বাঁশ দিয়ে ঘেরা ঘাট। উপাচার ফেলার জায়গা আলাদা। কাঠামো দ্রুত জল থেকে তুলে আনার কর্মীও মজুত। তা সত্ত্বেও বিসর্জনে জলদূষণ কতটা ঠেকানো গেল, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই পূর্ব বর্ধমানে।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে শুরু হয় দুর্গাপুজোর বিসর্জন-পর্ব। সে দিন বেশির ভাগ পারিবারিক পুজোর প্রতিমা বিসর্জন হয়। বুধবার দুপুর থেকে শুরু হয় বারোয়ারি নানা পুজোর বিসর্জন। কালনা শহরে অধিকাংশ বিসর্জন হয় ভাগীরথীর মহিষমর্দিনীতলার ঘাটে। পুরসভার তরফে লোহার পাইপ দিয়ে ঘাটের নীচে নামানো হয় প্রতিমা। তার আগে মালা, বেলাপাতা-সহ নানা উপাচার ঘাটের উপরে খুলে নেওয়া হয়। পুজোর আগে কালনা ও কাটোয়ায় কুমির দেখা দেওয়ায়, বিসর্জনে নদীঘাটে বন দফতরের একটি দল নজরদারি চালায়। পুরসভার তরফে নদীতে প্লাস্টিক না ফেলার জন্য প্রচার চালানো হয়। তবে নদীঘাট থেকে পর পর প্রতিমা জলে ফেলতে দেখা যায়। পুরসভার কর্মীরা প্রতিমার কাঠামো লাঠি দিয়ে সরিয়ে দিতে থাকেন ঘাট থেকে কিছুটা দূরে। ভাসমান কাঠামোগুলি থেকে প্রতিমার রং জলে মিশেছে বলে দাবি করেন স্থানীয় অনেকেই। নদীর জলে ভাসতে দেখা যায় প্রতিমার পোশাক, ডাকের সাজ, কলাগাছ-সহ নানা জিনিসপত্র।
প্রতিমার রং যে ভাবে জলে মিশছে, তাতে কি দূষণ ছড়াচ্ছে না? কালনার উপপুরপ্রধান তপন পোড়েল বলেন, ‘‘প্রতিমার শরীরের রং জলে মিশলে দূষণ ছড়ায় ঠিকই। বিষয়টি মাথায় রেখে কাঠামোগুলি যাতে দ্রুত তুলে নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।’’
কালনার এক জনপ্রতিনিধির অবশ্য দাবি, ‘‘দুর্গাপুজোর সঙ্গে বহু মানুষের আবেগ জড়িয়ে আছে। দ্রুত জল থেকে কাঠামো তুলতে গেলেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।’’
বর্ধমান পুরসভা জানিয়েছে, এ বার ১৪টি ঘাটে বিসর্জনের ব্যবস্থা রয়েছে। বেশ কিছু প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা হয়েছে বাঁকা নদীতে। বিসর্জন শুরুর আগে ঘাটগুলি পরিচ্ছন ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে গত বছর থেকে শহরে কার্নিভাল শুরু হওয়ায়, অনেক প্রতিমা বিসর্জন হয় কেশবগঞ্জ চটি এলাকার কমলসায়েরে। প্রশাসনিক উদ্যোগে এই ঘাটের একাংশ বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। রানিসায়ের,শ্যামসায়ের ঘাটেও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দশমীর রাতে যে সমস্ত প্রতিমা এ সব ঘাটে বিসর্জন হয়েছিল, একাদশীর সকালে সেগুলির কাঠামো তুলে দেওয়া হয়েছে পাড়ে।
বর্ধমানের পুরপ্রধান পরেশচন্দ্র সরকার বলেন, ‘‘বিসর্জন উপলক্ষে পুরকর্মীদের সঙ্গে রয়েছেন বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যেরা। প্রতিমা নিরঞ্জনের পরে তাঁরা এলাকা পরিচ্ছন্ন করা এবং দ্রুত কাঠামো তুলে আনার কাজ করছেন।’’
কাটোয়ার দেবরাজঘাট, কাশিগঞ্জঘাটে মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত চলে বিসর্জন পর্ব। অজয়ের একটি ঘাটেও প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা ছিল। বুধবার পর্যন্ত ১৮০টি প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ভাগীরথীর দু’টি ঘাটে মোটর চালিত ট্রলিতে করে প্রতিমা জলে দেওয়া হয়। জলদূষণ কমাতে প্রতিমার কাঠামো নদী থেকে দ্রুত তুলে নেওয়া হয়েছে বলে পুরসভার দাবি। বিসর্জন-পর্ব সুষ্ঠু ভাবে করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে ১০০ জন সাফাইকর্মী। ঘাটগুলিতে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, ডুবুরি এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যদের।
কাটোয়ার পুরপ্রধান সমীরকুমার সাহা বলেন, ‘‘গঙ্গা-দূষণ যাতে না হয়, সে ব্যাপারে বিশেষ নজর রয়েছে। পুরসভার সাফাইকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)