Advertisement
E-Paper

আখড়ায় আসা ঘোড়া সামলাতে জেরবার পুলিশ

চৈত্রের শুকনো গরমে সারাদিনের খাটুনির পরে সবেমাত্র চেয়ারে গা এলিয়েছিলেন উর্দিধারী। ভাগীরথীর হাওয়ায় চোখটা বুজে আসতেই হঠাৎ চিঁহি চিঁহি ডাক। গেঞ্জি-বারমুডা পরেই ঘোড়ার খাবার জোগাতে ছুটলেন তিনি। বুধবার অগ্রদ্বীপে বিরাশি বছরের বৃদ্ধাকে নৃসংশ ভাবে খুনের ঘটনার পর থেকেই তিনটি ঘোড়া সামলাতে জেরবার ওই পুলিশকর্মীরা। আখড়ায় আসা লোকজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যেতেই ঘোড়াগুলি দেখভালের দায়িত্ব পড়ে অগ্রদ্বীপ পুলিশ ক্যাম্পের উপর।

ক্যাম্পের কাছে দাঁড়িয়ে ঘোড়া।—নিজস্ব চিত্র।

ক্যাম্পের কাছে দাঁড়িয়ে ঘোড়া।—নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০১:৩৬
Share
Save

চৈত্রের শুকনো গরমে সারাদিনের খাটুনির পরে সবেমাত্র চেয়ারে গা এলিয়েছিলেন উর্দিধারী। ভাগীরথীর হাওয়ায় চোখটা বুজে আসতেই হঠাৎ চিঁহি চিঁহি ডাক। গেঞ্জি-বারমুডা পরেই ঘোড়ার খাবার জোগাতে ছুটলেন তিনি।

বুধবার অগ্রদ্বীপে বিরাশি বছরের বৃদ্ধাকে নৃসংশ ভাবে খুনের ঘটনার পর থেকেই তিনটি ঘোড়া সামলাতে জেরবার ওই পুলিশকর্মীরা। আখড়ায় আসা লোকজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যেতেই ঘোড়াগুলি দেখভালের দায়িত্ব পড়ে অগ্রদ্বীপ পুলিশ ক্যাম্পের উপর। অগ্রদ্বীপে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল সরবরাহ বিভাগের খোলা জায়গায় পুলিশের হেফাজতে ওই তিনটি ঘোড়া রয়েছে। পুলিশকর্মীরাই পালা করে খাবার জোগাচ্ছেন তাদের।

সোমবার থেকে তিনদিনের গোপীনাথের মেলা শুরু হয়েছিল অগ্রদ্বীপে। প্রতিবারই মেলায় আখড়া বসান নদিয়ার চাপড়ার এক গ্রামের বাসিন্দারা। তাদেরই এ বার অগ্রদ্বীপে নিয়ে আসে তিনটি এক্কাগাড়ি। কিন্তু মেলার শেষ দিন, যে বাড়িতে আখড়া বসেছিল সেই বাড়ির মালিক বিরাশি বছরের এক বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে। আশপাশের বাসিন্দারাই ওই আখড়ার লোকজনকে আটকে রেখে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ তাদের নিয়ে এলেও ঘোড়াগুলি রয়ে যায় ওখানেই। বিষয়টি অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (গ্রামীণ) নজরে এলে তিনি কাটোয়া থানাকে নির্দেশ দেন ঘোড়াগুলিকে পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে রাখতে। তখন থেকে পুলিশ ক্যাম্পই ঘোড়াশাল। এক দিকে, ঘোড়ার যত্নআত্তি, সময়ে খাবার দেওয়া নিয়ে ব্যতিব্যস্ত ক্যাম্পের পুলিশকর্মীরা, আবার কাটোয়া থানায় ঘন ঘন ঘোড়ার খোঁজ করছেন মালিকেরা। বারবার ডিউটি অফিসারকে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘আমাদের ঘোড়াগুলি জলপানি পাচ্ছে তো! না রোদে পুড়ছে?’

বৃহস্পতিবার অগ্রদ্বীপ গ্রামে অবশ্য চলছে পুলিশের তল্লাশি। আখড়ার মালিক দাবি করেছেন,

ঘোড়ার গাড়িতেই ছিলেন তিনি। মাইক, জেনারেটরের আওয়াজে কিছু শুনতেও পাননি। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

বৃহস্পতিবার বিকালে কাটোয়া থানার বাইরে দাঁড়িয়ে একটি এক্কাগাড়ির চালক, নাকাশিপাড়ার পাটপুকুরের জলু মণ্ডল উৎকন্ঠা নিয়ে বলেন, “আমার কালো কেমন আছে বলতে পারেন? ওই তো আমার জীবন, জীবীকাও।” পাশে দাঁড়ানো ওই গ্রামেরই শহিদুল শেখ বলেন, “ঘোড়ার ভরসাতেই তো আমাদের খাবার জোটে। আমাদের মতো ওদেরও কতদিন এভাবে থাকতে হবে কে জানে?” পুলিশকর্মীরা অবশ্য জানান, ঘোড়ার গাড়িতেই খাবার ছিল। তবে তা ফুরিয়ে যাওয়ায় খাবার কিনে এনে ঘোড়াগুলিকে দেওয়া হচ্ছে। এক পুলিশ কর্মী বলেন, “ঘোড়াগুলি আমাদের দেখে ভয় পাচ্ছে। পা ছুড়ছে। তার মধ্যেও গাড়িতে আটকানো বালতিতে খাবার দিয়ে আসছি।” অগ্রদ্বীপ গ্রামের এক বাসিন্দা কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, “বৃহস্পতিবার সকালে আমরাও ঘোড়াগুলিকে খাবার দিয়ে এসেছি। সঙ্গে পুলিশও ছিল।” পুলিশ ক্যাম্প থেকে কিছুটা দূরে চরণ পালের আখড়ার কাছে একটি ঘোড়া রয়েছে। তার ভার পড়েছে স্থানীয় একটি পরিবারের উপর। ওই পরিবারের বধূ রূপালী ঘোষ বলেন, “ঘোড়ার গাড়িতে খাবার রয়েছে, সেই খাবারই দিয়েছি। ফুরিয়ে গেলে সবাই মিলে একটা ব্যবস্থা করতে হবে। ছেড়ে তো দেওয়া যায় না।”

এ সব দেখে গ্রামের এক প্রবীণ মুচকি হেসে বলেন, “খুনের কিনারা করার সঙ্গে পুলিশকে এখন ঘোড়ারও সেবা করতে হবে!”

horse agradwip old woman rape

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}