বিনিময়: ছবি: শৈলেন সরকার
নেশা করতে হবে। কিন্তু, মাস গেলে আয় যা, তাতে বারে যাওয়ার মতো রেস্ত নেই। চোলাই বা দেশি মদের ঠেকও এলাকায় তেমন নেই।
তা হলে উপায়?
উপায় আছে। ‘মোবাইল বার’! আসানসোল শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চালু হয়েছে দেশি মদের হোম ডেলিভারি। কেটলিতে দেশি নিয়ে ঘুরছেন মদ বিক্রেতা। চোখের ইশারায় তাঁকে ডেকে নিলেই হবে। হাতে টাকা গুঁজে দিলেই মিলবে মদ। প্লাস্টিকের গ্লাসে বিভিন্ন মাপে। আর দেখা না হলেও চিন্তার কিছু নেই। বিক্রেতার মোবাইলে একটা মিস্ড কল দিলেই হবে। খদ্দেরের বলে দেওয়া জায়গায় হাজির হয়ে যাবেন মদ বিক্রেতা।
শহরের কোর্ট মোড়, চিত্রা সিনেমা হল, বার্নপুর রেল স্টেশনের কাছে, ধ্রুবডাঙা এলাকায় দেখা মিলছে এই ‘মোবাইল বার’ থুড়ি কেটলিওয়ালার। শহরের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে লাইসেন্সপ্রাপ্ত বার। কিন্তু সেখানে গিয়ে পান করতে অনেক খরচ। দেশি অনেক বারে মেলেও না। শহরের গরিবগুর্বো মানুষদের পক্ষে ওই সব বিলাসবহুল বারে যাওয়া সম্ভব নয়। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশি মদের ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন ওই কেটলিওয়ালা।
কী ভাবে বিক্রি হচ্ছে এই মোবাইল মদ? দেখা গেল বিক্রেতার এক হাতে কেটলি। কাঁধে ব্যাগ। ব্যাগে রয়েছে তিন মাপের স্টিলের ছোট গ্লাস। ১০, ২০ ও ৩০ টাকা দাম। যিনি খাবেন তাঁকে প্লাস্টিকের গ্লাসে টাকার পরিমাণ অনুযায়ী স্টিলের গ্লাস থেকে মদ ঢেলে দিচ্ছেন বিক্রেতা। কেটলিতে দেশি মদ নিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তিনি। কোর্ট মোড়ে তেমনই এক কেটলিওয়ালা বলছিলেন, ‘‘এখানে সকলেই আমাদের চেনা খদ্দের। কম আয়ের মানুষগুলো মদ খেতে কোথায় যাবেন? শহর বা লাগোয়া এলাকায় মদের ভাটি তেমন নেই। পুলিশি ঝামেলাও রয়েছে। তাই ঘুরে বিক্রি করে আয় করি।’’
ওই মদের ক্রেতা সুভাষ সিংহ, জয়রাম পাসোয়ানের কথায়, ‘‘আমরা খুবই গরিব। তার উপর মদের নেশা রয়েছে। বেশি টাকা দিয়ে কোথায় খাব। মদের ভাটিতে অশান্তি অনেক। তাই এই কেটলিওয়ালারা ভরসা। এরা এলাকারই বাসিন্দা। এদের উপরে ভরসা আছে বলে মদ খাই।’’ তবে বাড়ির পুরুষদের এই ভাবে মদ খাওয়া নিয়ে পরিবারের মহিলারা যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। কোর্ট মোড়ের ফুটপাথের বাসিন্দা মিনাদেবী বলেন, ‘‘মদ প্রতিদিনই এলাকায় পেয়ে যাচ্ছে বলে আমার স্বামী খাচ্ছে। মদ খেয়ে বাড়িতে অশান্তি নিত্যদিনের ঘটনা। পুলিশের বন্ধ করা উচিত।’’
শহরের অনেক মানুষই জানেন কেটলি-পদ্ধতিতে মদ বেচাকেনার খবর। কিন্তু, পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে কোনও অভিযোগ হয়নি। তাঁদের বক্তব্য, এই মদ কোথা থেকে আসছে কেউ জানেন না। মান খারাপ হলে ওই মদ খেয়ে যে কোনও সময়ে অঘটন হতে পারে। পুলিশ মদের বেআইনি আড্ডা বন্ধ করে দেওয়ায় এই পন্থা শুরু হয়েছে বলেই মনে করেন শহরবাসীর একাংশ। এটা বেআইনি ব্যবসা মানছেন প্রশাসনের কর্তারা। মহকুমাশাসক (আসানসোল) প্রলয় রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘এমন অভিনব পন্থায় মদ বিক্রির কথা আমাদের নজরে নেই। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। অবিলম্বে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy