Advertisement
E-Paper

চৈতালির আশ্রয়ে নিশ্চিন্তেই লাট্টুর দল

সকাল হলেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েন তিনি। গুচ্ছের রান্না রয়েছে যে! ও দিকে ঘেউ-ঘেউ ডুকরে উঠলেই রান্নাঘর থেকে শোনা যায়, ‘এই হয়ে এল। একটু সবুর কর গুবলু, লাট্টু..।

অর্পিতা মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৭ ০০:২৬
যত্নে: ব্যবস্থা মধ্যাহ্নভোজের। দুর্গাপুরের বিবেকানন্দ রোডে। নিজস্ব চিত্র

যত্নে: ব্যবস্থা মধ্যাহ্নভোজের। দুর্গাপুরের বিবেকানন্দ রোডে। নিজস্ব চিত্র

সকাল হলেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েন তিনি। গুচ্ছের রান্না রয়েছে যে! ও দিকে ঘেউ-ঘেউ ডুকরে উঠলেই রান্নাঘর থেকে শোনা যায়, ‘এই হয়ে এল। একটু সবুর কর গুবলু, লাট্টু..।’— গত পাঁচ বছর ধরে এটাই রুটিন দুর্গাপুরের বিবেকানন্দ রোডের বাসিন্দা চৈতালি রায়ের। রান্না হয়ে গেলেই চৈতালিদেবীর কুকুর সোনু-গুবলু, বেড়াল লাট্টু-কুট্টু, পাখি আর ঘোড়ার জন্য পাত পড়ে রায়বাড়িতে।

চৈতালিদেবীর পোষ্যের সংসারে রয়েছে ২২টি কুকুর, ৫টি বেড়াল, ১৬টি বদ্রি পাখি, একটি ঘোড়া। তাঁর এই সংসারে সব সময় পাশে থেকেছেন দুই মেয়ে আর স্বামী দীপ্তবাবুকে। এই পথের প্রাণীগুলিকে দেখভালের জন্য চৈতালিদেবী তৈরি করে ফেলেছেন একটি সংস্থাও। নাম, ‘আশ্রয়।’

পশু-পাখিকে আশ্রয় দেওয়ার অভ্যাসটা অবশ্য এক দিনে হয়নি। বছর ৩৬-র চৈতালিদেবী জানান, বিয়ের পরে থেকেই পাড়ার কুকুর, বেড়ালদের সযত্নে লালন করতেন তিনি। পরে ডিএসপি-র সিনিয়র টেকনিশিয়ন দীপ্তবাবু বড় কোয়ার্টার পাওয়ার পরে পশু-পাখিদের নিজের আশ্রয়েই নিয়ে আসতে শুরু করেন।

কী রকম? পাড়ার বাসিন্দাদের একাংশ জানান, কোথাও কুকুরের পা ভাঙা, কারও বাড়ি থেকে বুড়ো কোনও বিদেশি কুকুরকে রাস্তা ফেলে দেওয়ার খবর এক বার চৈতালিদেবীর কানে পৌঁছলেই হল। ছুটে গিয়ে শুরু হয় শুশ্রূষা। পশু চিকিৎসকের কাছে ছোটা, টিকাকরণ, কুকুরের জন্ম নিয়ন্ত্রণ— সব দিকেই চৈতালিদেবীর নজর রয়েছে। এমনকী রাস্তার কুকুরদের ক্ষেত্রেও সমান যত্নশীল তিনি। চৈতালিদেবীর এমন স্বভাবের কথা জানেন পড়শিরাও। তাই কেউ বেড়াতে গেলে, তাঁদের বাড়ির পোষ্যটির নিশ্চিত আশ্রয়স্থল, চৈতালিদেবী।

বাড়ির বাগানে গেলে একটি ঘোড়ার দেখা মিলবে। তার আশ্রয়ের সংসারে ঠাঁই পাওয়ার একটা গল্প রয়েছে। চৈতালিদেবী জানান, ডিএসপি টাউনশিপের বিভিন্ন জায়গায় একটা বুড়ো ঘোড়াকে ঘুরতে দেখা যেত। সে এক চোখে দেখতে পায় না। একটি পা আবার খোঁড়া। ঘোড়াটিকে ‘বাদল’ নাম দিয়ে চৈতালিদেবী কবে যেন নিয়ে এলেন বাড়িতে।

তবে এই সংসারে দায়িত্বপালনে প্রতি দিন বেশ কিছু কাজ করতে হয়। যেমন, পোষ্যদের থাকার জায়গা পরিষ্কার, কাঁথা বানানো, ফি দিন সকালে ৪ কেজি চালের ভাত, ৫০০ গ্রাম মাংস ও কেজিখানেক সব্জি রান্না— সবই প্রায় একা হাতে সামলান চৈতালিদেবী। আর এ সবে আর্থিক সাহায্য করেন দীপ্তবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আমিও ছোট থেকেই পশুপাখি পছন্দ করি। তাই এমন সুযোগ আর হাতছাড়া করিনি।’’

শুরুটা একা হাতে হলেও ধীরে ধীরে সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবস্তুতি অধিকারির মতো তরুণ-তরুণীরাও নাম লিখিয়েছেন চৈতালিদেবীর দলে। সকলেরই এক রা, ‘‘চৈতালিদেবীর মতো আরও কিছু মানুষ থাকলে অবলা প্রাণীগুলিকে এমন পড়ে থাকত হতো না।’’

Dog Horse Cat Bird Pets
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy