Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Corona

কোভিড ওয়ার্ডে ‘অবাধ’ যাতায়াত, প্রশ্ন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে

করোনার প্রথম পর্বেও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘অব্যবস্থা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ‘কোভিড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-এর সদস্যেরা।

‘সারি’ ওয়ার্ডে যাওয়া-আসা।

‘সারি’ ওয়ার্ডে যাওয়া-আসা। ছবি: উদিত সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৩২
Share: Save:

একই ভবনে উপরের নানা তলায় রয়েছে মেডিসিন, চোখ-নাক-গলা চিকিৎসার বিভাগ। আর নীচের তলায় পাশাপাশি রয়েছে কোভিড-ওয়ার্ড ও ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস’ বা ‘সারি’ ওয়ার্ড। অভিযোগ, অবাধে ওই দুই ওয়ার্ড পেরিয়ে উপরে যাতায়াত করছেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসা লোকজন। এমনকি, কোভিড-ওয়ার্ডেও কোনও বাধা ছাড়া, রোগীর পাশে পরিজনেরা বসে থাকছেন বলে অভিযোগ। পরিজনেদের আবার পাল্টা অভিযোগ, ওয়ার্ডে কার্যত কোনও কর্মী নেই। অক্সিজেনের নল লাগানোর কাজটাও তাঁদেরই করতে হচ্ছে।

করোনার প্রথম পর্বেও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘অব্যবস্থা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ‘কোভিড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-এর সদস্যেরা। ক্ষোভ জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতরও। রাজ্যের ‘কোভিড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের’ এক সদস্যের কথায়, ‘‘জেলা স্তরে হাসপাতালগুলি পরিদর্শন শুরু হয়েছে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও পরিদর্শন করা হয়েছে।’’ ইতিমধ্যে জেলাশাসক প্রিয়ঙ্কা সিংলাও কোভিড হাসপাতালগুলি পরিদর্শন করেছেন।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার প্রবীর সেনগুপ্ত করোনায় আক্রান্ত। তিনি ফোনে বলেন, ‘‘সমস্যা একটা হচ্ছে। কোভিড ওয়ার্ডটি রাধারানি ওয়ার্ডে পাঠানোর ভাবনা চলছে। পুরো ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ হয়ে গেলে আর অসুবিধা হবে না।’’ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল বলেন, ‘‘নিজেরা সচেতন না হলে কী করে হবে? ওয়ার্ডে রক্ষীর বিষয়ে কথা বলছি। তবে কোভিড ওয়ার্ডের ভিতর ঢুকে পরিজনেরা রোগীর চিকিৎসায় সাহায্য করছেন, এটা ঠিক নয়। পিপিই কিট ছাড়া, ভিতরে ঢোকার অনুমতিই নেই। তা সত্ত্বেও কেউ ঢুকলে তাঁকে পুলিশের ধরার কথা।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনার প্রথম পর্বে জরুরি বিভাগের সামনে আট তলা ভবনের ভিতরে ‘সারি’ ওয়ার্ড করা হয়েছিল। সেখানে লিফট্‌ না থাকায় সমস্যা হয়। এক জুনিয়র চিকিৎসক সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিয়ো-বার্তা (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) দিয়ে ওই ওয়ার্ডের পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার পরেই ওয়ার্ডটি নতুন ভবনে সরানো হয়। এ বারও সেখানেই ‘সারি’ ওয়ার্ড গড়া হয়েছে। হাসপাতালের দাবি, সপ্তাহখানেক ধরে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। ৮০ শয্যার ‘সারি’ ওয়ার্ডে ৬০ জন ভর্তি রয়েছেন। কোভিড ওয়ার্ডে ৬০টি শয্যায় ৫০ জন ভর্তি রয়েছেন।

সোমবারও বর্ধমান শহরে ১৬০ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। জেলায় আক্রান্ত ৪২৫ জন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, তার পরেও সচেতনতা বাড়ছে না। কোভিড-ওয়ার্ডের সামনের জায়গা ঘেরা। অথচ, সেখানেও পরিজনরা ঢুকে জামা-কাপড় শুকোতে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। ভিতরে ঢুকে গল্পও করছেন অনেকে। ডাক্তারেরাও অনেক সময় পিপিই কিট ছাড়া ঢুকছেন বলে অভিযোগ। ‘সারি’ ওয়ার্ডে এক পরিবারের দু’জন ভর্তি হয়েছেন। ওই পরিবারের এক তরুণীর দাবি, ‘‘আমাদের পালা করে রোগীর কাছে থাকতে হচ্ছে। অক্সিজেন, নেবুলাইজ়ারও দিতে হচ্ছে।’’ বর্ধমানের রাজগঞ্জের এক জন সারি ওয়ার্ডে ভর্তি। তাঁর মেয়েরও দাবি, ‘‘অরাজকতা চলছে। নেবুলাইজ়ার আমাদের লাগাতে হচ্ছে। বাড়ির লোক না থাকলে ডাক্তার রোগীই দেখছেন না। সংক্রমণ ছড়াচ্ছে প্রতি পদে।’’ এ ছাড়া, স্যাঁতসেঁতে ঘর, বাইরে আবর্জনা জমে থাকা, মশা-মাছির উৎপাতের অভিযোগ রয়েছ।

আগেও দুই বর্ধমানের জন্য গঠিত ‘কোভিড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-এর সদস্যেরা ‘সারি’ ওয়ার্ড নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য ভবনে পাঠানো রিপোর্টে তাঁরা জানিয়েছিলেন, উপসর্গ রয়েছে অথচ করোনা-নমুনার রিপোর্ট আসেনি, এমন রোগীদের একেবারে ‘আইসোলেশনে’ রাখার জন্যই ‘সারি’ ওয়ার্ডের ভাবনা। অথচ, হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডে অবাধে যাতায়াত চলছে। সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনাও বাড়ছে। এ বারও একই অভিযোগ উঠেছে। ওই কমিটির কো-অর্ডিনেটর, চিকিৎসক সমরেন্দ্র বসু বলেন, ‘‘বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কোভিড-ওয়ার্ডের বিষয়টি আমরা নজরে নিয়ে আসছি। স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশ দিলেই সরেজমিন পরিদর্শন করে আসব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Burdwan Medical College
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE