আতঙ্ক: বারাবনির সেই স্কুল। নিজস্ব চিত্র
মেঝেতে পুরু কয়লার গুঁড়োর আস্তরণ। বাতাসে উড়ছে কালো ধুলো। পোশাক ও বইখাতায় কালো ছোপ। রেললাইনের পাশের স্কুলে ঢুকলেই চোখে পড়ে এই দৃশ্য। দেওয়াল ঘেঁষে ট্রেনের যাতায়াত। ট্রেন গেলেই দুলে ওঠে ক্লাসরুম। আতঙ্কে ভোগেন বারাবনির কাঁঠালতলা প্রাথমিক স্কুলের খুদে পড়ুয়ারা। অভিযোগ, স্কুলের এমন সমস্যার কথা জানা সত্ত্বেও সমাধানের ব্যবস্থা করেনি প্রশাসন।
বারাবনির দোমহানি রোড ও স্টেশন লাগোয়া এলাকায় রয়েছে স্কুলটি। পড়ুয়ার সংখ্যা ১০৬। সম্প্রতি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, দু’টি আলাদা ঘরে পড়াশোনা চলছে। শিক্ষিকারা ক্লাস নিচ্ছেন। কিন্তু দূষণে নাজেহাল কচিকাঁচারা। স্কুলের গায়ে গড়ে উঠেছে রেল ইয়ার্ড। এক বেসরকারি কয়লা উত্তোলক সংস্থা সেই ইয়ার্ড থেকে মালগাড়িতে কয়লা বোঝাই করে পরিবহণ করে। সারা দিন সেই কাজ চলায় কয়লার গুঁড়োয় ভরে যায় এলাকা। ভুক্তভোগী হয় স্কুলের পড়ুয়ারা।
শিক্ষিকারা জানান, মিড-ডে মিলের খাবারেও কয়লার গুঁড়ো মিশে যায়। মুখে তুলতে মুশকিলে পড়ে খুদেরা। স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা মহুয়া ঘোষ বলেন, ‘‘সমস্যার কথা সবাইকেই জানিয়েছি। কিন্তু এই ভাবেই চলছে আমাদের স্কুল।’’ চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া বিবেক ভুঁইয়া, জান্নাতি খাতুনেরা জানায়, কয়লার গুঁড়ো ঢুকে প্রতিদিনই তাদের চোখ জ্বালা করে। অভিভাবকদের দাবি, পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসন, সকলকেই বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এলাকাবাসীর দাবি মেনে বছর সাতেক আগে কাঁঠালতলা মোড়ের অদূরে একটি স্কুল ভবন তৈরি করা হয়েছিল। দিন কয়েক সেখানে পঠনপাঠনও হয়। কিন্তু ভবনটির দেওয়াল ও ছাদে বিপজ্জনক ফাটল ধরে যায়। বাসিন্দারা জানান, এই অঞ্চলটি ধসপ্রবণ, মাটির তলার অংশ ফাঁপা। তাই ভবনটি ক্রমশ বসে গিয়ে ফাটল ধরে। বারাবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বুধন বাউড়ি জানান, বিপদের আশঙ্কায় অভিভাবকেরা সন্তানদের ওই ভবনে পাঠাতে রাজি হচ্ছিলেন না। তাই স্কুলটিকে ফের রেললাইনের পাশের ভবনে ফিরিয়ে আনা হয়। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তিত। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
পুরনো ভবনে দূষণ, নতুন ভবন তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা— কার্যত শাঁখের করাতের অবস্থা স্কুলটির। তা সত্ত্বেও শিক্ষা সংসদ কোনও পদক্ষেপ করছে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। সংশ্লিষ্ট শিক্ষাচক্রের স্কুল পরিদর্শক ভরত ঘোষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে বারাবনির বিডিও অনিমেষ মান্নার আশ্বাস, ‘‘দূষণ রুখতে পুরনো স্কুলটির পাশে বড় পাঁচিল তোলার ব্যবস্থা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy