Advertisement
E-Paper

মেধা তালিকায় ছ’নম্বরে, তবু স্বস্তিতে নেই রোহিত

সকাল সকাল টিভিতে দেখে দৌড়ে এসে খবরটা দিয়েছিলেন এক প্রতিবেশী। সেই খবর পেয়ে অ্যাসবেস্টসের ছাউনির দু’কামরার ঘরে যেন হাজার ওয়াটের আলো। দিনভর নানা জনের শুভেচ্ছা, মিষ্টিমুখ। তার মাঝেই আসানসোলের ইস্টার্ন রেল স্কুলের ছাত্র রোহিত কুমারের চোখে জল। সে বলে, ‘‘ভাল ফল করতে হবে, এটা চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু এখন যেন স্বপ্নের মতো লাগছে।’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৫ ০১:৩৮
রোহিত কুমার ও প্রাচী কর

রোহিত কুমার ও প্রাচী কর

সকাল সকাল টিভিতে দেখে দৌড়ে এসে খবরটা দিয়েছিলেন এক প্রতিবেশী। সেই খবর পেয়ে অ্যাসবেস্টসের ছাউনির দু’কামরার ঘরে যেন হাজার ওয়াটের আলো। দিনভর নানা জনের শুভেচ্ছা, মিষ্টিমুখ। তার মাঝেই আসানসোলের ইস্টার্ন রেল স্কুলের ছাত্র রোহিত কুমারের চোখে জল। সে বলে, ‘‘ভাল ফল করতে হবে, এটা চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু এখন যেন স্বপ্নের মতো লাগছে।’’

মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় ৬৭৮ নম্বর পেয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে রোহিত। শুধু রোহিত নয়, বর্ধমান জেলা থেকে মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে কুলটি গার্লস স্কুলের বর্ষা দাস, আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের শঙ্খ প্রামাণিক, মানকর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাচী কর, কাটোয়া কাশীরাম দাস বিদ্যায়তনের সৌগত ঘোষও।

আইপিএলে প্রিয় দল কলকাতা নাইট রাইডার্স প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নেওয়ায় ক্রিকেট ভক্ত সৌগত কিছুটা মুষড়ে পড়েছিল। তবে শুক্রবার ফল বেরোনোর পরে তার মুখে চওড়া হাসি। খুশির হাওয়া তার স্কুলেও। সৌগতও ৬৭৮ পেয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মী বিকাশ ঘোষের ছেলে সৌগত ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। অবসর সময়ে ছবিও আঁকতে ভালবাসে। মা প্রতিভাদেবী জানান, সৌগত দিনে ৬-৭ ঘণ্টা পড়ত। কাশীরাম দাস বিদ্যায়তনের প্রধান শিক্ষক সুধীনকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘ও কখনও ক্লাস কামাই করত না। ওর সাফল্যে স্কুল গর্বিত।’’

কুলটির বর্ষা ৬৭৭ নম্বর পেয়ে সপ্তম হয়েছে। ফল জানার পরে বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না তার। সে বলে, ‘‘ভাল ফল করতে হবে, প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। কিন্তু, এতটা ভাল করতে পারব ভাবিনি।’’ টিভির পর্দায় মেয়ের নাম ফুটে উঠতেই আনন্দে আত্মহারা তার বাবা-মা মনিমোহনবাবু ও মনিকাদেবী। সকালে কাজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন আসানসোলের একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী মনিমোহনবাবু। খবর জেনে সহকর্মীরাই তাঁকে অফিসে যেতে নিষেধ করেছেন। বর্ষা জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে টেনশনে ঘুমোতে পারেনি। ফল জানার পরে হাল্কা লাগছে। এ বার সে ডাক্তার হতে চায়। মনিকাদেবী বলেন, ‘‘মেয়ে বিরিয়ানি খেতে ভালবাসে। আজ বাড়িতে তা-ই রান্না হবে।’’

মানকরের প্রাচী করের বাবা-মা চন্দনবাবু ও হেমন্তিকাদেবী দু’জনেই শিক্ষকতা করেন। এ দিন সকাল থেকেই টিভিতে চোখ রেখেছিলেন তাঁরা। ৬৭৬ নম্বর পেয়ে অষ্টম হওয়ার পরে প্রাচী জানাচ্ছে, বাবা-মায়ের পেশাই তার পছন্দের। তার কথায়, ‘‘বড় হয়েছি এই পরিবেশে। তাই শিক্ষাকতাকেই কেরিয়ার হিসেবে বেছে নিতে চাই।’’ পড়াশোনা ছাড়াও ছবি আঁকা ও রবীন্দ্রসঙ্গীতের শখ রয়েছে প্রাচীর। তার মা বলেন, ‘‘আমরা চাই, পরেও যেন এ ভাবেই ভাল ফল করে মেয়ে।’’ মানকর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া কুণ্ডু বলেন, ‘‘বরাবরই ভাল ছাত্রী ছিল প্রাচী। ভবিষ্যতে আরও ভাল করবে, এটাই আশা করি।’’

আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের শঙ্খ ৬৭৪ পেয়ে দশম হয়েছে। অভিনন্দন-শুভেচ্ছার তোড়ে এ দিন সালানপুর থেকে স্কুলে এসে পৌঁছতে খানিকটা বেশি সময় লেগেছে তার। তবে সহপাঠীরা তার জন্য অপেক্ষা করছিল। স্কুলে পৌঁছতেই তাকে ঘিরে উল্লাস শুরু হয়ে যায়। সাফল্যের কৃতিত্ব মিশনের সকলকেই দিয়েছে শঙ্খ। তার মা, পেশায় আইসিডিএস কর্মী তপতীদেবী অন্য দিনেক মতোই সকাল-সকাল কাজে বেরিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। শঙ্খর বাবা রঘুনাথবাবু জানান, এর পরে কী নিয়ে পড়াশোনা করবে তা ছেলেই ঠিক করবে। শঙ্খ জানায়, আইআইটিতে পড়ার সুযোগ পেতে প্রস্তুতি শুরু করতে চায় এখন থেকে।

প্রতিবেশী তাপস দাস খবর দেওয়ার পরে খুশিতে ভেসে গেলেও একটা কাঁটা খচখচ করছেই ষষ্ঠ স্থান পাওয়া রোহিতের বাবার। এক চিকিৎসকের চেম্বারের কর্মী অসীমবাবু বলছেন, ‘‘ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখলেও সাধ্য তেমন নেই। কী ভাবে উচ্চশিক্ষার খরচ জোগাব, সেটাই এখন চিন্তার!’’

Madhyamik Rohit barsha das asansol student Madhyamik 2015
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy