প্রতীকী ছবি।
তিন তলা বাড়ির ড্রয়িং-রুম থেকে উদ্ধার হয় সত্তর বছরের বৃদ্ধের রক্তাক্ত দেহ। বৃহস্পতিবার রাতে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে ওই খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশের দাবি, তদন্ত যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে সন্দেহের তির ওই বাড়ির পরিচারিকার দিকেই। শনিবার দিনভর ওই মহিলাকে জেরাও করে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে বাড়িতে লুঠের ছক।
বৃহস্পতিবার রাতে সিটি সেন্টারের অবনীন্দ্র বীথির বাড়িতে খুন হন একটি বিমা সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সত্যরঞ্জন খাঁড়া। ওই ঘটনায় তদন্তকারীরা একটি সূত্র মারফত ডিভিসি মোড় এলাকার বাসিন্দা, ওই বাড়ির পরিচারিকার কথা জানতে পারে। শনিবার সকাল থেকে তাঁকে জেরা করা হয়। পুলিশের দাবি, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ওই পরিচারিকার কথাবার্তায় অসঙ্গতি মিলেছে।
স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে বাড়িতে প্রায় একাই থাকতেন ওই বৃদ্ধ। ছেলে সুমিতবাবু ওরফে বাপির গাড়ি কেনা-বেচার ব্যবসা রয়েছে। কিন্তু তিনি প্রায়ই বাড়িতে থাকেন না। বৃহস্পতিবারও বাড়িতে একা ছিলেন সত্যরঞ্জনবাবু। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ রাঁধুনি আশিস নগরের বাসিন্দা সুচরিতা মণ্ডল রান্না করে খাবার দিয়ে বেরিয়ে যান। পুলিশকে শনিবার তিনি জানান, শরীর ভাল ছিল না বলে রাতে হালকা রান্না করতে বলেন সত্যরঞ্জনবাবু। রাতে অভিনন্দন ঠাকুর নামে এক যুবক তাঁর কাছে শুতে আসতেন। তিনিই এসে বৃদ্ধের নিথর দেহ দেখতে পেয়ে পড়শিদের খবর দেন। পুলিশ জানায়, দু’জনকে নানা বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও সন্দেহজনক কিছু মেলেনি।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করেছিল, এই খুনের সঙ্গে কোনও ভাবে বৃদ্ধের ছেলের ব্যবসাগত কোনও শত্রুতা থাকতে পারে। কারণ, কিছু দিন আগে গাড়ি চুরি চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় মহম্মদ সেলিম নামে এক জনকে। পুলিশ জানায়, ওই ব্যক্তি জেরায় দাবি করেন, তাঁকে ফাঁসিয়েছেন ‘বাপি’ নামে এক ব্যক্তি। ‘বাপি’— সুমিতবাবুর সঙ্গে নামগত এই সাদৃশ্যের কারণেই পুলিশের এমন ধারণা হয়।
কিন্তু তদন্তকারীরা জানান, শুক্রবার রাতেই এক আত্মীয়ের মাধ্যমে সুমিত ওরফে বাপিকে ডেকে পাঠানো হয়। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনও অসঙ্গতি মেলেনি। এর পরে শনিবার আসানসোল জেলা হাসাপাতালে তাঁর হাতে বাবার দেহও তুলে দেওয়া হয়।
এর পরেই ওি পরিচারিকার দিকে সন্দেহের তির যায়। তদন্তকারীদের অনুমান, ওই রাতে দু’জন দুষ্কৃতী ঢুকেছিল বাড়িতে। লুঠের উদ্দেশ্যেই তারা এসেছিল। ওই পরিচারিকার কাছেই বাড়ি সম্পর্কে আগাম তথ্য পেয়েছিল তারা। তবে বেশ কিছু বিষয় এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। কী তা? প্রথমত, ওই পরিচারিকা দুষ্কৃতীদের সঙ্গে এসেছিলেন কি না। ওই পরিচারিকাকে দেখেই কি বৃদ্ধ দরজা খুলে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, ঠিক কী লুঠ হয়েছে। তৃতীয়ত, দুষ্কৃতীদের আদৌ খুনের উদ্দেশ্য ছিল, না কি শুধু লুঠ করতেই আসে তারা। তদন্তকারী এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ঠিক পথেই আমরা এগোচ্ছি। বেশ কিছু ‘মিসিং লিঙ্ক’ রয়েছে। সেগুলির পেয়ে গেলেই খুনের কিনারা হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy