ঘটনাস্থল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে জেলার পুলিশ ও প্রশাসনের বড় কর্তাদের আবাসন, আদালত চত্বর। রয়েছে মেয়েদের কলেজ, হস্টেল। শহরের এমন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আগুন লাগার ঘটনায় প্রায় ৪০ মিনিট পরে দমকল এসে পৌঁছেছে বলে অভিযোগ উঠেছে আসানসোলে। পোলো মাঠে বুধবারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরে, বিরোধী দলগুলির নেতানেত্রীরা থেকে শহরবাসীর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, জেলার সদর শহরের এই এলাকায় যদি এমন ঘটে, অন্যত্র তাহলে কী হাল? দমকল যদিও দেরিতে পৌঁছনোর কথা মানতে চায়নি।
পোলো মাঠে চলা হস্তশিল্প মেলায় বুধবার আগুন লাগে। আটটি অস্থায়ী দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায় বলে অভিযোগ। আসানসোল আদালত চত্বর থেকে কিছুটা দূরেই রাস্তার বাঁ দিকে রয়েছে জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ), পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (সদর), মহকুমাশাসক, পুরসভার কমিশনার, পূর্ত দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের বাংলো। এ ছাড়া আসানসোল গার্লস কলেজ এবং তার হস্টেল। রাস্তার ডান দিকে দূরদর্শন সম্প্রচার কেন্দ্রের পরেই মাঠ। পোলো মাঠে বাণিজ্য, বই থেকে শুরু করে নানা রকম মেলার আয়োজন হয়। সম্প্রতি বসেছিল ওই হস্তশিল্প মেলার আসর। সেখানে আগুনের ঘটনায় প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা।
বিজেপির রাজ্য কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য তথা আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির দাবি, ‘‘মেলা প্রাঙ্গণ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূর থেকে দমকলের ইঞ্জিন আসতে ৪০ মিনিটের বেশি সময় লেগেছে। মেলা প্রাঙ্গণে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রে কাজ হয়নি। রীতিমতো ‘ভিআইপি জ়োন’-এ এত দেরিতে দমকল পৌঁছনোর জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কারণে তৈরি যানজটকে দায়ী করা হচ্ছে। এর থেকে পরিষ্কার, দায় এড়াতে প্রশাসন যে কোনও অজুহাত দেখাতে পারে।’’ তাঁর আরও দাবি, ওই সাড়ে তিন কিলোমিটার পথে কয়েকশো মিটারের অংশে কয়েকটি স্কুল আছে। পরীক্ষার সময়ে পড়ুয়ার সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় কম থাকে। তাতে দীর্ঘ যানজট হতে পারে না। ফলে, যানজটের কারণে যদি দমকল আটকে থাকে, তা ট্র্যাফিক অব্যবস্থার প্রমাণ। সার্বিক ভাবে প্রশাসনিক স্তরে সমন্বয়ের অভাব স্পষ্ট বলেও অভিযোগ জিতেন্দ্রর। তাঁর আরও দাবি, এমন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মেলায় সর্বক্ষণ দমকল মোতায়েন রাখা উচিত।
সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, প্রশাসনিক স্তরে মেলা পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সে বিষয়ে তাঁরা জেলাপ্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। সর্বক্ষণ দমকলের ইঞ্জিন রাখা ও আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের যথার্থ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন।
আসানসোল দমকল কেন্দ্রের ওসি দেবায়ন পোদ্দার জানান, প্রাথমিক তদন্তে তাঁরা জেনেছেন, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার করতে না জানার ফলেই বিপত্তি ঘটেছে। এমন যাতে আর না হয়, সে কারণে বৃহস্পতিবার প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। তাঁর দাবি, মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁদের কর্মীরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। প্রতিদিন বিকেল থেকে দমকলের কর্মীরা টহলও দেন।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সুহাসিনী ই জানান, প্রশাসনের কাছে সমস্ত এলাকাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সবার জীবনের মূল্য সমান। প্রতিটি দোকানেই অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র দেওয়া ছিল। দুর্ঘটনার পর থেকে মেলা প্রাঙ্গণে সর্বক্ষণের জন্য দমকলের একটি ইঞ্জিন মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া, স্বাস্থ্যকর্মী এবং নিরাপত্তারক্ষীও রয়েছেন। মেলা আয়োজকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, খাবারের দোকানগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মেলার দোকানদার ও শিল্পীদের জন্য ‘কমিউনিটি কিচেন’ করা হয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)