Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

প্রশিক্ষণের অভাব, ভরসা সেই ভিন্‌-জেলার ডুবুরিরা

জলপথে যাতায়াত এখনও বহু মানুষের ভরসা এ জেলায়। ভাগীরথী, বাঁকা, গুরজোয়ানি, বেহুলা, অজয়ের মতো নদী দিয়ে চলে নিত্য পারাপার। অথচ কোনও দুর্ঘটনা ঘটে গেলে উদ্ধারের পরিকাঠামো যে কতটা নড়বড়ে তা সামনে এসে গিয়েছে মাসখানেক আগে কালনায় নৌকাডুবির ঘটনায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০০:৫৬
Share: Save:

জলপথে যাতায়াত এখনও বহু মানুষের ভরসা এ জেলায়। ভাগীরথী, বাঁকা, গুরজোয়ানি, বেহুলা, অজয়ের মতো নদী দিয়ে চলে নিত্য পারাপার। অথচ কোনও দুর্ঘটনা ঘটে গেলে উদ্ধারের পরিকাঠামো যে কতটা নড়বড়ে তা সামনে এসে গিয়েছে মাসখানেক আগে কালনায় নৌকাডুবির ঘটনায়।

জানা গিয়েছে, জেলায় ডুবুরি আছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁদের আধুনিক প্রশিক্ষণ বা যন্ত্রপাতি কোনওটাই নেই। ফলে বড় বিপদ ঘটলে ভরসা সেই ভিন জেলার ডুবুরিরা। জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডুও বলেন, ‘‘ভাগীরথীর জলে নেমে কাজ করার মতো ডুবুরি এবং উন্নত সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। ফলে বড় ঘটনা ঘটে গেলে রাজ্য পুলিশের সাহায্য নিতেই হয়।’’

কালনা ফেরিঘাট থেকে নদিয়ার নৃসিংহপুর ঘাটে প্রতিদিনই হাজার খানেক মানুষ পারাপার করেন। মাস খানের আগেই মেলা দেখে ফেরার পথে ভুটভুটিতে হুড়োহুড়ি করে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠায় ভেঙে পড়ে নৌকাটি। তলিয়ে যান বহু যাত্রী। পরে ২০ জনের দেহ উদ্ধার হয় ভাগীরথী থেকে। তবে এখনও পর্যন্ত ভাঙা নৌকাটির খোঁজ মেলেনি। ঘটনার পরের দিন থেকেই উদ্ধারকাজে গাফিলতি, দেরির অভিযোগ তুলে ক্ষোভ দেখান দু’পাড়ের বাসিন্দারা। ডুবুরিদের খোঁজ পড়তেই জানা যায়, জেলার সিভিল ডিফেন্সের খাতায় কলমে প্রশিক্ষণ নেওয়া ডুবুরি থাকলেও জলে নেমে কাজ করার ব্যাপারে তেমন অভিজ্ঞতা নেই তাঁদের। অভাব রয়েছে উন্নত যন্ত্রপাতিরও। বাধ্য হয়ে ঘটনার পরের দিন সকাল ন’টা নাগাদ মহকুমা প্রশাসন কালনা খেয়াঘাটে নদিয়া জেলার একটি ডুবুরি দলকে নিয়ে আসে। পিঠে অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে নদীর বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি শুরু করে দলটি। যদিও বেশীরভাগ দেহ উদ্ধার করেন জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা দলের সদস্যেরা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ১০ জন ‘ডিপ ড্রাইভার’ ডুবুরি রয়েছেন। ৪০ ফুট নীচে নেমে কাজ করতে পারার জন্য ২০১৫ সালে কলকাতায় একটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাঁদের। এ ছাড়াও দশ ফুট জলের তলায় কাজ করতে পারেন এমন ডুবুরি রয়েছেন ৫০ জনেরও বেশি। তাহলে বিপদে তাঁদের কাজে লাগানো হল না কেন?

জেলার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কালনা খেয়াঘাটে যেখানে ঘটনাটি ঘটে সেখানে জলের চাপ অত্যন্ত বেশি। ভাগীরথীর ওই অংশের গভীরতাও ৪০ ফুটের বেশি। ফলে অত্যাধুনিক যন্ত্র-সহ উচ্চপ্রশিক্ষিত ডুবুরি না নামালে বিপদ বাড়তে পারত। তাই জেলার ডুবুরিদের জলে নামানোর ঝুঁকি নেওয়া হয়নি।’’ জেলা সিভিল ডিফেন্সের এক সিনিয়র স্টাফ অফিসার জানান, জলে উদ্ধার কাজ চালানোর জন্য জেলায় দুটি টিউবার সেট (জলের তলায় নামার যন্ত্রাংশ) রয়েছে। ওই যন্ত্রাংশ যাতে ঠিকঠাক ডুবুরিরা ব্যবহার করতে পারেন সে জন্য আসানসোলে ২৩ মে থেকে শুরু হয়েছে একটি প্রশিক্ষণ শিবির।

যদিও আধিকারিকদের আশ্বাসে ভরসা পাচ্ছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, সরস্বতী পুজো, মহিষমর্দিনী উৎসবেও হাজার হাজার যাত্রী পারাপার চলে। ঝুঁকিও থাকে। সে সময় যদি আবারও কোনও দুর্ঘটনা হয় তখন কী হবে? ভিন জেলা থেকে ডুবুরি না আসা পর্যন্ত চুপ করে বসে থাকা ছাড়া কী উপায় নেই— এ প্রশ্নও তোলেন তাঁরা। কালনা শহরের বাসিন্দা কমল সরকার জানান, উৎসবের সময় প্রচুর ভিড় থাকে। যে কোন সময় মাঝ ভাগীরথীতে ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। উদ্ধার কাজের পরিকাঠামো যদি এমনটাই তাহলে মুশকিল। পরিকাঠামোর দুর্বলতার কথা স্বীকার করেছেন কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সম্প্রতি কালনা খেয়াঘাটে নৌকাডুবির ঘটনা আমাদের শিক্ষা দিয়েছে। ডুবুরি-সহ খেয়াঘাটে উদ্ধার কাজের পরিকাঠামো মজবুত করার চেষ্টা করব।’’ মাস দুয়েক আগে হাটকালনা এলাকায় একই পরিবারের দুই কিশোর স্নান করতে নেমে তলিয়ে যায়। তখনও ডুবুরি খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছিল বলে জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Diver Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE