Advertisement
E-Paper

লাইসেন্সই নেই, তবু  রাস্তায় ছুটছে বেপরোয়া ট্রাক

পরপর পথ দুর্ঘটনার জেরে রাস্তায় নেমে পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের লাইসেন্স ও নথি পরীক্ষার কাজ শুরু করতে গিয়ে তাজ্জব হয়ে গেলেন পুলিশকর্মীরা। এক দিনেই কমবেশি একশো ডাম্পার ও ট্রাকের নথি পরীক্ষা করতে গিয়ে যায়, ৩০ শতাংশ চালকেরই ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স’ নেই!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৮ ০১:২০
তল্লাশি: পুরুলিয়া বরাকর রাজ্য সড়কে গা়ড়ি থামিয়ে। নিজস্ব চিত্র

তল্লাশি: পুরুলিয়া বরাকর রাজ্য সড়কে গা়ড়ি থামিয়ে। নিজস্ব চিত্র

পরপর পথ দুর্ঘটনার জেরে রাস্তায় নেমে পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের লাইসেন্স ও নথি পরীক্ষার কাজ শুরু করতে গিয়ে তাজ্জব হয়ে গেলেন পুলিশকর্মীরা। এক দিনেই কমবেশি একশো ডাম্পার ও ট্রাকের নথি পরীক্ষা করতে গিয়ে যায়, ৩০ শতাংশ চালকেরই ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স’ নেই! শুক্রবার নাকা তল্লাশির সময়ে এমনই তথ্য সামনে এসেছে বলে দাবি করেছে নিতুড়িয়া থানার পুলিশ। আপাতত তাঁদের জরিমানা করে ও গাড়ির মালিকদের সর্তক করা হয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে এই ধরনের ঘটনা নজরে এলে গাড়ির মালিক ও অবৈধ চালকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন পুলিশ-কর্তারা।

এসডিপিও (রঘুনাথপুর) সত্যব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সম্প্রতি মহকুমার বিভিন্ন থানা এলাকায় পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের সংখ্যা বেড়েছে। কয়েকটি পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুও হয়েছে। গাড়ি চালকদের দোষেই দুর্ঘটনা হচ্ছে বলে তদন্তে জানার পরেই গাড়ি চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির নথি পরীক্ষা করার কাজ শুরু করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, প্রথমে এই কাজ শুরু করেছে নিতুড়িয়া থানা। ধাপে ধাপে রঘুনাথপুর মহকুমার সমস্ত থানাতেই এই ধরনের পণ্যবাহী গাড়িগুলি পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

গত এক সপ্তাহে রঘুনাথপুর মহকুমার নিতুড়িয়া থানা এলাকায় পরপর দু’টি পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। মারা গেছে দু’টি গবাদি পশুও। প্রথমে ২ অগস্ট নিতুড়িয়া থানার ইনানপুরে ডিভিসির বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা নিয়ে যাওয়া ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল স্থানীয় একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানার দুই কর্মীর। পরে ৭ অগস্ট রঘুনাথপুরের ডিভিসির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা নামিয়ে ফেরার পথে নিতুড়িয়া থানার নাড়াগড়িয়া গ্রামের অদূরে ডাম্পারের ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক প্রৌঢ় চাষির। মারা যায় তাঁর সঙ্গে থাকা দু’টি গরু। ওই দুর্ঘটনার পরে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ডিভিসির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি দরজা আটকে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশ সূত্রের খবর, সেই সময়েই ওই ডাম্পারের সন্ধান করতে গিয়ে তারা জানতে পারে, ওই গাড়ির চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সই নেই। তারপরেই গোটা থানা এলাকা জুড়ে গাড়ি পরীক্ষা শুরু করেছে পুলিশ। শুক্রবার ও শনিবার নাকা তল্লাশি হয়।

শুক্রবার থেকে নিতুড়িয়া থানার বিভিন্ন রাস্তায় পণ্যবাহী লরি, ট্রাক ও ডাম্পারগুলি থামিয়ে গাড়ির নথি পরীক্ষা করা শুরু হয়েছে। পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক, পাঞ্চেত-সড়বড়ি রাস্তা, সড়বড়ি-মধুকুণ্ডা রাস্তার কয়েকটি এলাকায় গাড়ি পরীক্ষার কাজ শুরু করেছেন পুলিশ কর্মীরা। সূত্রের খবর, শুক্রবার কমবেশি একশোর মতো গাড়ির নথি পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, প্রায় ৩০ শতাংশ গাড়ির চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। কিছু ক্ষেত্রে আবার দেখা গিয়েছে, চালক গাড়িতে থাকলেও চালাচ্ছেন অনভিজ্ঞ খালাসি। কিছু ক্ষেত্রে আবার গাড়ির বিমা সংক্রান্ত নথিও পাওয়া যায়নি।

পরীক্ষায় ধরা পড়া ৩০ শতাংশ গাড়ির চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার বিষয়টি সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছেন পুলিশের পদস্থ কর্তারা। বস্তুত, রঘুনাথপুর মহকুমা জেলার অন্যতম শিল্পাঞ্চল বলে পরিচিত। দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও আছে আটটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা, একটি বড় সিমেন্ট কারখানা, একটি কোল ওয়াশারি-সহ হার্ডকোক ও অন্যান্য বেশ কিছু ছোট মাপের কলকারখানা। স্বভাবতই এই এলাকায় পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের সংখ্যা জেলার অন্যান্য এলাকার থেকে অনেকটাই বেশি।

তারপরে আবার গত কয়েকমাস ধরে দৈনিক শতাধিক ট্রাক ও ডাম্পার আসানসোল, নিতুড়িয়া, পাড়া এলাকা থেকে কয়লা নিয়ে ঢুকছে রঘুনাথপুরের ডিভিসির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। এর ফলে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের সংখ্যাটা এই মহকুমায় এক ধাপে কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। পুলিশের দাবি, পথ দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।

তবে শুধু পুলিশের পক্ষে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা বা অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে যাওয়া গাড়ির নথি পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। নিতুড়িয়া থানার পুলিশ শনিবার চিঠি দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে, তারাও যেন গাড়ির চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স-সহ অন্যান্য নথি খতিয়ে দেখার কাজ করেন। লাইসেন্সবিহীন চালকদের যাতে গাড়ি চালাতে না দেওয়া হয়, সেই বিষয়টিও পুলিশ রঘুনাথপুর মহকুমার ডাম্পার অ্যাসোসিয়েশনকে দেখতে অনুরোধ করেছে।

সংগঠনের কয়েকজন সদস্য অবশ্য স্বীকার করেছেন, কিছু ক্ষেত্রে চালকেরা বসে থাকেন আর খালাসি গাড়ির চালায়। তবে সংগঠনের কর্মকর্তা নয়ন ঘোষালের দাবি, ‘‘ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে চালকদের গাড়ি চালাতে দেওয়া হবে না বলে আগেই আমরা সংগঠনগত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সমস্ত সদস্যদের তা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। তবে সবাই তা মানছেন কি না, সেটা প্রয়োজনে আমরা আবার দেখব।’’

License Truck Reckless
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy