Advertisement
E-Paper

তিন দফায় মার খেয়ে রণেভঙ্গ বিজেপি-র

বেলা ১০টা নাগাদ দাঁইহাট বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি গাড়িতে চেপে মনোনয়ন তুলতে আসছিলেন সিঙ্গি, মুলটি পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রার্থীরা। বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি ঢুকতেই বিজেপি কর্মীরা গাড়ি থেকে বেরিয়ে স্লোগান তুলে ব্লক অফিসের দিকে এগিয়ে যেতেই শুরু হয় হামলা।

সুচন্দ্রা দে

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৫৪
রাস্তায় পড়ে কার্তুজ। নিজস্ব চিত্র

রাস্তায় পড়ে কার্তুজ। নিজস্ব চিত্র

আর যেন ‘মাছি’ গলতে না পারে, তৃণমূলের নেতৃত্বের তরফে দলীয় কর্মীদের কাছে নির্দেশ গিয়েছে বুধবার সন্ধ্যায়। তার ঠিক পরের দিন মনোয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হল বিজেপি। বৃহস্পতিবার দাঁইহাটে কাটোয়া ২ ব্লক অফিসের ঠিক বাইরে দফায় দফায় বিজেপি কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। চলল গুলিও। বিজেপি-র অভিযোগ, মনোনয়ন আটকাতে শাসকদলের কর্মী-সমর্থকেরা লাঠি, বাঁশ নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন। তাঁরাই একাধিক বার হামলা চালান। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, বিজেপি-র লোকজনই সশস্ত্র মিছিল করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

এ দিন সকাল থেকেই ব্লক অফিসের সামনে ভিড় জমাচ্ছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। অফিস থেকে ৫০০ মিটার দূরে দেওয়ানগঞ্জ মোড়ে বিজেপি-র পার্টি অফিসেও হাজির হয়েছিলেন কর্মীরা। দু’তরফের হাতেই ছিল বাঁশ ও লাঠি। দলীয় পতাকাও বাঁধা ছিল এক হাত লম্বা বাঁশের টুকরোর গায়ে। ব্লক অফিসের সামনে ক্যাম্প করে বসে থাকতে দেখা যায় দাঁইহাটের পুরপ্রধান-সহ এই ব্লকের একাধিক তৃণমূল নেতাকে।

বেলা ১০টা নাগাদ দাঁইহাট বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি গাড়িতে চেপে মনোনয়ন তুলতে আসছিলেন সিঙ্গি, মুলটি পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রার্থীরা। বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি ঢুকতেই বিজেপি কর্মীরা গাড়ি থেকে বেরিয়ে স্লোগান তুলে ব্লক অফিসের দিকে এগিয়ে যেতেই শুরু হয় হামলা। বিজেপি-র অভিযোগ, মুলটির বিকাশ মণ্ডলের পরিচয়পত্র-সহ নানা নথিপত্র কেড়ে নিয়ে তাঁকে মারধর করা হয়। রেহাই পাননি সঙ্গে থাকা সিঙ্গির নিধিরাম সর্দারও। ভাঙচুর করা হয় গাড়িটিও। জখম অবস্থায় তাঁরা গাড়ি নিয়ে উল্টো দিকে চলে যান। পরে নোয়াপাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা করান তাঁরা।

এর পরেই বেলা ১২টা নাগাদ ফের বাসস্ট্যান্ড মোড় থেকে ব্লকে ঢোকার চেষ্টা করেন মালঞ্চা গ্রামের পাঁচ বিজেপি কর্মী। অঙিযোগ, ওই গ্রামেরই ২৭৮ নম্বর সংসদের বিজেপি প্রার্থী দীপা মাজির কাছ থেকে নথিপত্র সব কেড়ে নিতে চাওয়া হয়। তিনি প্রতিবাদ করায় তাঁর স্বামী আশিস মাজির কাছ থেকে নথিপত্র জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়। বিজেপি-র দাবি, তৃণমূলের বাহিনী মেরে হাত ভেঙে দেয় তাদের কর্মী কৃষ্ণ মাজির। আঘাত পান আরও দুই কর্মী সুজল মাজি ও বীরবল মাজি।

ঘটনার এখানেই শেষ নয়। দুপুর দেড়টা নাগাদ দলীয় অফিস থেকে প্রায় ৭০০ কর্মী নিয়ে মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিতে এগোচ্ছিলেন বিজেপি-র জেলা সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষ-সহ একাধিক নেতা। উল্টো দিক থেকে তৃণমূল কর্মীদের জটলাও এগিয়ে আসছিল। মুখোমুখি হওয়ার আগেই অবশ্য দু’তরফকে থামিয়ে দেয় পুলিশ। দু’দলের নেতাদেরই বোঝান পুলিশের কর্তারা। হঠাৎই গুলির শব্দ শোনা যায়। বিজেপি-র দাবি, শাসকদলের জটলার ভিতর থেকে শূন্যে দু’রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছে। শেষে এ দিনের মতো মনোনয়ন জমা না দিয়ে ই ফিরে যান বিজেপি নেতা-কর্মীরা। শাসকদলের কিছু প্রার্থীকে অবশ্য এর পরেও মনোনয়ন জমা দিতে দেখা যায়। গ্রাম পঞ্চায়েতে ৮৩টি এবং পঞ্চায়েত সমিতির ১৫টি আসনে মনোনয়ন জমা দেন তৃণমূল প্রার্থীরা। কৃষ্ণবাবুর বক্তব্য, ‘‘এ দিনের ঘটনা থেকেই স্পষ্ট, বোমা-গুলি-লাঠি দিয়ে ভয় দেখিয়ে আমাদের মনোনয়ন তুলতে না দেওয়ার ছক কষেছে তৃণমূল। তবে মনোনয়ন আমরা তুলবই। এ ভাবে বিজেপিকে আটকানো যাবে না।’’

অন্য দিকে, জটলায় গুলি চলার অভিযোগ অস্বীকার করে বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা গুলি ছুড়েছে। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বিজেপি সশস্ত্র মিছিল করল কেন? দম থাকলে ওদের প্রার্থী নিজে এসে মনোনয়ন তুলুক।’’ এ দিন বিকেল পর্যন্ত দু’পক্ষের কেউই অভিযোগ দায়ের করেনি বলে জানায় কাটোয়া থানার পুলিশ।

পরিস্থিতি শান্ত করতে সন্ধ্যায় কাটোয়া থানায় দুই দলকে নিয়ে বৈঠক করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীন) রাজ মুখোপাধ্যায়। মনোনয়ন দিতে না পারার পর বিজেপির জেলা সভাপতি কৃষ্ণ বাবু বলেন, ‘‘পুলিশের কথায় বৈঠকে রাজি হয়েছি আমরা।’’

Panchayat Elections 2018 Violence Political Clash TMC BJP পঞ্চায়েত নির্বাচন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy