বেশ কয়েক বছর ধরেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের পড়ুয়াদের মধ্যে পাশের হার নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ বছরেও পাশের হার তিরিশ শতাংশ ছোঁয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। স্মারকলিপিও দিয়েছে। সংগঠনের নেতাদের একাংশের দাবি, পরীক্ষকদের গাফিলতিতেই বছরের পর বছর ওই দুটি বিভাগের ফল খারাপ হচ্ছে। যদিও শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, তথ্য জানার আইন আসার পরে কোনও পরীক্ষকই খাতা দেখায় গাফিলতি দেখাতে চান না। তাঁদের দাবি, আদতে বেশিরভাগ পড়ুয়াই কলেজমুখো হয় না, ফলে পাঠ্যসূচী বা সিলেবাস সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অধিকাংশ পড়ুয়ার নেই। তারই প্রভাব পড়ে পরীক্ষার খাতায়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের প্রথম বর্ষের ফল বেরোতে ছ’মাস সময় লেগে গিয়েছিল। সেখানে এ বছরে তিন মাসের মধ্যেই ফল বের করতে পেরেছে বিশ্ববিদ্যালয়। পরীক্ষা নিয়ামক রাজীব মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরেই নিয়মিত ভাবে খোঁজ নেওয়া, বারবার খতিয়ে দেখার জন্যেই নির্দিষ্ট সময়ে ফল বের করতে পেরেছি। কিন্তু পড়ুয়াদের ফল কেন খারাপ হল, সেটা তো আমরা বলতে পারব না।” তবে এ বছর ওই দু’টি বিভাগে এখনও পর্যন্ত অসম্পূর্ণ ফল বেরোয়নি। মঙ্গলবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিট পরীক্ষা নিয়ামকের কাছে এ নিয়ে স্মারকলিপি দেয়। সংগঠনের কার্যকারী সভাপতি অভিষেক নন্দী বলেন, “বিজ্ঞান ও বানিজ্য বিভাগে উত্তীর্ণ পড়ুয়ার সংখ্যা খুবই কম। বিশেষ করে পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন বিভাগের পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর যথেষ্ট হতাশাজনক। আমরা পরীক্ষা নিয়ামকের কাছে সঠিক কারণ অনুসন্ধানের দাবি জানিয়েছি।”
৮ নভেম্বর এ বছরের বাণিজ্য ও বিজ্ঞান বিভাগের পার্ট ১-এর ফলপ্রকাশ হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, বাণিজ্য বিভাগের সাম্মানিক স্তরে ১৫৮০ জনের মধ্যে ৫৩২ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন (৩৪%), সাধারণ স্তরের হাল আরও খারাপ। সেখানে ১১০২ জনের মধ্যে মাত্র ২৮৩ জন পাশ করেছেন (২৫%)। শুধু এ বছরেই নয়, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় পাশের হার যথাক্রমে ৪৭ ও ৩৯ শতাংশ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষেও সাধারণ স্তরে পাশের হার ৫০ শতাংশ পেরোয়নি। সাম্মানিক স্তরে অবশ্য উত্তীর্ণের সংখ্যা ৬০ শতাংশের আশেপাশে। বিজ্ঞান বিভাগেও পড়ুয়ার সংখ্যা কমার সঙ্গে উত্তীর্ণের সংখ্যা কমছে। দেখা যাচ্ছে, এ বছরে পার্ট ১-এ ৬৮৮১ জন সাম্মানিক স্তরে পরীক্ষা দিয়েছিলেন, সেখানে উত্তীর্ণ হয়েছেন মাত্র ৩৪ শতাংশ পড়ুয়া। সাধারণ স্তরে ২১৯৩ জনের মধ্যে ৬৪৫ জন (২৯%) উত্তীর্ণ। আগের দু’ বছরে সাম্মানিক স্তরে ৫০ শতাংশ উত্তীর্ণ হলেও সাধারণ বিভাগে পাশের হার ৩০ শতাংশ। পার্ট ২ ও পার্ট ৩-এ সাম্মানিক স্তরে পাশের হার ৫০ শতাংশের উপরে থাকলেও সাধারণ স্তরে গড়ে পাশ করেছে ৪০ শতাংশ।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি প্রদীপ বাজপেয়ী বলেন, “আমরা গত দু’তিন বছর ধরে লাগাতার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কেন ফল খারাপ হচ্ছে তার তদন্ত করার জন্য দাবি জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সঠিক পদক্ষেপ না নিলে আগামী দিনেও পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে না।” বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যদিও দাবি, কলেজে না আসায় অধিকাংশ সময়ে সময়ে পাঠ্যসূচী শেষ করতে পারে না পড়ুয়ারা। ফলে সম্যক ধারণা জন্মায়না। তার প্রভাবই পড়ছে ফলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy