Advertisement
E-Paper

মোবাইল জমা দিলে বর্ধমান মেডিক্যালে মেলে ট্রলি

হাসপাতালে গেলে কোলে করে, হাঁটিয়ে স্যালাইনের বোতল হাতে রোগীকে সিটি স্ক্যান, এমআরআই করাতে, ভর্তির জন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য আকছার চোখে পড়ে জনতার।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৯ ০১:১৮
ভোগান্তি: ট্রলি না পেয়ে রোগীদের নিয়ে এ ভাবেই যেতে হয় অনেক সময়ে। বর্ধমান মেডিক্যালে। ছবি: উদিত সিংহ

ভোগান্তি: ট্রলি না পেয়ে রোগীদের নিয়ে এ ভাবেই যেতে হয় অনেক সময়ে। বর্ধমান মেডিক্যালে। ছবি: উদিত সিংহ

ট্রলি পেতে গেলে জমা রাখতে হয় ভোটার কার্ড, মোবাইলের মতো ব্যক্তিগত জিনিসপত্র! কখনও বা দেখা যায়, ট্রলি না মেলায় পরিজনেরা রোগীকে কোলে করে বা হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। স্যালাইনের বোতল হাতে ধরা থাকছে। রোগীর পরিজনদের অভিযোগ ট্রলি-অব্যবস্থার এমন ছবিই দেখা যায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।

হাসপাতালে গিয়ে দু’টি ঘটনার কথা জানা গেল—

এক: ট্রাক্টরের ধাক্কায় গুরুতর জখম কাটোয়ার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী স্বাগতা সিংহরায় বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাঁর ভাই সম্রাট জানান, সিটি স্ক্যান করানোর জন্য দীর্ঘক্ষণ ট্রলির খোঁজ করতে হয়। শেষমেশ ট্রলি মেলে ভোটার কার্ড জমা দিয়ে। ট্রলি জরুরি বিভাগে ফেরত দেওয়ার পরে কার্ডটি মেলে।

দুই: বীরভূমের পাড়ুইয়ের দাসনগর থেকে মা’কে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন দুর্গা সরেন। জরুরি বিভাগ থেকে রাধারানি ওয়ার্ডে ভর্তি করানোর কথা জানান চিকিৎসকেরা। এ জন্য মোবাইল জমা দিয়ে তবে মেলে ট্রলি, জানান দুর্গাদেবী।

এ ছাড়া হাসপাতালে গেলে কোলে করে, হাঁটিয়ে স্যালাইনের বোতল হাতে রোগীকে সিটি স্ক্যান, এমআরআই করাতে, ভর্তির জন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য আকছার চোখে পড়ে জনতার।

অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, জরুরি বিভাগে রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যায় ট্রলি ও ট্রলি পিছু এক জন করে কর্মী রয়েছেন। কিন্তু পরিজনদের অভিজ্ঞতা, জরুরি বিভাগের দু’টি ঘরে ‘তালা বন্ধ’ থাকে ট্রলিগুলি। তা বার করতে হলেই ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, মোবাইল জমা দিতে হয় ট্রলির দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কাছে, অভিযোগ পরিজনদের। নিদেন পক্ষে ভর্তির কাগজও জমা রাখতে হয়। মোবাইল জমা রাখার অভিযোগ তুলে পাড়ুইয়ের দুর্গাদেবী বলেন, ‘‘মোবাইল রেখে ট্রলি নিয়ে গিয়ে মা’কে ভর্তি করেছি। ট্রলি ফেরত দেওয়ার পরে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে ফোন করেছেন।’’

পরিজনদের অভিযোগ, রোগীর সঙ্গে যদি এক জন থাকেন, তা হলে তাঁর একার পক্ষে ট্রলি ফেরত দেওয়া পর্যন্ত নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। অথচ ট্রলি পিছু যে কর্মী থাকেন, সহজে তাঁদের দেখা মেলে না। যদিও ওই কর্মীদের দেখা পাওয়ার ‘পথও’ রয়েছে। আউশগ্রামের বৃদ্ধ সবুজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, ‘‘অসুস্থ স্ত্রীকে জরুরি বিভাগ থেকে রাধারানি ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, মোবাইল ছিল না বলে ভর্তির নথি দিয়ে ট্রলি মেলে। ৫০ টাকা দেওয়ার পরে ট্রলি টানার লোক পাই। রাধারানি ওয়ার্ডে স্ত্রীকে নামিয়ে ট্রলি ফেরত দিয়ে নথি নিয়ে আসি। তার পরে ভর্তি করানো হয়।’’ এই পরিস্থিতিতে ট্রলি-অব্যবস্থায় দীর্ঘক্ষণ সময় নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ সবুজবাবুদের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন আগে এই অব্যবস্থার ছবি হাসপাতালের সুপার প্রবীর সেনগুপ্ত, ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহার নজরে পড়ে। জরুরি বিভাগের ভিতরে কর্মীদের বসার জায়গায় গিয়ে তাঁরা চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন। হাসপাতালের রোগী কল্যাণসমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথেরও ক্ষোভ, ‘‘ট্রলির জন্য রোগীর পরিজনদের ব্যক্তিগত নথি, মোবাইল জমা রাখতে হচ্ছে শুনে অবাক লাগছে। এটা নীতি হতে পারে না।’’ সুপার বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এমন অব্যবস্থা চলতে পারে না। এই পরিস্থিতি অবশ্যই বন্ধ করা হবে।’’

Burdwan Medical College And Hospital Patients
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy