Advertisement
E-Paper

পথে মহিলারা, ঝাঁপ বন্ধ মদের ঠেকের

হুমকি এসেছে বারবার। কিন্তু তাতে পিছু হঠেননি তাঁরা। কুলটির ধেমোমেন ও মিঠানি গ্রামে বেআইনি মদ কারবার পুরোপুরি বন্ধ করতে আন্দোলন শুরু করেছেন মহিলারা। তাঁদের চাপ ইতিমধ্যে কিছু মদের ঠেকে ঝাঁপ বন্ধও হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। ওই মহিলাদের সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৬ ০৭:২৮
মিঠানিতে পথে মহিলারা। নিজস্ব চিত্র।

মিঠানিতে পথে মহিলারা। নিজস্ব চিত্র।

হুমকি এসেছে বারবার। কিন্তু তাতে পিছু হঠেননি তাঁরা। কুলটির ধেমোমেন ও মিঠানি গ্রামে বেআইনি মদ কারবার পুরোপুরি বন্ধ করতে আন্দোলন শুরু করেছেন মহিলারা। তাঁদের চাপ ইতিমধ্যে কিছু মদের ঠেকে ঝাঁপ বন্ধও হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। ওই মহিলাদের সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।

শিল্পাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বেআইনি মদের কারবার চলে। বিশেষত, কোলিয়ারি ও কারখানা লাগোয়া ধাওড়াগুলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে এই সব ঠেক। সকাল-সন্ধে সেখানে ভিড় জমান দিনমজুর বা খনি শ্রমিকদের একাংশ। মত্ত অবস্থায় চেঁচামেচি করে পাড়া মাথায় তোলা থেকে ঝামেলা পাকিয়ে মারপিট, কিছুই বাদ যায় না। ফল ভুগতে হয় বাড়ির লোকজনকে।

এলাকার মহিলারা জানান, এলাকায় এত মদের ঠেক গজিয়ে ওঠায় সংসারে অশান্তি উঠেছে চরমে। অনেক বাড়ির পুরুষেরা সেখানেই রোজগারের অনেকটা অংশ উড়িয়ে দিচ্ছেন। অভাবের সংসারে সমস্যা বাড়ছে। চাল-ডাল কেনার খরচ জুটছে না। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগানো যাচ্ছে না। তার সঙ্গে রয়েছে প্রায় দিনই নেশা করে বাড়ি ফিরে স্বামীর গোলমাল পাকানোর ঘটনা। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতেই অবৈধ মদের কারবার বন্ধে এক সঙ্গে রাস্তায় নেমেছেন ধেমোমেনের ঊর্মিলা বাউড়ি, মায়া বাউড়ি হা মিঠানির চম্পা বাউড়ি, রীতা বাউড়িদের মতো কয়েকশো মহিলা। তাঁদের দাবি, এমন কোনও মদের ঠেক চলতে দেওয়া যাবে না।

মাসখানেক ধরে দুই গ্রামের মহিলারা এই আন্দোলন চালাচ্ছেন। তাঁরা জানান, কোনও ভাঙচুর করা হয়নি। যখন যেখানে ঠেক চলার খবর পেয়েছেন, দল বেঁধে গিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করে আসর ভণ্ডুল করেছেন। পুলিশ ডেকে বন্ধ করিয়েছেন সেই সব ঠেক। খেয়াল রেখেছেন যাতে সেগুলি আর না খোলে। তাঁরা জানান, ধেমোমেন ও মিঠানি গ্রামের আনাচেকানাচে এখন আর কোনও বেআইনি মদের ঠেক খোলা পাওয়া যায় না। তবে এত সহজে কাজ হয়নি। আন্দোলনে নেমে অনেক বার হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের। চম্পা বাউড়ি যেমন বলেন, ‘‘মদের কারবারিরা প্রায়ই শাসাচ্ছে। কত দিন এই বিরোধ চালাতে পারি, তা ওরা দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।’’ তবে তাতে দমে যাননি তাঁরা। বরং জেদ আরও বেড়ে গিয়েছে। মায়া বাউড়ি বলেন, ‘‘মদের ক্রেতা-বিক্রেতা, দু’পক্ষকেই আমরা সিধে করে দেব।’’ তাঁরা জানান, শুধু নিজেদের এলাকায় মদ বন্ধ নয়, পাশাপাশি এলাকার মহিলাদেরও সচেতন করতে ধারাবাহিক কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেমন শনিবার মিঠানি লাগোয়া এলাকায় কয়েকশো মহিলা একটি মিছিল করেন।

মহিলাদের এই উদ্যোগে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছেন প্রসেনজিৎ বাউড়ি, সন্তু বাউড়িদের মতো কয়েকজন যুবকও। প্রসেনজিতের কথায়, ‘‘সকাল-সন্ধে সব সময় ওই ঠেকগুলো থেকে গালিগালাজ ভেসে আসত। অশান্তি লেগেই ছিল। কমবয়সীদের মধ্যে তার প্রভাব পড়ছিল। তাই মহিলাদের এই আন্দোলনে সামিল হয়েছি।’’

সম্প্রতি ধেমোমেন ও মিঠানিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রকাশ্যে বেআইনি মদের কারবার প্রায় বন্ধ। মহিলারা নিয়ম করে দল বেঁধে এলাকা ঘুরছেন। কখনও জোট বেঁধে আলোচনায় সামিল হচ্ছেন। দুই গ্রামের মহিলাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন আবগারি দফতরের বর্ধমান পশ্চিমের সুপারিন্টেন্ডেন্ট সুদীপ সান্যাল। তিনি বলেন, ‘‘আমরাও চাই অবৈধ মদের ঠেক বন্ধ হোক। পাড়ার মধ্যে বৈধ মদের দোকান থাকায় যদি সমস্যা হয়, তা আমাদের জানালেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ মহিলারা এ ভাবে এগিয়ে আসায় পুলিশের কর্তারাও। সব রকম ভাবে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে কুলটি থানা।

protest women liquor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy