার কথা ছিল পুরসভার জলপ্রকল্পের পাম্প হাউস, ভূগর্ভস্থ জলাধার। কুলটির ইস্কো বাইপাস লাগোয়া কামারবাঁধ এলাকার ওই জমিতে কাজ করতে গিয়ে চোখ কপালে ওঠে আসানসোল পুরসভার আধিকারিকদের!

গত মাসের ঘটনা। অফিসারেরা দেখেন, খাসজমির চারপাশ কাঁটাতারের বেড়ায় ঘেরা। গোটা কয়েক কাঁচা পাকা নির্মাণ দিব্যি উঠেছে। অবাধে চলছে চাষাবাদ। জল প্রকল্পের কাজ তো দূর, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের নির্দিষ্ট অনুমতিপত্র নিয়ে সেই জমির দখল নিতে গিয়ে উল্টে বিক্ষোভের মুখে পড়েন কর্মীরাই। পরে জানতে পারেন, স্থানীয় কিছু জমি মাফিয়া ওই জমি দখল করে বহুতল নির্মাণের ফন্দি এঁটেছিল। যদিও এ ক্ষেত্রে মাফিয়াদের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে ওই জমি দখলমুক্ত করে এখন সেখানে জলপ্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুরসভার মুখ্য বাস্তুকার সুকোমল মণ্ডল।

কুলটির এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। গোটা আসানসোল পুর-এলাকাতেই জমি-হাঙরদের দাপট বেড়েছে বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। এই হাঙরেরা কখনও গিলে খাচ্ছে সরকারি খাসজমি, কখনও বা বাস্তুভিটে। রাতারাতি জমির চরিত্র পরিবর্তন করে সেখানে নির্মাণ গড়ে তোলা এই হাঙর-দলের কাছে জলভাত বলে তদন্তে জেনেছে পুরসভা ও প্রশাসন।

ঠিক যেমন টের পেয়েছিলেন, আসানসোল শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুখেন্দু প্রকাশ শর্মা। এক সকালবেলা হঠাৎ খবর পান, তাঁর জমিতে কারা যেন বাড়ি করছে। তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে যিনি কাজ করাচ্ছেন তাঁর সঙ্গে কথা বলে আকাশ থেকে পড়েন তিনি। ওই ব্যক্তি তাঁকে জানান, এক দালাল মারফত নগদ টাকা দিয়ে জমিটি কিনেছেন তিনি। কিন্তু জমির মালিক তো তা বিক্রিই করেননি? সুখেন্দুবাবু পুরসভায় অভিযোগ জানান। তদন্তে পুরসভা জানতে পারে, নকল দলিল তৈরি করে বেআইনি ভাবে জমিটি বিক্রি করেছে কিছু জমি মাফিয়া। এর পরেই নকশা বাতিল করে বন্ধ করে দেওয়া হয় সেই নির্মাণকাজ। ভূমি সংস্কার দফতরও তদন্তে নামে। এর পরেও অবশ্য জমি ফিরে পাননি প্রকৃত মালিক। শেষে আদালতের দোরে গিয়েছেন।

সম্প্রতি পুরসভার ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডে, রানিগঞ্জে বিপিএল তালিকাভুক্তদের জন্য খাস জমি চিহ্নিত করে বহুতল নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছিলেন পুর-কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে বিক্ষোভ দেখায় এক দল জমি মাফিয়া। এতটাই তাদের স্পর্ধা! পরে অবশ্য পিছু হটতে হয়েছে তাদের।

এই শিল্প-তল্লাটে সরকারি জমি লুঠ করে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার এই বেআইনি কারবারের কথা পৌঁছেছে খোদ নবান্নেও। রহমতনগর লাগোয়া নবিনগর ও মুর্তাজানগর এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ সম্প্রতি প্লট করে বিক্রি করা হচ্ছে সরকারি খাস জমি—এই মর্মে চিঠি পাঠিয়েছেন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে।

ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রেই জানা যাচ্ছে, সালানপুর ব্লকের রূপনারায়ণপুরের জোড়খালের দু’পাড় দখল করে কল্যাণগ্রাম, দেশবন্ধুপার্ক, আছড়া, ডাঙ্গালপাড়া এলাকায় পাট্টা পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে জমি মাফিয়ারা বহিরাগতদের কাছে চড়া দামে জমি বেচছে। এলাকার কিছু জমি মাফিয়ার বিরুদ্ধে নবান্নে গিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন কালাঝড়িয়া, নবঘন্টি, নরসিংহবাঁধ এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, কালাঝরিয়ার কয়েক জন জমি মাফিয়া এলাকার সরকারি খাসজমি দখল করে এবং পুকুর বুজিয়ে ভুয়ো দলিল দস্তাবেজ বানিয়ে বেচে দিচ্ছে।

আশার কথা, নতুন জেলা গঠনের পরে এই অবৈধ কারবার বন্ধ করতে তৎপর হয়েছে প্রশাসন। আসানসোল মহকুমার ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তন্ময় রায় বলেন, ‘‘জেলাশাসকের নির্দেশে আমরা ধারাবাহিক অভিযান শুরু করেছি। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ব্লকের জমির দাগ ও খতিয়ান নম্বর মিলিয়ে খাস জমির অস্তিত্ব খুঁজে বের করে পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপও করা হচ্ছে।’’ পুরসভার মুখ্য বাস্তুকার সুকোমলবাবু বলেন, ‘‘ভূমি সংস্কার দফতরে আমরা নির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ জানিয়েছি। থানাতেও অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

land syndicate Asansol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE