Advertisement
E-Paper

ছ’শো নার্স কম, খুঁড়িয়ে চলছে মেডিক্যাল

দিনে প্রায় আঠেরোশো রোগীর যাতায়াত চলে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগও নিত্য নৈমিত্তিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৫৯
হাসপাতালের সামনে রোগীর পরিজনেদের ভিড়।—নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালের সামনে রোগীর পরিজনেদের ভিড়।—নিজস্ব চিত্র।

দিনে প্রায় আঠেরোশো রোগীর যাতায়াত চলে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগও নিত্য নৈমিত্তিক। অথচ পরিষেবা দেবেন যাঁরা সেই নার্স, কর্মীদের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কার্যত অর্ধেক এ হাসপাতালে। দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলার ভরসা এই হাসপাতালে অনুমোদিত সংখ্যার অর্ধেক নার্স রয়েছেন। অন্য কর্মীও অপ্রতুল। ফলে কার্যত খুঁড়িয়েই চলছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

বর্ধমান তো বটেই, আশেপাশের বেশ কিছু জেলা এমনকী, ঝাড়খণ্ডের একাংশ থেকেও রোগী আসেন এ হাসপাতালে। হাসপাতালের কর্মীদের দাবি, অপর্যাপ্ত লোকসংখ্যা নিয়ে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম দশা তাঁদের। ভিড়ের চাপে ঘটে অনভিপ্রেত ঘটনাও। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও লোক না বাড়লে একশো শতাংশ পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয় বলে তাঁদের দাবি।

কিছুদিন আগেই সিক নিও নেটাল কেয়ার ইউনিটে শিশু বদলের ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, একটি খোপে এক শিশুর থাকার কথা হলেও তিন-চার জন শিশু থাকে। অনেক সময়েই, এক শিশুর হাত থেকে নম্বর লাগানো ব্যান্ড খুলে যায়। ‘চাপে’র মুখে কোন শিশুর ব্যান্ড খুলেছে না দেখেই এক শিশুর হাতের নম্বর অন্য শিশুর হাতে লাগিয়ে দেন নার্সরা। ফলে, শিশু বদলের মতো গুরুতর ঘটনা ঘটে। এরপরেও ওই নার্সদের শাস্তি তো দূর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের বাঁচাতে চাইছে বলে অভিযোগ ওঠে। তদন্তে রিপোর্টেও বলা হয়, অত্যাধিক রোগীর চাপ থাকায় নার্সরা ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ করে ফেলেছেন। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, রোগীর সামলাতে প্রয়োজনীয় নার্স নিয়োগ হচ্ছে না কী?

হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত দু’তিন বছরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একের পর এক নতুন বিভাগ গড়ে উঠেছে। শিশুদের জন্যেই রয়েছে, এনআইসিইউ, পিআইসিইউ-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। এ ছাড়াও আইসিইউ, সিসিইউ রয়েছে হাসপাতালে। কিন্তু বিভাগ বাড়লেও মেডিক্যাল কাউন্সিলের নিয়ম মেনে নার্সের সংখ্যা সে ভাবে বাড়েনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, বারবার নার্সস কর্মী চেয়ে, পরিকাঠামো উন্নয়নের আবেদন জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনে। কিন্তু ফল মেলেনি। রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য সুশান্ত প্রামাণিকের দাবি, “এই হাসপাতালে চিকিৎসক সংখ্যা মোটামুটি ঠিক আছে। স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ার সুযোগ থাকায় জুনিয়র ডাক্তারদেরও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু রোগীর চিকিৎসা করতে হলে নার্স ও গ্রুপ ডি কর্মীদের যথেষ্ট প্রয়োজন। সেখানেই অভাব থেকে গিয়েছে।”

জানা যায়, এই হাসপাতালে অনুমোদিত শয্যা সংখ্যা বারশো। যার মধ্যে ‘স্পেশ্যাল’ শয্যা ১২৫টি। সবমিলিয়ে প্রতিদিন আঠেরোশো-র বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। তাঁদের দেখভালের জন্য হাজারের উপর নার্স প্রয়োজন। আবার বিভিন্ন ওয়ার্ডের সঙ্গে সামাল দিতে হয় অপারেশন থিয়েটারও। কিন্তু সব কাজের জন্য রয়েছেন মাত্র ৪৩৮ জন নার্স। ফলে, রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে হিমশিম দশা খেতে হচ্ছে তাঁদের। প্রবীণ এক নার্সের কথায়, “রাধারানি ওয়ার্ডে এক একটি ব্লকে গড়ে ১০০ জন ভর্তি থাকেন। সেখানে আমরা রয়েছি সাকুল্যে দু’জন। সবসময় সমস্যা লেগেই থাকে।’’

নার্সের পাশাপাশি সঙ্কট রয়েছে কর্মী সংখ্যাতেও। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরই অভাব রয়েছে চারশোর কাছাকাছি। ফলে ‘ওয়ার্ড অ্যাটেন্ডার’দেখা যায় না। রোগীদের স্ট্রেচারে নিয়ে যাওয়ার লোকের অভাবও প্রকট। এ ছাড়াও সমাজকল্যাণ দফতরে ১৩ জনের মধ্যে এক জনও নেই। এক্স-রে ঘরে ২৩ জন ও ইসিজির ঘরে ৫ জন কর্মীর প্রয়োজন। ১১ জন স্টোর কিপারের পদও ফাঁকা। ১৫ জনের মধ্যে ৯ জন ওয়ার্ড মাস্টারও নেই।

হাসপাতাল সুপার উৎপল দাঁয়ের যদিও দাবি, ‘‘কর্মী বা নার্স কম থাকলেও রোগীদের সেবায় তার কোনও প্রভাব পড়তে দেব না।” স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাস, ‘‘দ্রুত নার্স ও কর্মীদের ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করা হবে।’’

burdwan medical
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy