বাঁ দিকে, শীত পড়তেই টুপির পসরা কালনায়। ডান িদকে, আগুন পোহানো বর্ধমানে। নিজস্ব চিত্র।
গত দু’বছর বেশ ঢিমেতালে শীত নেমেছিল শহরে। বড়দিনের আগে শীতের দাপট সে ভাবে দেখা যায়নি। এ বার নিম্নচাপের দুর্যোগ কাটতেই শীত নেমেছে জব্বর। সন্ধ্যা নামতেই উত্তুরে হাওয়ায় হাড় কাঁপছে। ডিসেম্বরের গোড়াতেই বর্ধমানের তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রির কাছাকাছি। আগামী সপ্তাহে পারদ আরও নামতে পারে বলে আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
রবিবার সকাল থেকেই ভাল ঠান্ডা ছিল। চায়ের দোকানে ভিড় ছিল দিনভর। সন্ধ্যা নামতেই অবশ্য রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়। আড্ডার ভিড়েও লাগে শীতের হাওয়া। বাবুরবাগ সিএমএস স্কুলের সামনে একটি বড় চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে সায়ন দে মণ্ডল নামে এক যুবক বলেন, ‘‘এখানে মাঝেমধ্যে আসি। তবে দু’দিন ধরে ঠান্ডাটা বেশ লাগছে। সকালে টুকটাক কাজ সেরেই চলে এসেছি। গরম চায়ে চুমুক দিয়ে তবে বাকি কাজ হবে।’’
ডাক পড়ছে ধুনুরিদেরও। তুলোর বস্তা মাথায় পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে লেপ তৈরি করছেন তাঁরা।শীতের নানা সামগ্রী নিয়ে উত্তরপ্রদেশের মুরাদাবাদ থেকে এসেছেন একদল ব্যবসায়ী। তাঁদের একজন আরশাদ আলি বলেন, ‘‘শীত নামতেই বিক্রি বেড়েছে আমাদের। দুপুরে রোদে ছাদে শোওয়ার জন্য ছোট খাট কিনছেন অনেকে।’’ আপাপতত আর বৃষ্টি নয়, শীতই লম্বা ইনিংস খেলুক চাইছেন উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থপ্রতিম দেবনাথেরা।
ঠান্ডায় জেলার অনেক ফেরিঘাটেই একটু দেরিতে নৌকা চলাচল শুরু হচ্ছে। কালনার সকাল ৮টা থেকে খেয়াঘাটে লোকসমাগম হচ্ছে। ফেরিঘাটের ইজারাদার জয়গোপাল ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ঠান্ডা ক্রমশ বাড়তে থাকায় সকালের দিকে কালনা এবং নদিয়ার নৃসিংহপুর ফেরিঘাট থেকে লঞ্চে যাতায়াত করছেন অনেক কম যাত্রী। তবে এখনও কুয়াশার দাপট তেমন দেখা যায়নি। কুয়াশা হলে যাত্রী আরও কমবে। রাস্তাঘাটে যানবাহনও কম দেখা যাচ্ছে রাতে। এসটিকেকে রোডে রাত ১০টার পরে গাড়ির সংখ্যা কমছে। মোটরবাইকও প্রায় দেখা যাচ্ছে না।
কাটোয়া শহরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তাঘাটে ভিড় দেখা যায়। ছুটির দিনে পিকনিক, বিয়ের মরসুম চলায় শীতেও বাজার ভাল, দাবি বিক্রেতাদের। খেজুর গুড়ের মানও ভাল হচ্ছে, জানান তাঁরা। পূর্বস্থলীর এক শিউলি পরিতোষ ঘোষ বলেন, ‘‘ভোরে ভাল ঠান্ডা পড়ছে। আশা করছি এ বার খেজুর গাছে ভাল রস মিলবে। গুড়ের গন্ধ, স্বাদও ভাল হবে।’’ সুজিত ঘোষ নামে কাটোয়ার এক বাসিন্দার দাবি, শীত এ বার ভালই পড়েছে। ভাল খেজুর গুড়ে পিঠেপুলি খাওয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। ঝোঁক বেড়েছে বেড়ানোতেও। কাটোয়া ভাগীরথীর ধারে খাবারের দোকান রয়েছে রাজু সরকারের। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি রবিবার বহু মানুষ নদীর ধারে বেড়াতে আসেন। ঠান্ডা উপভোগ করতে সকালে, দুপুরেও অনেকে আসছেন। আমাদেরও বিক্রি ভাল হচ্ছে।’’
শীতের প্রভাব পড়েছে চাষেও। কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানান, প্রতিদিনই তাপমাত্রা নামছে। এই ধরনের পরিস্থিতি সর্ষে, পেঁয়াজ, আলুর মতো রবিশস্যের পক্ষে ভাল। কারণ ঠান্ডায় রোগপোকার হামলা কম হয়। তবে অতিরিক্ত শীত পড়লে নজর রাখতে হবে বোরো ধানের বীজতলায়। জল নিয়মিত বার করে দিতে হবে। না হলে ‘কোল্ড ইনজুরি’ দেখা যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy