হাজি নবিনগর এলাকা। ছবি: পাপন চৌধুরী।
শিল্পাঞ্চলের প্রতিটি ভোটেই চর্চার একটি বিষয় থাকে ধস ও পুনর্বাসন। বুধবার বরাকরের হাজি নবিনগরে ধসের জেরে মোট পাঁচটি বাড়ি কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনাচক্রে, খনি
বিশেষজ্ঞদের হিসেব অনুযায়ী, ১৯৩৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত বরাকরে মোট তেরো বার ধস নামল। এই পরিস্থিতিতে ভোটের আগে ফের শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা চাইছেন, শুধু চর্চা নয়। এ বার কাজের কাজ কিছু হোক। পাশাপাশি, কেন এই এলাকায় বারবার ধস, তা নিয়েও চলছে আলোচনা।
বুধবার ধসের পরে, বিসিসিএল-এর চাঁচ-ভিক্টোরিয়া এরিয়ার জিএম সিদ্ধার্থ দাস জানিয়েছিলেন, বেসরকারি আমলে কয়লা উত্তোলন করা হলেও ঠিক ভাবে ভূগর্ভ ভরাট করা হয়নি। তাই বিপত্তি। বিসিসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯০৪-এ বেঙ্গল কোল কম্পানি, তার বছর দশেক পরে থাপার গোষ্ঠী বরাকরে কয়লা কেটেছে। রাষ্ট্রায়ত্তকরণের পরে, এখানের কয়লা-ক্ষেত্র বিসিসিএল-এর অধীনে আসে।
১৯৭৭-এ বিসিসিএল, ডিরেক্টর জেনারেল অব মাইনস সেফটি (ডিজিএমএস) ও কোল মাইন প্ল্যানিং ডিজাইনিং ইনস্টিটিউট (সিএমপিডিআই)-এর সমীক্ষায় দেখা যায়, বরাকর শহরের প্রায় ৩,১২০ বর্গমিটার এলাকা ধসপ্রবণ। রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা বিসিসিএল-এর দাবি, পুরো এলাকাটি বসবাসের জন্য বিপজ্জনক ঘোষণা করে ২০০৭-এর ১৩ মে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে হাজি নবিনগরও রয়েছে। কিন্তু বাসিন্দাদের প্রায় কেউই উঠে যাননি।
এই পরিস্থিতিতে শহর বাঁচাতে হলে এক দিকে পুনর্বাসন, অন্য দিকে ভূগর্ভে বালি-মাটি ভরাটের কাজ দ্রুত করতে হবে বলে দাবি খনি বিশেষজ্ঞদের। আর এই জায়গা থেকেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। কুলটির তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘রাজ্যে বাম আমলে বিষয়টি নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।’’ এ বারের বিধানসভায় কুলটিতে ধসকে প্রধান বিষয় করা হবে জানিয়ে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য বংশগোপাল চৌধুরীর অবশ্য দাবি, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ হারাধন রায়ের দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতেই বরাকর-সহ খনি এলাকায় পুনর্বাসন ও স্থায়ীকরণে উদ্যোগী হয় কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রক। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু পুনর্বাসনের কাজ গত দশ বছরে কিছুই করতে পারেনি তৃণমূল।’’ বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি সুব্রত মিশ্রেরও দাবি, ‘‘বরাকরের পুনর্বাসন নিয়ে তৃণমূল বা সিপিএম কেউই কিছুই করেনি। অথচ, কেন্দ্রীয় সরকার দীর্ঘদিন আগে এ জন্য টাকা বরাদ্দ
করে দিয়েছে।’’
এ সব চাপান-উতোরে অবশ্য আগ্রহ নেই স্থানীয় বাসিন্দা শেখ মিনাজ, জাফর আহমেদদের। তাঁরা বলেন, ‘‘যে কোনও দিন পাতালে ঢুকে যাব। ধস নামার পরে, কয়েক দিন প্রশাসনের তৎপরতা থাকে। রাজনৈতিক নেতারা আসেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় না।’’ এলাকার অর্থনীতির স্বার্থেই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকার প্রায় সাত দশকের পুরনো পরিবারের সদস্য বস্ত্র ব্যবসায়ী রামমোহন ভরও।
ঘটনাচক্রে, ২০০৯-এ পুনর্বাসনের জন্য জন্য ইসিএল-কে ২,৬২৯ কোটি টাকা ও বিসিসিএল-কে ৭,০২৮ কোটি টাকা দেয় কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট। কিন্তু এখনও কেন হল না পুনর্বাসনের কাজ? বিসিসিএল সূত্রে জানা যায়, কাজটি করার কথা ঝাড়খণ্ড সরকারের অধীনে থাকা ‘ঝরিয়া রিহ্যাবিলিটেশন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’র (জেআরডিএ)। তবে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, বরাকর যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে, তাই এখানে এই কাজ করবে এডিডিএ। যদিও পরে ঠিক হয়, এখানে কাজ করবে জেআরডিএ-ই। বিসিসিএল-এর আধিকারিক সিদ্ধার্থবাবু বলেন, ‘‘গত বছরে এ বিষয়ে বিসিসিএল-কে সঙ্গে নিয়ে জেআরডিএ যৌথ সমীক্ষা করেছিল। দ্রুত পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’ জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজিরও আশ্বাস, ‘‘আমরা সবাই মিলেই যথাযথ পদক্ষেপ করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy