Advertisement
০১ মে ২০২৪

সিঁদ-চোরেদের দাপটে খনিতে আতঙ্কে রক্ষীরা

কখনও গুদামঘরে। কখনও বারুদঘরে। খনিগুলিতে সিঁদ কেটে চুরির ঘটনা ঘটে চলেছে একের পর এক। বাধা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। শুক্রবার রাতে রানিগঞ্জের রতিবাটি কোলিয়ারিতেও সিঁদ কাটার ঘটনা ও রক্ষীর দেহ উদ্ধারের পরে সরব হয়েছে খনির শ্রমিক সংগঠনগুলি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৬ ০২:১৭
Share: Save:

কখনও গুদামঘরে। কখনও বারুদঘরে। খনিগুলিতে সিঁদ কেটে চুরির ঘটনা ঘটে চলেছে একের পর এক। বাধা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। শুক্রবার রাতে রানিগঞ্জের রতিবাটি কোলিয়ারিতেও সিঁদ কাটার ঘটনা ও রক্ষীর দেহ উদ্ধারের পরে সরব হয়েছে খনির শ্রমিক সংগঠনগুলি। ইসিএলের দিকেই আঙুল তুলেছে তারা।

খনি এলাকায় সিঁদ কেটে চুরির ঘটনা চলছে অনেক দিন ধরেই। ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৮ সালে সাতগ্রাম এরিয়ায় নিউ সাতগ্রাম কোলিয়ারির গুদামে চুরি হয়। আবার ২০০৩ সালে সাতগ্রাম প্রজেক্টের ইঞ্জিন ঘরে সিঁদ কেটে ইঞ্জিন মেরামতির জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দেয় চোরেরা। মাস তিনেক আগে কেন্দা এরিয়ার শীতলপুর কোলিয়ারির গুদামে সিঁদ কেটে চুরি হয়। বছর তিনেক আগে ময়রা কোলিয়ারির স্টোররুমে একই ভাবে চুরির ঘটনা ঘটে। কুনস্তরিয়া এরিয়ার কুনস্তরিয়া কোলিয়ারিতে স্টোররুমে তিন বছরে দু’বার, মহাবীর কোলিয়ারিতে দেড় বছরে দু’বার চুরি হয়েছে।

তিন বছর আগে বাঁশরা কোলিয়ারিতে প্রথমে গুদামে, তার পরে বারুদ ঘরে সিঁদ কাটে চোরেরা। গুদাম থেকে জিনিসপত্র নিতে পারলেও বারুদঘরে রক্ষীদের তাড়ায় দুষ্কৃতীরা পালিয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়াও চুরি আটকাতে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীর জখম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বারবারই। মাসখানেক আগে সাতগ্রাম এরিয়ার সেন্ট্রাল ডিপোয় কয়লা চুরি আটকাতে গিয়ে দুই নিরাপত্তারক্ষী জখম হন।

বারবার এমন চুরির ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল মাইন ওয়ার্কাস ফেডারেশন’-এর সাধারণ সহ-সম্পাদক তরুণ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, ইসিএলের নিজস্ব রক্ষী নিয়োগ করা দরকার। ২২৩ জন রক্ষীর নিয়োগের পরীক্ষা নিয়েছিল সংস্থা। কিন্তু অনিয়মের অভিযোগে আদালতে মামলা চলায় সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। বছর দশেক ধরে কাজ চালানো হচ্ছে বেসরকারী নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে। কিন্তু তাঁদের যথেষ্ট কম পরিকাঠামোয় কাজ করতে হয় বলে অভিযোগ। ইসিএলের একটি সূত্রের দাবি, নিরাপত্তায় সাহায্য করার জন্য পুলিশ-প্রশাসনকে নানা রকম পরিকাঠামোগত সাহায্য করলেও রাতে টহল দেওয়া হয় না বললেই চলে। দুষ্কৃতীরা বারবার পার পেয়ে যাওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলেও দাবি করেন শ্রমিক নেতারা। কেকেএসসি-র সহ-সভাপতি নরেন চক্রবর্তী আবার বলেন, ‘‘ইসিএলের গুদামঘরগুলি বহু দিনের পুরনো। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সব দেওয়াল জীর্ণ। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢিলেঢালা। আর এই সুযোগে দুষ্কৃতীরা সহজেই দেওয়াল ভাঙতে পারছে।’’ তাঁর আরও দাবি, অনেক সময়ে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও থাকে না। এই সব কারণেই বারবার চুরি হচ্ছে দাবি করেন তিনি বলেন, ‘‘ইসিএল কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তার কাঠামো মজবুত করা উচিত।’’

শুক্রবার রাতে রতিবাটি কোলিয়ারিতে চুরি আটকাতে গিয়েই নিরাপত্তারক্ষী নীলকণ্ঠ খাঁ খুন হয়েছেন বলে শ্রমিকনেতাদের অভিযোগ। ওই কোলিয়ারির এজেন্ট বাসব চৌধুরী বলেন, “আামাদের সিআইএসএফ বা নিজেদের দু’নালা বন্দুকধারী রক্ষী থাকলেও মতো গুলি চালানোর ক্ষমতা নেই। দুষ্কৃতীরা গুলি চালালেও রক্ষীদের শূন্যে গুলি ছুড়তে হবে। তাই আমাদের ভরসা পুলিশ-প্রশাসন। প্রশাসন দুষ্কৃতীদের ধরে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করলে চুরি বন্ধ হবে বলে আমাদের ধারণা।’’ তিনি জানান, শুক্রবার রাতের ঘটনার পরে কোলিয়ারির বেসরকারি রক্ষীরা আতঙ্কে কাজ করতে চাইছিলেন না। শনিবার তাঁরাও রক্ষীদের সঙ্গে রাতে নজরদারির কাজ করেছেন।

পুলিশ অবশ্য টহল না দেওয়ার কথা মানতে নারাজ। অভিযোগ পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলেও দাবি করেছে তারা। রতিবাটির ঘটনার তদন্ত চলছে বলে পুলিশকর্তারা জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Robbery Mine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE