ফাইল চিত্র।
অটো বনাম টোটোর লড়াই। প্রতিদিন দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা লেগেই আছে দুর্গাপুরে। তার জেরে বিপাকে পড়েন যাত্রীরা।
দুর্গাপুর শহরে পরিবহণ দফতরের অনুমোদন প্রাপ্ত ১,২৮৪টি অটো চলে বিভিন্ন রুটে। অনুমোদন পাওয়ার দোরগোড়ায় আরও ৩৯টি। পক্ষান্তরে, পুরসভা অনুমোদিত টোটোর সংখ্যা ৭৫৯টি। সংখ্যায় প্রায় অর্ধেক হলেও টোটো তাঁদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ অটোচালকদের।
কী ভাবে? অটোচালকেরা জানাচ্ছেন, বেনাচিতির ভিড়িঙ্গি থেকে প্রান্তিকা রুটে অটোর সংখ্যা ১৪। সেখানে টোটো চলে প্রায় ৭০টি। তার উপরে গড়ে ১০ মিনিট অন্তর মিনিবাস তো আছেই! যাত্রীর অভাবে ওই রুটে অটোর এখন আর দেখাই মেলে না। আইএনটিটিইউসি প্রভাবিত ‘দুর্গাপুর সিএনজি অটোরিকশা অপারেটর্স ইউনিয়ন’ এর সম্পাদক প্রদীপ বিশ্বাসের মন্তব্য, ‘‘চালানোর খরচ ওঠে না। তাই অটো পরিষেবা প্রায় বন্ধ ওই রুটে। শহরের বহু রুটেই টোটোর দাপটে নাভিশ্বাস দশা অটোচালকদের।’’
অটো চালকদের দাবি, নির্দিষ্ট রুটেই তাঁদের গাড়ি চালাতে হয়। কিন্তু টোটোর ক্ষেত্রে সে সবের বালাই নেই। অটোর রুটেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে টোটো। ফলে, তাঁদের রুজি-রুটিতে টান পড়ছে। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘যে রুটে অটো চলে না, তেমন নতুন রুটে টোটো চলুক। তা হলে যাত্রী ভাগের প্রশ্ন উঠবে না। দু’পক্ষই লাভবান হবে। তেমনি সাধারণ যাত্রীদেরও সুবিধা হবে।’’ কাল, সোমবার পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসকের কাছে সমস্যার সমাধানে দরবার করতে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
দুর্গাপুরে টোটো চালু হয় ২০১৩ সালের শেষ দিকে। সাধারণ রিকশার তুলনায় গতিশীল ও ব্যাটারি চালিত এই যান দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে শিল্প-শহরে। এক বার ব্যাটারি চার্জ দিতে গড়ে খরচ ৩০ টাকা। চলে প্রায় ৭৫-৮০ কিলোমিটার। ফলে, বেশ লাভজনকও। তাই অটোর থেকে এমনকী, সাধারণ রিকশার থেকেও ভাড়া কম। দ্রুত অটোর ব্যবসায় ভাগ বসায় টোটো। অটো লম্বা রুটে নির্দিষ্ট পথে চলে। রিজার্ভ করলে চড়া ভাড়া দিতে হয়। অথচ, টোটো যে কোনও গন্তব্যে কম ভাড়ায় পৌঁছে দেয়।
টোটো চালকদের অভিযোগ, টোটোর রমরমা দেখে অটো চালকদের একাংশ নানা ভাবে তাঁদের বাধা দিতে শুরু করেন। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অটোয় না উঠে টোটোয় চড়ায় এক মহিলার পিছু নিয়ে তাঁর বাড়ি গিয়ে হাঙ্গামা পাকানোর অভিযোগ ওঠে কয়েকজন অটো চালকের বিরুদ্ধে। তাঁদের দু’জনকে আটক করায় পুলিশ ফাঁড়িতে অটো নিয়ে গিয়ে বিক্ষোভও দেখান অটো চালকেরা। পাল্টা বিক্ষোভ করেন টোটো চালকেরাও।
যাত্রী নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে এমন অশান্তি লেগেই থাকে। গত ২৮ অগস্ট বেনাচিতিতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচ জন জখম হন। রাস্তায় বেরিয়ে পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফল ভুগতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। টোটো চালকদের সংগঠন আইএনটিটিইউসি প্রভাবিত ‘দুর্গাপুর ই-রিকশা ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’-এর সম্পাদক অশোক বড়ুয়া বলেন, ‘‘অটোর মতো আমাদের কোনও নির্দিষ্ট রুট নেই। যাত্রীর অভাবে টোটো চালকদের তাই বিভিন্ন রুটে যেতে হয়।’’
টোটোর বাড়বাড়ন্ত রুখতে টোটো বিক্রির উপরে প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ২০১৬ সালে। তার পরেও যে নতুন নতুন টোটো শহরের রাস্তায় নামছে তার প্রমাণও মিলেছে বলে প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পুরসভা টিআই (টেম্পোরারি আইডেন্টিফিকেশন) নম্বর দিয়ে ৭৫৯টি টোটো নথিভুক্ত করেছে। অথচ, শহরে আরও শ’তিনেক টোটো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। উল্টো দিকে, অনুমোদনহীন এমন কয়েকশো অটোও রুট ছাড়াই চলাচল করছে বলে অভিযোগ।
সব মিলিয়ে অটো-টোটোর দ্বন্দ্ব ভবিষ্যতে আরও বাড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন যাত্রীরা। বেসরকারি গৃহঋণ সংস্থার কর্মী শুভজিৎ ঘোযের কথায়, ‘‘অটো ও টোটো—দু’পক্ষকেই নিয়ম মেনে চলতে হবে। না হলে ভুগতে হবে সাধারণ যাত্রীদের।’’
বেআইনি অটো ও টোটো ধরতে প্রশাসন শীঘ্রই অভিযান চালাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) শঙ্খ সাঁতরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy