Advertisement
E-Paper

ভোরে জ্বলে না আলো

বর্ধমান স্টেশনের ঢোকার মুখে একটি হাইমাস্ট আলো রয়েছে। তার কয়েকশো ফুট দূরে আরও একটি হাইমাস্ট আলো রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, মূল গেটের সামনে হাইমাস্ট আলো দু’দিন ধরে ‘আলো-ছায়া’তে ছিল।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২১
শহরের রাস্তায়। নি়জস্ব চিত্র

শহরের রাস্তায়। নি়জস্ব চিত্র

দৃশ্য এক: ঘুটঘুটে অন্ধকার। খবরের কাগজের এক বিক্রেতা জানালেন, ‘কী বলবেন। অন্ধকারে বিপদ তো রয়েইছে।’

দৃশ্য দুই: জরুরি দরকারে ট্রেন ধরতে বেরিয়েছেন এক প্রৌঢ়। পথে হোঁচট। মুহূর্তে আক্ষেপ, ‘উফ! আলোটাও জ্বালিয়ে রাখেনি’— দু’টি দৃশ্যই খোদ বর্ধমান শহরের। সময় ভোর সাড়ে চারটে থেকে পাঁচটা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ফি দিন ভোর-রাতে এমন ‘আঁধারবেলা’ দেখাটাই দস্তুর শহরের জিটি রোড লাগোয়া নানা এলাকার। অভিযোগ, আলো ফোটার অনেক আগে থেকেই শহরের বেশ কিছু এলাকায় নিভে যায় পথবাতি।

শুক্রবার ভোরে শহরের রাস্তায় বেরিয়ে দেখা গেল, জিটি রোডের উল্লাস মোড় থেকে নবাবহাট প্রায় ‘আলো-হীন’। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুলিশ লাইন থেকে উল্লাস পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার রাস্তাতে আগে টিমটিম করে আলো জ্বলত। রাস্তা সংস্কারের জন্য পুরসভা ত্রিফলা খুলে নেওয়ার ফলে ওই এলাকায় এখন অন্ধকার। স্থানীয় বাসিন্দা মিতালি সিংহ, ব্যবসায়ী সুনিত রায়দের ক্ষোভ, “সংস্কারের জন্য রাস্তার ধারে গর্ত করা হয়েছে। অথচ কোনও সতর্কবার্তা নেই। আবার ন্যূনতম আলোরও ব্যবস্থা করেনি পূর্ত দফতর।’’ গুডশেড রোডের মুখে চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে ঠিক বৃদ্ধা সবিতা গোস্বামীর ক্ষোভ, ‘‘রোজ প্রাতর্ভ্রমণে যাই। শীতের ভোরে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভয় লাগে।” পাশেই দাঁড়ানো নরেশ সিংহের দাবি, “পার্কাস মোড়ের হাইমাস্ট আলোটা জ্বলত না। তখন বেশ কয়েকবার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। টনক নড়লে ছ’মাস ধরে সকাল পর্যন্ত হাইমাস্ট আলোটা জ্বালিয়ে রাখে।” কার্জন গেট থেকে নবাবহাট মোড় পর্যন্তে বেশ কয়েকটা উচ্চ বাতিস্তম্ভ বা হাইমাস্ট আলো রয়েছে। তার মধ্যে তিনকোনিয়া ও গোলাপবাগ মোড়ের হাইমাস্ট কখন জ্বলে, কেউ জানে না। সংবাদপত্র বিক্রেতা বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর ক্ষোভ, ‘‘অন্ধকারে আমার এক সহকর্মী তো দুষ্কৃতী-খপ্পরে প়ড়েছিলেন।’’

বর্ধমান স্টেশনের ঢোকার মুখে একটি হাইমাস্ট আলো রয়েছে। তার কয়েকশো ফুট দূরে আরও একটি হাইমাস্ট আলো রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, মূল গেটের সামনে হাইমাস্ট আলো দু’দিন ধরে ‘আলো-ছায়া’তে ছিল। শুক্রবার থেকে তা ঠিক হয়ে সকাল ছ’টা পর্যন্ত জ্বলছে। পাশের হাইমাস্টটি অবশ্য ভোর সাড়ে চারটের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। রেল সূত্রে জানা যায়, ডিসেম্বর পর্যন্ত ভোর সাড়ে চারটে পর্যন্ত ওই হাইমাস্টটি চালানো হয়। জানুয়ারি থেকে আবার সময় পরিবর্তন হবে।

স্টেশনের মূল গেটের সামনে হকার, ফেরিওয়ালাদের ভিড় রয়েছে। রয়েছে ভাড়া-গাড়ির স্ট্যান্ড। এর ফলে স্টেশনে ঢুকতে সমস্যা হচ্ছে যাত্রীদের। রেলের বিভাগীয় প্যাসেঞ্জার কমিটির প্রাক্তন সদস্য আশিস রায় বলেন, “বর্ধমান স্টেশনের এটা চিরন্তন সমস্যা। রেল কর্তৃপক্ষ পরিদর্শনে এলে রাস্তা ফাঁকা হয়, তা না হলে রাস্তা অবরুদ্ধ।” যদিও রেল সুরক্ষা বাহিনী জানায়, স্টেশনের সামনের রাস্তা সাফ রাখার জন্য অভিযান চালানো হয়।

শহর ঘুরে দেখা গেল, জিটি রোড ও চৌধুরী বাজার-সহ নানা জায়গায় অন্তত একশোটি বাতিস্তম্ভের আলো ভোর সাড়ে চারটেই নিভে গিয়েছে। অথচ ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যেই রাস্তা সাফ হচ্ছে, লোকজন ছুটছেন স্টেশনের দিকে। রয়েছে আনাজের গাড়ি, ভ্যান, রিকশা-টোটো। সাফাই কর্মী ধীরেন মল্লভের কথায়, “আলো না থাকলে ভোরে কি রাস্তা সাফাই করা যায়?” ভ্যান চালক মনসুর শেখ কিংবা টোটো চালক শান্ত হাজরারা জানান, অনেক সময়েই লক্ষ করেন, পথচারী হোঁচট খাচ্ছেন।

বর্ধমানের পুর পারিষদ সদস্য (আলো) সাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘‘যে সংস্থা আলো জ্বালানোর দায়িত্বে রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে পুরপ্রধানের কাছে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।’’ পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত বলেন, ‘‘ওই সংস্থাকে ডেকে নিয়ম মেনে কাজ করতে রাজি কি না, জানতে চাওয়া হবে।’’

road light GT Road
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy