Advertisement
E-Paper

সাইবার অপরাধে টাস্ক ফোর্স

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে বিভিন্ন থানার গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকটি ঘটনার কিনারাও দ্রুত হবে। কিন্তু ওই সব ঘটনার ‘অপরাধী’ বা তাদের কাজকর্ম ভিন্ রাজ্যে হওয়ায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০১:৩৭
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

চলতি সপ্তাহে বর্ধমানের চৌধুরী মিলের বাসিন্দা কৃষ্ণা রায় একটা ফোন পান। ফোনের অন্য প্রান্তের পুরুষ কণ্ঠ দাবি করে, সে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। কৃষ্ণাদেবীর মোবাইলে একটি ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) যাবে, সেই নম্বরটি তাকে জানাতে বলে ওই ব্যক্তি। তা না হলে ব্যাঙ্কের যাবতীয় অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে বলা হয়। কৃষ্ণাদেবী ওটিপি বলা মাত্রই তাঁর সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব হয়ে যায়। তিনি সোমবার জেলা সাইবার সেলে বিষয়টি জানান।

কাটোয়া কাঠোগোলাপাড়ার এক মহিলার নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। তিনি কাটোয়া থানায় জেনারেল ডায়েরি করেন। জেলা সাইবার সেলে যোগাযোগ করা মাত্রই ভুয়ো অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করার ব্যবস্থা করে পুলিশ। সাইবার সেল সূত্রে জানা গিয়েছে, একবার বন্ধ করা হয়। সে দিন বিকেলেই আবার ভুয়ো অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়। ফের বন্ধ করে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাটির কাছ থেকে বিশদে তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে।

উপরের দু’টি ঘটনা উদাহরণ মাত্র। স্মার্টফোনের দৌলতে ইন্টারনেট এখন পৌঁছে গিয়েছে গ্রামগঞ্জের আনাচে-কানাচে, প্রত্যন্ত এলাকাতেও। এর সঙ্গী হিসাবে সাইবার-অপরাধের প্রকোপও বাড়ছে জেলাতে। সঙ্গে রয়েছে এটিএম বা ডেবিট কার্ড প্রতারণা। এটিএম কার্ড ‘ক্লোন’ করে টাকা তোলার ঘটনাও দিন দিন বাড়ছে। যা নিয়ে চিন্তিত জেলা পুলিশ। জেলা সাইবার সেলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) প্রিয়ব্রত রায় বলেন, ‘‘জেলার প্রতিটি ব্যাঙ্কের কর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করতে চাইছি।’’

পূর্ব বর্ধমানে সাড়ে আট হাজারেরও বেশি এটিএম রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৩৮ শতাংশ এটিএম ‘অরক্ষিত’ বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পুলিশ চাইছে, ওই সব এটিএমে নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা করুক সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলি। রক্ষী থাকলে এটিএমের ভিতরে ঢুকে ‘স্কিমিং’ যন্ত্র লাগানো বা অন্য ভাবে জালিয়াতি করে টাকা লোপাট করার সুযোগ কমে যাবে দুষ্কৃতীদের কাছে।

জেলা পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিদিনই সাইবার সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনা ঘটছে। জেলার থানাগুলিতে এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত কর্মী থাকে না। ফলে সাইবার-সংক্রান্ত অপরাধের তদন্ত কার্যত এগোয় না। জেলা ‘ক্রাইম কনফারেন্সে’ এই তথ্য উঠে আসার পরেই নতুন পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় ‘সাইবার সেল’ খুলতে উদ্যোগী হন। জুলাইয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ওই সেল খোলা হয়। ওই সেলে এক জন সাব-ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে চার জনকে রাখা হয়েছে। প্রিয়ব্রতবাবু বলেন, “আমরা একটা টাস্ক ফোর্সও খুলব ঠিক করেছি। সাইবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েই এগিয়ে চলেছি।’’ সূত্রের খবর, সাইবার সেলের তদন্তের পরে অভিযুক্তদের খুঁজে বের করা বা তাঁদের গ্রেফতার করার ব্যাপারে ‘টাস্ক ফোর্স’ সাহায্য করবে।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে বিভিন্ন থানার গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকটি ঘটনার কিনারাও দ্রুত হবে। কিন্তু ওই সব ঘটনার ‘অপরাধী’ বা তাদের কাজকর্ম ভিন্ রাজ্যে হওয়ায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পুলিশের এক কর্তার কথায়, “বর্ধমানের এক ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকা লোপাট হয়ে যায়। ওই টাকা খরচ হয়েছে মহারাষ্ট্রের একটি শহরে কারও বিদ্যুতের বিল মেটাতে ও কেব্‌ল সংযোগে টাকা দিতে গিয়ে। তদন্ত শেষ করতে গেলে ওই শহরে যাওয়ার প্রয়োজন। আর তার জন্য লোপাট টাকার দ্বিগুণ খরচ হয়ে যাবে!” জেলা পুলিশ জানাচ্ছে, ব্যাঙ্ক-প্রতারণার শিকার হয়েছেন বোঝা মাত্র ব্যাঙ্কের দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করা উচিত গ্রাহককে। পাশাপাশি আধ ঘণ্টার মধ্যে জেলা সাইবার সেলে পাসবইয়ের প্রতিলিপি ও ডেবিট কার্ডে নম্বর দিয়ে এই মেল আইডি-তে (crimepurbabwn@gmail.com) যোগাযোগ করতেও বলা হচ্ছে।

পুলিশ সুপারের দাবি, “ওই সব কর্মীর প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরেই সেলটি খোলা হয়েছে। একই সঙ্গে ‘পাওয়ার পয়েন্ট’ উপস্থাপনার মাধ্যমে আমরা স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদেরও সাইবার অপরাধ নিয়ে সচেতন করছি।’’

Cyber Crime Task Force
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy